বিশ্বসেরা ১০ কার্টুনিস্ট

শিল্পী রফিকুননবী সাধারণ মানুষের কাছে যতটা না তার ফাইন আর্টসের জন্য পরিচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় তার ‘টোকাই’ কার্টুন চরিত্রের জন্য। এ কার্টুনিস্টের মতো অনেক দামি শিল্পী আছেন যারা কার্টুনের মাধ্যমে সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছেন।

শিল্পী রফিকুননবী সাধারণ মানুষের কাছে যতটা না তার ফাইন আর্টসের জন্য পরিচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় তার ‘টোকাই’ কার্টুন চরিত্রের জন্য। এ কার্টুনিস্টের মতো অনেক দামি শিল্পী আছেন যারা কার্টুনের মাধ্যমে সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছেন।

তবে শুধু ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে সারা বিশ্বকে আলোড়িত করেছেন এমন কার্টুনিস্টের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।  মিকি মাউসের কথা জানলেও তার স্রষ্টা ওয়াল্ট ডিজনিকে অনেকেই চেনেন না।

ব্রিটেনের  মেইল অনলাইনের একটি  রচনা আর উইকিপিডিয়ার তথ্য অবলম্বনে এ লেখায় আমরা পরিচয় করিয়ে দেব বিশ্বসেরা দশ কার্টুনিস্টকে।

১. রোনাল্ড শার্লে

জীবিত কার্টুনিস্টদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে সেরা। শার্লে বেশি পরিচিত ‘এসটি ট্রিনিয়ানস’র স্রষ্টা হিসেবে। একই নামে তার একাধিক বই ও সাতটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রয়েছে। ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ শহরে ১৯২০ সালের ৩ মার্চ জন্ম নেওয়া এ শিল্পী ৫ বছর বয়স থেকে আঁকা শুরু করেন। স্কুল ছাড়েন ১৫ বছরে। বিখ্যাত ‘লিলিপুট’ ম্যাগাজিনে ১৯৪২ সালে ‘এসটি ট্রিনিয়ানস’ কার্টুনটি প্রথম ছাপা হয়। তিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় আমেরিকায়। তিনি সেখানকার ‘ন্যাশনাল কার্টুনিস্ট সোসাইটি’র পুরস্কারসহ বহু পদক পেয়েছেন। এছাড়া সিঙ্গাপুর, মালয়, জাপানসহ সারা বিশ্বেই তিনি পরিচিত।
২০০৫ সালে বিবিসি তার জীবন এবং কাজ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছ। ৯০ বছর বয়সী এ শিল্পী এখনো নিয়মিত আঁকছেন। ২০১০ সালে তিনি জার্মানির ‘ভিলহেম বুশ মিউজিয়াম হানোভার’ জাদুঘরকে তার ২২০০টি কাজ প্রদান করেছেন।

২. সউল স্টেইনবার্গ

রোমানিয়ায় ১৯১৪ সালের ১৫ জুন জন্ম নেওয়া আমেরিকান এ কার্টুনিস্ট চিত্রশিল্পের জনপ্রিয় ও ফাইন আর্টস দু শাখাতেই কাজ করেছেন। তিনি সর্বাধিক পরিচিত তার ‘দি নিউ ইয়র্কার’ কাজের জন্য।
ইউনিভার্সিটি অব বুখারেস্ট এক বছর দর্শনশাস্ত্রে পড়ালেখা করলেও ১৯৪০ সালে তিনি আর্কিটেকচারে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। মিলানে থাকার সময়ে ব্যাঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন ‘বার্টোল্ড’র সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।
 ‘দি নিউ ইয়র্কার’ ম্যাগাজিনের জন্য তিনি এ পর্যন্ত তিনি ৯০টি প্রচ্ছদ ও ১২০০-র মতো ছবি এঁকেছেন। ‘ভিউ অব দি ওয়ার্ল্ড ফ্রম নাইনথ এভিনিউ’ তার অন্যতম একটি জনপ্রিয় প্রচ্ছদ। তিনি মারা যান ১৯৯৯ সালে ১২ মে।

৩. ওয়াল্ট ডিজনি

যদিও ডিজনি চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে পরিচিত,  তবু তিনি এ সময়ের কার্টুনিস্টদের ওপর অনেক নামি শিল্পীদের থেকেও বেশি প্রভাব বিস্তার করছেন। কারিগরি জ্ঞানে তিনি সেরা কার্টুনিস্ট নন কিন্তু তিনি এটি  জানেন কোন চরিত্রটি মানুষের কাজে আসবে। তাই তিনি চিন্তা করেন বিভিন্ন চরিত্র নির্মাণের। তার চিন্তাকে  বাস্তবে দেখার  জন্য আনেন কার্টুনিস্ট ভাড়া করে। বিশ শতকে ‘মিকি মাউস’র মতো  অনেক জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র তার দল নির্মাণ করেছে।

আমেরিকায় ১৯০১ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মারা যান ১৯৬৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর।

৪. জর্জ গ্রজ

এ মেধাবী জার্মান শিল্পীকে তার নিষ্ঠুর কার্টুন স্ক্রিপ্ট এবং নির্মম নাৎসিবিরোধী কার্টুনের জন্য সবাই চেনেন। তার কাজের জন্য জার্মান সেনারা ২০ বছর বয়সেই  তাকে অভিযুক্ত করে এবং তার অনেক কাজ ধ্বংস করে। যদিও  তিনি কোনো সময়ই সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। তবে তিনি মানুষকে প্রতিবাদী করেছেন তার কার্টুনের মাধ্যমে। এ শিল্পী ১৮৯৩ সালে ২৬ জুলাই জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং মারা যান ১৯৫৯ সালে ৬ জুলাই। ‘এট ডাস্ক’ তার অন্যতম কাজ। তার সবচেয়ে ভালো কাজগুলো তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ই করেছিলেন।

৫. ম্যাক্স বিয়ারবম

লন্ডনে জন্ম নেওয়া বিয়ারবম একজন প্রাবন্ধিক ও ব্যঙ্গচিত্রকর। বিচিত্র ধরনের মানুষের মুখ আঁকায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ভিক্টোরিয়ান ও অ্যাডওয়ার্ডিন রাজনীতিকে ব্যঙ্গ করে আঁকা ও লেখা তার কাজগুলো বিশাল আকারে ছাপা হতো ‘দি স্ট্যান্ড’-এর মতো নামি ম্যাগাজিনে। তিনি ১৮৭২ সালের ২৪ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৬ সালের ২০ মে ইতালিতে মারা যান।

৬. অনর দুমিয়ে

ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া অনর দুমিয়ে একাধারে পেইন্টার, ভাস্কর, ব্যঙ্গচিত্রকর এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যঙ্গ লেখক হিসেবে জনপ্রিয়। তার আঁকায় বিষাদের প্রতিফলন ফুটে ওঠে, তবে দেখতে খুব সাধারণ মনে হয়। তিনি বিশেষভাবে বিখ্যাত ছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ব্যঙ্গচিত্র আঁকার জন্য। তিনি ছবির মাধ্যমে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতেন মানুষের দুর্বলতা এবং ব্যর্থতা। তিনি আত্মদম্ভীদের দুর্বলতা দিয়ে ব্যঙ্গ করতে পছন্দ করতেন। তিনি তার পেইন্টিংয়ের মাধ্যমেও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে হাস্যাস্পদ করেছেন। তিনি কিং লুই ফিলিপকে নাশপাতি গাছের মতো করে আঁকার জন্যও বিখ্যাত। দুমিয়ে ১৮০৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন এবং মারা যান ১৮৭৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি।

৭. পাবলো পিকাসো

পিকাসো সারা বিশ্বে চিত্রশিল্পী হিসেবেই সম্মানিত। যদিও তার অনেক কাজে কার্টুনের উপাদান পাওয়া যায়, উদাহরণ হিসেবে ১৯০১ সালে তার  আঁকা ‘সেলফ পোর্ট্রেট ইন এ টপ হ্যাট’-এর কথা বলা যায়;  কিন্তু তিনি সুস্পষ্ট কার্টুনিস্ট না। তিনি সবসময় নিজের ছবিকে একইভাবে উপস্থাপন করতে চাননি।

সমালোচকরা মনে করেন, পিকাসো যখন একই ধারার কাজে বিরক্ত হয়ে যেতেন তখন তিনি অতিরঞ্জিত যা দেখতেন তা ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে সত্যিকারভাবে প্রকাশ করতেন। অন্যান্য নামি কার্টুনিস্টদের চিত্রে যা পাওয়া যায় না এ শিল্পীর অনেক ছবিতে তাও পাওয়া যায়। তাই তিনি এ তালিকায় আছেন। জগদ্বিখ্যাত এ শিল্পী ১৮৮১ সালের ২৫ অক্টোবর স্পেনে জন্মগ্রহণ করেন এবং মারা যার ১৯৭৩ সালের ৮ এপ্রিল।


৮. উইলিয়াম হোগার্থ

ভাস্কর্যে তার আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনি সেই মহান শিল্পী যিনি ব্রিটিশ সমাজকে ব্যঙ্গচিত্র এবং পেইন্টিংয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তখন দুঃসাহসিকভাবে ব্রিটিশ রাজপরিবার ও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সমালোচনা করেছেন তার কাজের মাধ্যমে। তার নানা চিত্রে ব্যঙ্গভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মানুষের অহেতুক দম্ভ । এ শিল্পী সম্ভবত সবচে বেশি পরিচিত ১৭৩৫ সালে আঁকা ‘এ রাকি’স  প্রোগ্রেজ’ এর জন্য। এ সময়ে যারা কার্টুন সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন বা আঁকেন তাদের অনেকেই তাদের অজান্তে  হোগার্থ দ্বারা প্রভাবিত। এ শিল্পী ১৬৯৭ সালের ১০ নভেম্বর ব্রিটেনে জন্মগ্রহণ করেন এবং মারা যান ১৭৬৪ সালের ১৭ অক্টোবর।

৯. আদ্রেঁ ফ্রাঁসোয়া

আদ্রেঁ ১৯১৫ সালের ৯ নভেম্বর হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেন। একাডেমি অব ফাইন আর্টসে পড়ালেখা করেন বুদাপেস্টে। প্যারিসে আসেন ১৯৩৪ সালে। তিনি ‘পাঞ্চ’সহ বিভিন্ন ব্যঙ্গ ম্যাগাজিনের সাথে কাজ করেছেন। এঁকেছেন ‘পাঞ্চ’ ম্যাগাজিনের অনেক প্রচ্ছদ। তিনি আঁকতেন খুব সরল পদ্ধতিতে আর এটিই তাকে স্বতন্ত্র করেছে। সে সময়ের অনেক শিল্পী তার আঁকায় অসমাপ্ততা খুঁজে পেতেন; কিন্তু তার এ ব্যতিক্রমী পদ্ধতির কাজই তাকে বিখ্যাত শিল্পীতে রূপান্তর করেছে। তিনি মারা যান ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল।

১০. আল হার্শফেল্ড

হলিউডের সোনালি সময়ের তারকাদের ব্যঙ্গ পোর্ট্রেটের জন্য বিখ্যাত মেধাবী কার্টুনিস্ট হার্শফেল্ড। তিনি রিটা হেওয়ার্থ থেকে শুরু করে ফ্রেড অ্যাস্টেয়ার ও বারবারা স্ট্রেইস্যান্ড সবার পোর্ট্রেট এঁকেছেন সাদা কালো রঙে। মেধাবী এ শিল্পী মাত্র কয়েকটি আঁচড়েই তুলে আনতেন তারকাদের ব্যঙ্গ রূপ। ১৯০৩ সালের ২১ জুন আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি ৯৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

এই বিভাগে আরো আছে

প্রবন্ধ 4583532248813112156

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সঙ্গে থাকুন

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক

বৈশিষ্ট্যযুক্ত

বিশ্বসেরা ১০ কার্টুনিস্ট

শিল্পী রফিকুননবী সাধারণ মানুষের কাছে যতটা না তার ফাইন আর্টসের জন্য পরিচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় তার ‘টোকাই’ কার্টুন চরিত্রের জন্য। এ ...

-

  • ফেসবুকে অনুসরণ করুন

    আঁকা-আঁকি আহ্ববান

    আপনার আঁকা, মজার মজার লেখা, ছবি আঁকার কলা-কৌশল, শিল্পীর জীবনী, প্রবন্ধ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অথবা প্রদর্শনীর সংবাদ টুনস ম্যাগে ছাপাতে চাইলে পাঠিয়ে দিন। আমাদের ইমেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়।

    সহায়তা করুন

    item