দেশকে ভালো না বাসলে ছবি আঁকা যায় না
বিডি.টুনসম্যাগ.কম গ্যালারি কায়ার আমন্ত্রণে একটি আর্ট ক্যাম্পে গিয়েছিলেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। এটিই ছিল তাঁর প্রথম ভুটান সফর। ভুটানের ...
https://bd.toonsmag.com/2015/01/0534.html
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
গ্যালারি কায়ার আমন্ত্রণে একটি আর্ট ক্যাম্পে গিয়েছিলেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। এটিই ছিল তাঁর প্রথম ভুটান সফর। ভুটানের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। আর্ট ক্যাম্পের এক ফাঁকে ২০১১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল।
সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে নিজেকে কি সার্থক মনে করেন?
আমি তো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি, ছবি আঁকতে আর্ট কলেজে গিয়েছিলাম, এটা একটা বিরাট অভিজ্ঞতা। ছবিকে ভালোবাসতে গিয়ে দেখি যে, দেশকে ভালো না বাসলে ছবি আঁকা যায় না। এই শিক্ষাটা আমাকে দিয়েছিলেন জয়নুল আবেদিন। ছয় ঋতুর দেশ, সেই ছয় ঋতুকে যদি উপলব্ধি করতে না পারি, তাহলে তো জীবনের আর অন্য কিছু উপলব্ধি করতে পারব না। আমরা শিল্পী হিসেবে যা কিছু দেখেছি, সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে গিয়ে যা কিছু দেখেছি, তাতে আজ উপলব্ধি করি, বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, তার সবকিছুই সংস্কৃতির মাধ্যমেই হয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। প্রথমে সংস্কৃতিকর্মীরা মাঠে নামে, তারপর রাজনীতিবিদেরা এগিয়ে আসেন। এটার কারণ হচ্ছে, সংস্কৃতিকর্মীরা দেশটাকে ভালোবাসে।
যার জন্য এই আগ্রহ, উৎকণ্ঠাটা তাঁর মধ্যে সব সময় জাগ্রত হয়। এখনো তো দেশে যা কিছু ঘটছে, সংস্কৃতিকর্মীরাই তো দেশের জন্য ভালো কাজ করে যাচ্ছে এবং রাজনীতিবিদদের সঠিক পথে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটা কতটা সফল হচ্ছে জানি না, কারণ এখন দৈনিক কাগজ, মিডিয়া—সবই তো দুর্বৃত্তদের হাতে। সংস্কৃতিকর্মীদের জায়গা তো মিডিয়ায়ই। কিন্তু নাটকে, চলচ্চিত্রে, চিত্রকলায়, সংগীতে যে অবদান বাংলাদেশের—এটা আমাকে যথেষ্ট আনন্দ দিচ্ছে এবং আমি মনে করি যে এরা সঠিক পথেই কাজ করছে।
যে বয়সে আঁকাআঁকিতে এলেন, তখন কি এটাকে ভালো চোখে দেখা হতো? মা-বাবা রাজি ছিলেন?
ছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, তোমার যা ইচ্ছে। জীবনটা তোমার, তুমি যা কিছু করতে চাও, করো। হয়তো আত্মীয়স্বজন বলেছে, ছবি আঁকতে গেলে তো না খেয়ে মারা যাবে। সেটাও একটা চিন্তা ছিল, কিন্তু আমরা তো না খেয়ে মরিনি।
অনেক কাল ধরে প্রচ্ছদ করছেন। বইয়ের প্রচ্ছদও যে শিল্প, সে ধারণা কি আগে থেকেই ছিল, না আপনারা এটা পাল্টে দিলেন?
আমাদের এদিকে তো সেভাবে প্রকাশনা সংস্থা ছিল না। পাঠ্যবই কিছু প্রকাশ হচ্ছিল। সেই পাঠ্যবইয়ের কাজ কিন্তু এখানে এসে প্রথমে করতেন কামরুল ভাই (কামরুল হাসান) এবং জয়নুল আবেদিন। কাজী আবুল কাশেম করেছেন। তাঁদের পরেই আমরা এসেছি। আমরা যখন এসেছি, তখন প্রকাশনা জগৎটা আস্তে আস্তে বিকশিত হচ্ছে। আস্তে আস্তে ভালো বই প্রকাশের দিকে সবাই নজর দিচ্ছে। আমি তো তোমার বাবার (সিরাজুদ্দীন হোসেন) কথাও বলি। ফ্র্যাংকলিন পাবলিকেশনস—আমেরিকার এই পাবলিকেশনস তখন এ দেশে এসে প্রকাশনাব্যবস্থা বিকাশের চেষ্টা করছে, আমাদের এখানে তো কাগজও তেমন পাওয়া যেত না, সেই কাগজ আনল তারা। আমাকে এই জায়গায় নিয়ে আসার পেছনে তোমার বাবা, সিকান্দার আবু জাফর, শওকত ওসমানের অবদান আছে। আমরা যে এই পর্যায়ে এসেছি, সেটা তাঁদেরই কারণে।
আমি ১৯৫০ সাল থেকে বইয়ের কভার করি, এখন ২০১১ সাল। এখনো বইয়ের চাপ আমার ওপরে। আন্তরিকতা না থাকলে আমি এটা করতে পারতাম না। অনেকেই তো হারিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো তো আমি আছি। যেমন ধরো, প্রথমা—প্রথম আলোর যে পাবলিকেশনস, আমাকে ছাড়া কিছু করবে না।
এই যে আমার ওপরে একটা আস্থা, এই আস্থাটা তো অর্জন করতে হয়েছে নিজেকেই। নিজের হাত দিয়েই৷ তার পেছনে যাঁরা ছিলেন, আমি তাঁদের কথা স্মরণ করি।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: জাহীদ রেজা নূর
প্রথম আলোয় প্রকাশিত
গ্যালারি কায়ার আমন্ত্রণে একটি আর্ট ক্যাম্পে গিয়েছিলেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। এটিই ছিল তাঁর প্রথম ভুটান সফর। ভুটানের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। আর্ট ক্যাম্পের এক ফাঁকে ২০১১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল।
সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে নিজেকে কি সার্থক মনে করেন?
আমি তো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি, ছবি আঁকতে আর্ট কলেজে গিয়েছিলাম, এটা একটা বিরাট অভিজ্ঞতা। ছবিকে ভালোবাসতে গিয়ে দেখি যে, দেশকে ভালো না বাসলে ছবি আঁকা যায় না। এই শিক্ষাটা আমাকে দিয়েছিলেন জয়নুল আবেদিন। ছয় ঋতুর দেশ, সেই ছয় ঋতুকে যদি উপলব্ধি করতে না পারি, তাহলে তো জীবনের আর অন্য কিছু উপলব্ধি করতে পারব না। আমরা শিল্পী হিসেবে যা কিছু দেখেছি, সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে গিয়ে যা কিছু দেখেছি, তাতে আজ উপলব্ধি করি, বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, তার সবকিছুই সংস্কৃতির মাধ্যমেই হয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। প্রথমে সংস্কৃতিকর্মীরা মাঠে নামে, তারপর রাজনীতিবিদেরা এগিয়ে আসেন। এটার কারণ হচ্ছে, সংস্কৃতিকর্মীরা দেশটাকে ভালোবাসে।
যার জন্য এই আগ্রহ, উৎকণ্ঠাটা তাঁর মধ্যে সব সময় জাগ্রত হয়। এখনো তো দেশে যা কিছু ঘটছে, সংস্কৃতিকর্মীরাই তো দেশের জন্য ভালো কাজ করে যাচ্ছে এবং রাজনীতিবিদদের সঠিক পথে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটা কতটা সফল হচ্ছে জানি না, কারণ এখন দৈনিক কাগজ, মিডিয়া—সবই তো দুর্বৃত্তদের হাতে। সংস্কৃতিকর্মীদের জায়গা তো মিডিয়ায়ই। কিন্তু নাটকে, চলচ্চিত্রে, চিত্রকলায়, সংগীতে যে অবদান বাংলাদেশের—এটা আমাকে যথেষ্ট আনন্দ দিচ্ছে এবং আমি মনে করি যে এরা সঠিক পথেই কাজ করছে।
যে বয়সে আঁকাআঁকিতে এলেন, তখন কি এটাকে ভালো চোখে দেখা হতো? মা-বাবা রাজি ছিলেন?
ছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, তোমার যা ইচ্ছে। জীবনটা তোমার, তুমি যা কিছু করতে চাও, করো। হয়তো আত্মীয়স্বজন বলেছে, ছবি আঁকতে গেলে তো না খেয়ে মারা যাবে। সেটাও একটা চিন্তা ছিল, কিন্তু আমরা তো না খেয়ে মরিনি।
অনেক কাল ধরে প্রচ্ছদ করছেন। বইয়ের প্রচ্ছদও যে শিল্প, সে ধারণা কি আগে থেকেই ছিল, না আপনারা এটা পাল্টে দিলেন?
আমাদের এদিকে তো সেভাবে প্রকাশনা সংস্থা ছিল না। পাঠ্যবই কিছু প্রকাশ হচ্ছিল। সেই পাঠ্যবইয়ের কাজ কিন্তু এখানে এসে প্রথমে করতেন কামরুল ভাই (কামরুল হাসান) এবং জয়নুল আবেদিন। কাজী আবুল কাশেম করেছেন। তাঁদের পরেই আমরা এসেছি। আমরা যখন এসেছি, তখন প্রকাশনা জগৎটা আস্তে আস্তে বিকশিত হচ্ছে। আস্তে আস্তে ভালো বই প্রকাশের দিকে সবাই নজর দিচ্ছে। আমি তো তোমার বাবার (সিরাজুদ্দীন হোসেন) কথাও বলি। ফ্র্যাংকলিন পাবলিকেশনস—আমেরিকার এই পাবলিকেশনস তখন এ দেশে এসে প্রকাশনাব্যবস্থা বিকাশের চেষ্টা করছে, আমাদের এখানে তো কাগজও তেমন পাওয়া যেত না, সেই কাগজ আনল তারা। আমাকে এই জায়গায় নিয়ে আসার পেছনে তোমার বাবা, সিকান্দার আবু জাফর, শওকত ওসমানের অবদান আছে। আমরা যে এই পর্যায়ে এসেছি, সেটা তাঁদেরই কারণে।
আমি ১৯৫০ সাল থেকে বইয়ের কভার করি, এখন ২০১১ সাল। এখনো বইয়ের চাপ আমার ওপরে। আন্তরিকতা না থাকলে আমি এটা করতে পারতাম না। অনেকেই তো হারিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো তো আমি আছি। যেমন ধরো, প্রথমা—প্রথম আলোর যে পাবলিকেশনস, আমাকে ছাড়া কিছু করবে না।
এই যে আমার ওপরে একটা আস্থা, এই আস্থাটা তো অর্জন করতে হয়েছে নিজেকেই। নিজের হাত দিয়েই৷ তার পেছনে যাঁরা ছিলেন, আমি তাঁদের কথা স্মরণ করি।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: জাহীদ রেজা নূর
প্রথম আলোয় প্রকাশিত