মীনা: সামাজিক মূল্যবোধ পরিবর্তনকারী এক যুগান্তকারী চরিত্র
https://bd.toonsmag.com/2019/07/meena.html
কখনও ভেবে দেখেছেন কি, কেমন হবে যদি আপনার ছোট ভাইকে স্কুলে যেতে এবং পড়াশোনায় মনোযোগি হতে উৎসাহিত করা হয়, আর মেয়ে বলে আপনাকে জোর করে বাড়িতেই বসিয়ে রেখে ঘরের কাজে সাহায্য করার জন্য বাধ্য করা হয়? আবার ভেবে দেখুন, যদি একই বাড়িতে আপনার সেই ছোট ভাইকে আপনার চেয়ে বেশি পরিমাণ খাবার খেতে দেওয়া হয়, শুধুমাত্র সে ছেলে বলে, তাহলে কেমন লাগবে? অসম্ভব আর অন্যায় মনে হচ্ছে, তাই না? আসলেও ব্যাপারটা অন্যায়ই ছিল; কিন্তু তারপরেও এটাই ছিল বাস্তবতা, আর তা খুব বেশিদিন আগের কথাও না।
৯০ এর দশক ছিল এমন একটা সময় যখন গোটা পৃথিবীর সামাজিক নিয়মনীতি পরবর্তী শতাব্দীর উপযোগি হয়ে গড়ে ওঠার জন্য বিস্তর পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে পার হয়েছিল; আবার একই সাথে এই দশকেও হাজার বছরের পুরনো, গোঁড়া ও লজ্জাকর বেশ কিছু সামাজিক রীতিনীতি প্রচলিত ছিল যা মূলত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন গ্রামের মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল, যদিও শহরের মেয়েরাও অনেক ক্ষেত্রেই সেসকল গোঁড়া রীতিনীতির শিকার হয়। কিন্তু ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি অ্যানিম্যাটেড কার্টুন চরিত্রের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীর পরিচয় ঘটল ‘মীনা’ নামের একটি সাধারণ, কিন্তু আর দশটা মেয়ের চেয়ে অনেক ভিন্ন, এমনকি তৎকালীন প্রেক্ষাপটে বেশ খানিকটা বৈপ্লবিক মতবাদের অধিকারী মেয়ের সাথে। দীর্ঘদিনের গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ের কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য থেকে ইউনিসেফ বাংলাদেশ এই চরিত্রটির তথা এই ধারাবাহিকটির মূল কাহিনী, বিভিন্ন চরিত্র, ভূমিকা ও গল্প তৈরি করে। মোস্তফা মনোয়ার, শিশির ভট্টাচার্য সহ শীর্ষ স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শিল্পী এই চরিত্রগুলি তৈরি করেন। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, নেপালি, পোশ্ত ও পর্তুগীজ ভাষায় এই অ্যানিম্যাটেড ধারাবাহিক কার্টুনটি প্রচারিত হয়। এই ধারাবাহিকটি অপ্রত্যাশিত সাফল্য লাভ করে এবং মূল চরিত্রটি রাতারাতি একটি সামাজিক আদর্শে পরিণত হয়। ইউনিসেফ এর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশের ৯৫% মানুষ মীনা’র সম্পর্কে অবগত। আর এটা হওয়াই স্বাভাবিক ছিল কারণ এটি বাংলাদেশ টেলিভিশন এ প্রচারিত হয় (উল্লেখ্য, সে সময়ে স্যাটেলাইট চ্যানেল এর প্রচলন ছিলনা)।
অনেক ছোট বয়স থেকেই এই অঞ্চলের মেয়েদের শেখানো হত যেন তারা কোনোরকম তর্ক বা বিরোধিতা না করে সমাজের সকল নিয়মকানুন মেনে চলে, তারা যেন কোনো বিষয়েই মতামত না দেয় এবং সমাজের পুরুষদের সকল আদেশ-নির্দেশ মেনে চলে। আর সমান অধিকার বিষয়ে কথা বলার বা কোনো প্রশ্ন তোলার কোনোরকম অধিকার তাদের কখনই ছিলনা। বহু শতাব্দী ধরে অনেক দেশেই মেয়েদের শিক্ষিত হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল, যদিও কয়েকজন সাহসী নারী সমাজের শেকল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছেন এবং উপমহাদেশের ইতিহাসে নিজেদের কৃতিত্বকে স্মরণীয় করে রেখে গেছেন। কিন্তু তারপরেও প্রাথমিক শিক্ষা ছেলেদের জন্য সাধারণ মানবিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হলেও, মেয়েদের জন্য তা হয়নি। ভাই রাজু ও পোষা টিয়া পাখি মিঠু’র সাথে মিলে, মীনা তার প্রথম আবির্ভাবেই, সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গীকে আমূল বদলে দেয়। প্রথম পর্বে দেখানো হয় যে ভাইয়ের সাথে স্কুলে যেতে না দেওয়ায় মীনা অত্যন্ত কষ্ট পায়। আর তারপরেই বুদ্ধি করে তার টিয়া পাখিকে পাঠ শিখে আসার জন্য স্কুলে যেতে বলে। মিঠুই মীনাকে ৩ এর নামতা শেখায়। নতুন শেখা নামতা বারবার আওড়াতে গিয়ে মীনা জানতে পারে যে তাদের বাড়িতে মোট ৬ টি মুরগী আছে। কিন্তু এক সময়ে সে লক্ষ করে যে একটি মুরগী নেই। তার বুদ্ধিমত্তার কারণে মুরগী হারানোর লোকসান থেকে তার পরিবার রক্ষা পায় এবং অনুধাবন করতে পারে যে একটি মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে শিক্ষিত করলে শুধু তার নিজেরই উপকার হয়না, বরং তার পুরো পরিবারই উপকৃত হতে পারে। আর এভাবেই ‘মীনা’ নামের এই অ্যানিম্যাটেড ধারাবাহিক কার্টুনটির যুগান্তকারী যাত্রার শুরু হয়। সময়ের সাথে সাথে মীনা, নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি সমান অধিকার, সকলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পয়:নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, খাবার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার গুরুত্ব, যৌতুক, পথেঘাটে যৌন হয়রানি ও অন্যান্যভাবে মেয়েদের উত্যক্ত করা, নারী ও পুরুষ উভয়কে নিয়ে পরিহাস ও বিড়ম্বনার সৃষ্টি করা, প্রাচীন আমলের ঘরোয়া পদ্ধতির চেয়ে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উপকারিতা সম্পর্কে সতর্কীকরণ, টিকাদান, শিশুদের খেলাধুলা করার অধিকার, সন্তান প্রসবের সঠিক উপায়, মায়ের বুকের দুধ পান করানোর গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করানো সহ সমাজের অনেক কুসংস্কার ও অন্ধ রীতিনীতির গণ্ডী ভেঙ্গে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটাতে সমর্থ হয়। এইচআইভি/এইডস্ ছোঁয়াচে বলে মানুষের যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে তা দূর করে এই রোগীদের প্রতি মানুষকে সহমর্মী হতে শেখানোও মীনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এক পর্যায়ে দেখানো হয় যে মীনা শহরে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এলে, তাকে ভুল করে ‘কাজের মেয়ে’ ভাবা হয়। এই পর্বে দেখানো মীনার অভিজ্ঞতা সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত এই ‘শিশুশ্রম’ এর সম্বন্ধে মানুষের ধারণা পাল্টাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ধারাবাহিকটির ৩৭তম ও শেষ পর্বে দেখানো হয় যে যুদ্ধের ফলে কাশ্মীরের জনগণ কী ধরনের করুন পরিস্থিতির শিকার হয় এবং শরণার্থী হিসেবে দিনযাপন করতে বাধ্য হয়। আর দীর্ঘদিন পরে বিচ্ছিন্ন পরিবারের সাথে আবারো মিলিত হতে পেরে তাদের কেমন লাগে তাও এই পর্বে দেখানো হয়।
৯০ এর দশকের সকল শিশুর কাছেই মীনা একটি আনন্দময় স্মৃতি হিসেবেই সমাদৃত। এমনকি বর্তমানের শিশুরাও এই ধারাবাহিকটি দেখে একই রকম আনন্দ পায়। বাচ্চাদের স্কুলে যেতে উৎসাহিত করা এবং পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য মীনা সবচেয়ে কার্যকরী শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে। বাচ্চাদের যে বিষয়টি শেখাতে বাবা-মা কয়েক মাস সময় নেন, মীনা মাত্র একটি পর্বেই তা সহজেই শেখাতে পারে। বাল্যকাল ছাড়িয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠা নব্বইয়ের সেই শিশুদের কাছে মীনা আজও একই রকম জনপ্রিয়। শুধু একটি কার্টুন চরিত্রই নয়, বরং যে সকল মেয়েরা নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে অসমর্থ ছিল তাদের জন্য সে একজন নেত্রীর ভূমিকা পালন করেছে। আর এই কারণেই মাত্র ৯ বছর বয়সের একটি ছোট্ট মেয়ে হয়েও সে সব বয়সী দর্শকদের কাছে সমানভাবে সমাদৃত হয়েছে (উল্লেখ্য, মীনা আজীবনই ৯ বছর বয়সীই ছিল, আছে এবং থাকবে)! দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এই যে মীনার শেখানো আদর্শ আজ পৃথিবীর বেশির ভাগ স্থানেই মেনে চলা হয়না। আজকের যুগে মেয়েরা হয়ত উচ্চ শিক্ষা ও পর্যাপ্ত খাবারের সুযোগ পাচ্ছে, কিন্তু এখনও এমন অনেক বিষয়ই রয়ে গেছে যেসব ক্ষেত্রে সমান অধিকারের বিষয়টি না মানাকেই সমাজের স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে মেনে নেওয়া হচ্ছে। যেমন পৃথিবীর অনেক স্থানেই পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে মেয়েরা কম বেতন পাচ্ছে। ঘর সামলানো আজও প্রাথমিকভাবে একজন মেয়ের দায়িত্বই হিসেবেই বিবেচিত। পরিবারের স্বার্থে একজন মেয়েকে তার ক্যারিয়ারের সাথে আপোষও করতে হচ্ছে, আর যদি সে তা না করে তাহলে বেশ নেতিবাচকভাবেই তাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে নেতিবাচক দিকটি এই যে কোনো মেয়ে যদি উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন করে যেমন ফাইটার পাইলট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় বা কোনো বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন করে, তাহলে সেই মেয়েটির কর্মজীবনের চেয়ে তার ব্যক্তিগত জীবনকেই বেশি করে প্রচার করা হয়ে থাকে; অথচ একজন পুরুষের বেলায় ব্যাপারটা পুরো উল্টে যায়। তবে, আরও দু:সংবাদ এই যে এই ঘটনার জন্য মেয়েরাও বেশ খানিকটা দায়ী। প্রচারের অল্প দিনের মধ্যেই মীনার খ্যাতি এতটাই বেড়ে যায় যে ধারাবাহিকটি টেলিভিশন ছাড়িয়ে কমিক বই এ রূপান্তরিত হয় এবং বিবিসি এর মাধ্যমে বেতারেও প্রচার করা হয়। তার এই খ্যাতি কে ইউনিসেফ পোস্টার, আলোচনা ও শিক্ষকদের নির্দেশিকার মত বিভিন্ন প্রচারণামূলক ক্ষেত্রে ব্যবহার করে। সংস্থাটির ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে গুগল প্লে স্টোরে এই ধারাবাহিকটির উপর ভিত্তি করে ‘মীনা গেম’ নামে একটি ফ্রি অ্যাপ চালু করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের স্বাভাবিক জীবনযাপন, সুরক্ষা ও উন্নয়নের পথে বাধার সৃষ্টি করে এমন যে কোনো ধরনের দৃষ্টিভঙ্গী ও আচরণের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের জন্য সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রচারের উদ্দ্যেশ্যে, ইউনিসেফ, ‘মীনা কমিউনিকেশন ইনিশিয়েটিভ’ (এমসিআই) নামে একটি প্রজেক্ট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে। কিন্তু সমাজে মীনার অভাব আবরও অনুভূত হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কী, ২০০৫ সালের পর থেকে এই দীর্ঘ সময়ের বিরতির পরে মীনার প্রত্যাবর্তন আমাদের সমাজের জন্য একান্ত প্রয়োজন। আরও একবার সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করার জন্য, কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিন্তাচেতনা ও অন্যান্য অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য এবং ধর্ষণের মত মারাত্মক বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য ও মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য মীনার ফিরে আসার এটাই উপযুক্ত সময়।
এখন প্রশ্ন হল, পৃথিবীর সবচেয়ে অনুন্নত অঞ্চলে যদি একটি কার্টুন চরিত্রের মাধ্যমে এই ধরনের ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়, তাহলে এরকম চরিত্র আরও কেন তৈরি করা হচ্ছে না? ব্যবহারিকভাবে কোনো কিছু দেখলে শিশুরা সে বিষয়টি অনেক দ্রুত ও সহজে আয়ত্ত করতে পারে। আর সেই ব্যবহারিক উপস্থাপনা যদি কোনো কার্টুন চরিত্র করে থাকে তাহলে তা শিশুদের মনে আরও দৃঢ়ভাবে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রভাব বিস্তার করে। একটি শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা দিতে বাবা-মায়ের কয়েক মাস সময় লেগে যায়, যেখানে কোনো কার্টুন বা অ্যানিম্যাটেড চরিত্র কয়েক দিনের মধ্যেই সেই শিক্ষা প্রদান সম্পন্ন করতে পারে। কিন্তু দু:খের বিষয় এই যে বর্তমানে প্রচারিত বেশিরভাগ কার্টুনেই ক্রূর দুষ্টুমি বা অতিরিক্ত প্রহসন, এমনকি সহিংসতা পর্যন্ত দেখানো হয়ে থাকে। সাধারণ, শিশুদের মানসিকতা বিকাশের উপযোগি ও গুরুত্বপূর্ণ কোনো শিক্ষাই বেশিরভাগ কার্টুন শো ও কমিক বইতে আজকাল আর থাকেনা। ডিসি কমিক্স বা মার্ভেল এর মত কমিক বই এর গল্পের আদলে তৈরি চলচ্চিত্রে দেখানো গল্প শিশুদের মনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে থাকে। শিশুরা ঐ সকল সুপারহিরোদের দ্বারা অনেকাংশে অনুপ্রাণিত হয়। কিন্তু এসব চলচ্চিত্রে দেখানো হয় যে একজন সাধারণ মানুষ পৃথিবীর জন্য অকল্যাণকর কোনো শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম নয়, বরং সেজন্য একজন মানুষের ‘সুপার পাওয়ার’ থাকা আবশ্যক। এটা সত্যি যে ঐ সকল চলচ্চিত্র থেকে বাচ্চারা বন্ধুত্ব ও ঐক্যতার বিষয়ে অনেক কিছু শিখছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। যদি আমাদের অবস্থার উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কোনো পোশাক বা অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রয়োজন হয়, তাহলে শিশুরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হবে কী করে? যদি সমাজের অকল্যাণকর শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য সহিংসতাই একমাত্র উপায় হয়ে থাকে, তাহলে শিশুরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শিখবে কীভাবে? শান্তি বিষয়ে ‘নোবেল পুরস্কার’ পাওয়ার তো কোনো সম্ভাবনাই থাকবেনা! অন্যদিকে, মীনা’র মত একটি চরিত্র নিয়ে কেন এখনো কোনো চলচ্চিত্র তৈরি হয়নি? কেনই বা বিশ্বজুড়ে মীনা’কে এত জোরালোভাবে প্রচার করা হয় না? নারীবাদ বা সমান অধিকার নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বেও তো একই ধরনের সমস্যা বিরাজমান রয়েছে, তাই না?
দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের দুর্দশার ওপর ভিত্তি করেই মীনা তৈরি হলেও, এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত আদর্শ ও চিন্তাচেতনা কখনই কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষায় এই ধারাবাহিকটি প্রচারের মূল লক্ষ্যই ছিল একটি সার্বজনীন আবেদনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে সকল স্থানে ও সকল সমাজে প্রচলিত একই ধরনের সমস্যার সমাধান করা। কিন্তু এই প্রচেষ্টার কতটুকুই সফল হয়েছে? আমাদের সত্যিই মীনাকে আবারও অনেক বেশি প্রয়োজন!
সোহেলী তাহমিনা, বিডি.টুনসম্যাগ.কম
ইংরেজিতে পড়ুন: Meena: An Iconic Character that Shaped Societies
৯০ এর দশক ছিল এমন একটা সময় যখন গোটা পৃথিবীর সামাজিক নিয়মনীতি পরবর্তী শতাব্দীর উপযোগি হয়ে গড়ে ওঠার জন্য বিস্তর পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে পার হয়েছিল; আবার একই সাথে এই দশকেও হাজার বছরের পুরনো, গোঁড়া ও লজ্জাকর বেশ কিছু সামাজিক রীতিনীতি প্রচলিত ছিল যা মূলত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন গ্রামের মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল, যদিও শহরের মেয়েরাও অনেক ক্ষেত্রেই সেসকল গোঁড়া রীতিনীতির শিকার হয়। কিন্তু ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি অ্যানিম্যাটেড কার্টুন চরিত্রের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীর পরিচয় ঘটল ‘মীনা’ নামের একটি সাধারণ, কিন্তু আর দশটা মেয়ের চেয়ে অনেক ভিন্ন, এমনকি তৎকালীন প্রেক্ষাপটে বেশ খানিকটা বৈপ্লবিক মতবাদের অধিকারী মেয়ের সাথে। দীর্ঘদিনের গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ের কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য থেকে ইউনিসেফ বাংলাদেশ এই চরিত্রটির তথা এই ধারাবাহিকটির মূল কাহিনী, বিভিন্ন চরিত্র, ভূমিকা ও গল্প তৈরি করে। মোস্তফা মনোয়ার, শিশির ভট্টাচার্য সহ শীর্ষ স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শিল্পী এই চরিত্রগুলি তৈরি করেন। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, নেপালি, পোশ্ত ও পর্তুগীজ ভাষায় এই অ্যানিম্যাটেড ধারাবাহিক কার্টুনটি প্রচারিত হয়। এই ধারাবাহিকটি অপ্রত্যাশিত সাফল্য লাভ করে এবং মূল চরিত্রটি রাতারাতি একটি সামাজিক আদর্শে পরিণত হয়। ইউনিসেফ এর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশের ৯৫% মানুষ মীনা’র সম্পর্কে অবগত। আর এটা হওয়াই স্বাভাবিক ছিল কারণ এটি বাংলাদেশ টেলিভিশন এ প্রচারিত হয় (উল্লেখ্য, সে সময়ে স্যাটেলাইট চ্যানেল এর প্রচলন ছিলনা)।
অনেক ছোট বয়স থেকেই এই অঞ্চলের মেয়েদের শেখানো হত যেন তারা কোনোরকম তর্ক বা বিরোধিতা না করে সমাজের সকল নিয়মকানুন মেনে চলে, তারা যেন কোনো বিষয়েই মতামত না দেয় এবং সমাজের পুরুষদের সকল আদেশ-নির্দেশ মেনে চলে। আর সমান অধিকার বিষয়ে কথা বলার বা কোনো প্রশ্ন তোলার কোনোরকম অধিকার তাদের কখনই ছিলনা। বহু শতাব্দী ধরে অনেক দেশেই মেয়েদের শিক্ষিত হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল, যদিও কয়েকজন সাহসী নারী সমাজের শেকল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছেন এবং উপমহাদেশের ইতিহাসে নিজেদের কৃতিত্বকে স্মরণীয় করে রেখে গেছেন। কিন্তু তারপরেও প্রাথমিক শিক্ষা ছেলেদের জন্য সাধারণ মানবিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হলেও, মেয়েদের জন্য তা হয়নি। ভাই রাজু ও পোষা টিয়া পাখি মিঠু’র সাথে মিলে, মীনা তার প্রথম আবির্ভাবেই, সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গীকে আমূল বদলে দেয়। প্রথম পর্বে দেখানো হয় যে ভাইয়ের সাথে স্কুলে যেতে না দেওয়ায় মীনা অত্যন্ত কষ্ট পায়। আর তারপরেই বুদ্ধি করে তার টিয়া পাখিকে পাঠ শিখে আসার জন্য স্কুলে যেতে বলে। মিঠুই মীনাকে ৩ এর নামতা শেখায়। নতুন শেখা নামতা বারবার আওড়াতে গিয়ে মীনা জানতে পারে যে তাদের বাড়িতে মোট ৬ টি মুরগী আছে। কিন্তু এক সময়ে সে লক্ষ করে যে একটি মুরগী নেই। তার বুদ্ধিমত্তার কারণে মুরগী হারানোর লোকসান থেকে তার পরিবার রক্ষা পায় এবং অনুধাবন করতে পারে যে একটি মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে শিক্ষিত করলে শুধু তার নিজেরই উপকার হয়না, বরং তার পুরো পরিবারই উপকৃত হতে পারে। আর এভাবেই ‘মীনা’ নামের এই অ্যানিম্যাটেড ধারাবাহিক কার্টুনটির যুগান্তকারী যাত্রার শুরু হয়। সময়ের সাথে সাথে মীনা, নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি সমান অধিকার, সকলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পয়:নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, খাবার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার গুরুত্ব, যৌতুক, পথেঘাটে যৌন হয়রানি ও অন্যান্যভাবে মেয়েদের উত্যক্ত করা, নারী ও পুরুষ উভয়কে নিয়ে পরিহাস ও বিড়ম্বনার সৃষ্টি করা, প্রাচীন আমলের ঘরোয়া পদ্ধতির চেয়ে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উপকারিতা সম্পর্কে সতর্কীকরণ, টিকাদান, শিশুদের খেলাধুলা করার অধিকার, সন্তান প্রসবের সঠিক উপায়, মায়ের বুকের দুধ পান করানোর গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করানো সহ সমাজের অনেক কুসংস্কার ও অন্ধ রীতিনীতির গণ্ডী ভেঙ্গে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটাতে সমর্থ হয়। এইচআইভি/এইডস্ ছোঁয়াচে বলে মানুষের যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে তা দূর করে এই রোগীদের প্রতি মানুষকে সহমর্মী হতে শেখানোও মীনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এক পর্যায়ে দেখানো হয় যে মীনা শহরে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এলে, তাকে ভুল করে ‘কাজের মেয়ে’ ভাবা হয়। এই পর্বে দেখানো মীনার অভিজ্ঞতা সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত এই ‘শিশুশ্রম’ এর সম্বন্ধে মানুষের ধারণা পাল্টাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ধারাবাহিকটির ৩৭তম ও শেষ পর্বে দেখানো হয় যে যুদ্ধের ফলে কাশ্মীরের জনগণ কী ধরনের করুন পরিস্থিতির শিকার হয় এবং শরণার্থী হিসেবে দিনযাপন করতে বাধ্য হয়। আর দীর্ঘদিন পরে বিচ্ছিন্ন পরিবারের সাথে আবারো মিলিত হতে পেরে তাদের কেমন লাগে তাও এই পর্বে দেখানো হয়।
৯০ এর দশকের সকল শিশুর কাছেই মীনা একটি আনন্দময় স্মৃতি হিসেবেই সমাদৃত। এমনকি বর্তমানের শিশুরাও এই ধারাবাহিকটি দেখে একই রকম আনন্দ পায়। বাচ্চাদের স্কুলে যেতে উৎসাহিত করা এবং পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য মীনা সবচেয়ে কার্যকরী শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে। বাচ্চাদের যে বিষয়টি শেখাতে বাবা-মা কয়েক মাস সময় নেন, মীনা মাত্র একটি পর্বেই তা সহজেই শেখাতে পারে। বাল্যকাল ছাড়িয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠা নব্বইয়ের সেই শিশুদের কাছে মীনা আজও একই রকম জনপ্রিয়। শুধু একটি কার্টুন চরিত্রই নয়, বরং যে সকল মেয়েরা নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে অসমর্থ ছিল তাদের জন্য সে একজন নেত্রীর ভূমিকা পালন করেছে। আর এই কারণেই মাত্র ৯ বছর বয়সের একটি ছোট্ট মেয়ে হয়েও সে সব বয়সী দর্শকদের কাছে সমানভাবে সমাদৃত হয়েছে (উল্লেখ্য, মীনা আজীবনই ৯ বছর বয়সীই ছিল, আছে এবং থাকবে)! দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এই যে মীনার শেখানো আদর্শ আজ পৃথিবীর বেশির ভাগ স্থানেই মেনে চলা হয়না। আজকের যুগে মেয়েরা হয়ত উচ্চ শিক্ষা ও পর্যাপ্ত খাবারের সুযোগ পাচ্ছে, কিন্তু এখনও এমন অনেক বিষয়ই রয়ে গেছে যেসব ক্ষেত্রে সমান অধিকারের বিষয়টি না মানাকেই সমাজের স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে মেনে নেওয়া হচ্ছে। যেমন পৃথিবীর অনেক স্থানেই পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে মেয়েরা কম বেতন পাচ্ছে। ঘর সামলানো আজও প্রাথমিকভাবে একজন মেয়ের দায়িত্বই হিসেবেই বিবেচিত। পরিবারের স্বার্থে একজন মেয়েকে তার ক্যারিয়ারের সাথে আপোষও করতে হচ্ছে, আর যদি সে তা না করে তাহলে বেশ নেতিবাচকভাবেই তাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে নেতিবাচক দিকটি এই যে কোনো মেয়ে যদি উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন করে যেমন ফাইটার পাইলট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় বা কোনো বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন করে, তাহলে সেই মেয়েটির কর্মজীবনের চেয়ে তার ব্যক্তিগত জীবনকেই বেশি করে প্রচার করা হয়ে থাকে; অথচ একজন পুরুষের বেলায় ব্যাপারটা পুরো উল্টে যায়। তবে, আরও দু:সংবাদ এই যে এই ঘটনার জন্য মেয়েরাও বেশ খানিকটা দায়ী। প্রচারের অল্প দিনের মধ্যেই মীনার খ্যাতি এতটাই বেড়ে যায় যে ধারাবাহিকটি টেলিভিশন ছাড়িয়ে কমিক বই এ রূপান্তরিত হয় এবং বিবিসি এর মাধ্যমে বেতারেও প্রচার করা হয়। তার এই খ্যাতি কে ইউনিসেফ পোস্টার, আলোচনা ও শিক্ষকদের নির্দেশিকার মত বিভিন্ন প্রচারণামূলক ক্ষেত্রে ব্যবহার করে। সংস্থাটির ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে গুগল প্লে স্টোরে এই ধারাবাহিকটির উপর ভিত্তি করে ‘মীনা গেম’ নামে একটি ফ্রি অ্যাপ চালু করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের স্বাভাবিক জীবনযাপন, সুরক্ষা ও উন্নয়নের পথে বাধার সৃষ্টি করে এমন যে কোনো ধরনের দৃষ্টিভঙ্গী ও আচরণের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের জন্য সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রচারের উদ্দ্যেশ্যে, ইউনিসেফ, ‘মীনা কমিউনিকেশন ইনিশিয়েটিভ’ (এমসিআই) নামে একটি প্রজেক্ট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে। কিন্তু সমাজে মীনার অভাব আবরও অনুভূত হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কী, ২০০৫ সালের পর থেকে এই দীর্ঘ সময়ের বিরতির পরে মীনার প্রত্যাবর্তন আমাদের সমাজের জন্য একান্ত প্রয়োজন। আরও একবার সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করার জন্য, কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিন্তাচেতনা ও অন্যান্য অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য এবং ধর্ষণের মত মারাত্মক বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য ও মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য মীনার ফিরে আসার এটাই উপযুক্ত সময়।
এখন প্রশ্ন হল, পৃথিবীর সবচেয়ে অনুন্নত অঞ্চলে যদি একটি কার্টুন চরিত্রের মাধ্যমে এই ধরনের ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়, তাহলে এরকম চরিত্র আরও কেন তৈরি করা হচ্ছে না? ব্যবহারিকভাবে কোনো কিছু দেখলে শিশুরা সে বিষয়টি অনেক দ্রুত ও সহজে আয়ত্ত করতে পারে। আর সেই ব্যবহারিক উপস্থাপনা যদি কোনো কার্টুন চরিত্র করে থাকে তাহলে তা শিশুদের মনে আরও দৃঢ়ভাবে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রভাব বিস্তার করে। একটি শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা দিতে বাবা-মায়ের কয়েক মাস সময় লেগে যায়, যেখানে কোনো কার্টুন বা অ্যানিম্যাটেড চরিত্র কয়েক দিনের মধ্যেই সেই শিক্ষা প্রদান সম্পন্ন করতে পারে। কিন্তু দু:খের বিষয় এই যে বর্তমানে প্রচারিত বেশিরভাগ কার্টুনেই ক্রূর দুষ্টুমি বা অতিরিক্ত প্রহসন, এমনকি সহিংসতা পর্যন্ত দেখানো হয়ে থাকে। সাধারণ, শিশুদের মানসিকতা বিকাশের উপযোগি ও গুরুত্বপূর্ণ কোনো শিক্ষাই বেশিরভাগ কার্টুন শো ও কমিক বইতে আজকাল আর থাকেনা। ডিসি কমিক্স বা মার্ভেল এর মত কমিক বই এর গল্পের আদলে তৈরি চলচ্চিত্রে দেখানো গল্প শিশুদের মনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে থাকে। শিশুরা ঐ সকল সুপারহিরোদের দ্বারা অনেকাংশে অনুপ্রাণিত হয়। কিন্তু এসব চলচ্চিত্রে দেখানো হয় যে একজন সাধারণ মানুষ পৃথিবীর জন্য অকল্যাণকর কোনো শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম নয়, বরং সেজন্য একজন মানুষের ‘সুপার পাওয়ার’ থাকা আবশ্যক। এটা সত্যি যে ঐ সকল চলচ্চিত্র থেকে বাচ্চারা বন্ধুত্ব ও ঐক্যতার বিষয়ে অনেক কিছু শিখছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। যদি আমাদের অবস্থার উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কোনো পোশাক বা অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রয়োজন হয়, তাহলে শিশুরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হবে কী করে? যদি সমাজের অকল্যাণকর শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য সহিংসতাই একমাত্র উপায় হয়ে থাকে, তাহলে শিশুরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শিখবে কীভাবে? শান্তি বিষয়ে ‘নোবেল পুরস্কার’ পাওয়ার তো কোনো সম্ভাবনাই থাকবেনা! অন্যদিকে, মীনা’র মত একটি চরিত্র নিয়ে কেন এখনো কোনো চলচ্চিত্র তৈরি হয়নি? কেনই বা বিশ্বজুড়ে মীনা’কে এত জোরালোভাবে প্রচার করা হয় না? নারীবাদ বা সমান অধিকার নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বেও তো একই ধরনের সমস্যা বিরাজমান রয়েছে, তাই না?
দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের দুর্দশার ওপর ভিত্তি করেই মীনা তৈরি হলেও, এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত আদর্শ ও চিন্তাচেতনা কখনই কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষায় এই ধারাবাহিকটি প্রচারের মূল লক্ষ্যই ছিল একটি সার্বজনীন আবেদনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে সকল স্থানে ও সকল সমাজে প্রচলিত একই ধরনের সমস্যার সমাধান করা। কিন্তু এই প্রচেষ্টার কতটুকুই সফল হয়েছে? আমাদের সত্যিই মীনাকে আবারও অনেক বেশি প্রয়োজন!
সোহেলী তাহমিনা, বিডি.টুনসম্যাগ.কম
ইংরেজিতে পড়ুন: Meena: An Iconic Character that Shaped Societies