মৌ যখন বউ
বিশ্বজিৎ দাস বিডি.টুনসম্যাগ.কম রম্য গল্প এক. ‘কী মাসুদ সাহেব আর কতদিন?’ জানতে চাইলেন পারভেজ। মাসুদের ইমিডিয়েট বস। সম্প্রতি ও ব...
https://bd.toonsmag.com/2016/01/10625.html
বিশ্বজিৎ দাস
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
রম্য গল্প
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
রম্য গল্প
এক.
‘কী মাসুদ সাহেব আর কতদিন?’ জানতে চাইলেন পারভেজ। মাসুদের ইমিডিয়েট বস।
সম্প্রতি ও ব্যাংকের চাকরিতে যোগ দিয়েছে। থাকে একা একটা মেসে। ব্যাচেলর শুনে সবাই ওকে বিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। সবাই শুধু মেয়ে দেখাতে চায়। সবগুলিই বিশ্বসুন্দরী। রূপে গুণে অনন্যা।
‘মাসুদ সাহেব, কিছু বলছেন না যে?’ পারভেজ জানতে চাইলেন।
‘কী বলব।’ বিব্রত হল মাসুদ।
‘শোনেন, বিয়েটা করে ফেলুন তাড়াতাড়ি। এতে আপনি সাতটি সুবিধা পাবেন।
‘সাতটি?’
ওর বস হাসলেন, ‘এক. সকাল সকাল গরম পানি পাবেন বাসন মাজার জন্য।
দুই. ছোট ছোট বাচ্চা পাবেন- গাধা সাজার জন্য।
তিন. বউয়ের মিষ্টি কথা শুনতে পারবেন- নতুন শাড়ি গয়নার আবদারের জন্য।
চার. বউ মাঝে মাঝে তাকে জড়িয়ে ধরতে দেবে- মাসিক খরচ বৃদ্ধির জন্য।
পাঁচ. গায়ক হতে পারবেন -বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য।
ছয়. বউয়ের সুন্দর সাজ দেখতে পারবেন- শপিংয়ে যাওয়ার জন্য।
সাত. ফ্রি ফ্রি বকাঝকা শুনতে পারবেন- আপনি যে দুনিয়ার সেরা বোকা স্বামী সেটা উপলব্ধি করার জন্য।’
মাসুদ হাসল। বোকা মার্কা হাসি।
দুই.
মৌ হাসল। ‘এ্যাই শোন, আজ থেকে আমরা তো স্বামী-স্ত্রী। আজ আমাদের বাসররাত। এসো আমরা দুজনকে কথা দিই, কারো কাছে কোন কিছু লুকাবো না। রাজি?’
মাথা নাড়ল মাসুদ। এত সুন্দর মেয়েটা ওর স্ত্রী ভাবতেই লজ্জা লাগছে।
‘এ্যাই শোন, একটা ছোট কাজ করবো। রাগ করবে না তো?’ মৌ বলল।
মাথা দোলাল মাসুদ।
‘কাছে এসে বসো।’
এসে বসল মাসুদ।
‘চোখ বন্ধ কর।’
করল ও।
‘একটা ছোট্ট কাজ করব লক্ষ্মিটি। রাগ কোরো না। একটু লক্ষ্মি ছেলের মত বসো। চোখ বন্ধ কর। ভয় নেই। একদম ব্যথা দেব না।’
দারুণ! দারুণ উত্তেজনা ভর করল মাসুদের মনে-শরীরে।
যাক বউ তাহলে ভালই হয়েছে। বেশ অ্যাগ্রেসিভ। মনে মনে পুলকিত হল মাসুদ।
তারপরই তীব্র ব্যথায় চিৎকার করে উঠল ও। ওর গালে সদ্য গজানো কাঁচা ফোঁড়াটা সজোরে টিপে দিয়েছে মৌ। চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেল ওর।
‘লেগেছে? খুব লেগেছে??’ বেরসিকের মত জানতে চাইল ওর নতুন বউ।
তিন.
কেন যে বেরসিকের মত কাজটা করেছিল মাসুদ- এখন ভাবলেও আফসোস হচ্ছে। বিযের পরদিনই মৌ ওর কাছে জানতে চেয়েছিল, ‘তোমার অফিসে মেয়ে কলিগগুলো দেখতে কেমন।’
‘সুন্দর!’
‘অবিবাহিত?’
‘আছে দু-তিনজন।’
‘ওরা তোমাকে বিয়ে করতে চায়নি?’
‘চায়নি আবার। ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্যই তো তোমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করলাম।’ হেসে বলেছিল মাসুদ।
সেদিন আর কিছু না বললেও মৌ যে এত সন্দেহবাতিক তা কে জানত।
সেদিন ওকে শার্ট এগিয়ে দিতে দিতে মৌ বলল, ‘তোমার শার্টে লিপস্টিকের দাগ কোত্থেকে এল?’
থতমত খেয়ে গেল মাসুদ। ‘বু...বু...ঝতে পারছি না।’
‘বুঝতে পারবে কীভাবে? নিশ্চয়ই অফিসে অনেক মেয়ে কলিগ তোমাকে চুমু খায়। নইলে নিজের বউয়ের ঠোঁটের লিপস্টিকের দাগও চিনতে পারছ না কেন?’
আরেকদিন অফিসে বসে কাজ করছে মাসুদ।
হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এল, ‘হ্যালো তুমি কী তোমার প্রিয় গার্লফ্রেন্ডকে ভুলে গেলে?’
‘না, না তো। কে?’ চিনতে পারল না।
‘আরে আমি। চিনতে পারছো না?’
‘চিনেছি।’ বল ক্যামন আছো?’ চিনতে না পেরেই বলল।
‘ভাল নাই। অফিসে বসে বসে খালি বান্ধবীদের সাথে প্রেমালাপ কর তাই না। আজ আসো বাড়িতে।’
বিষয়টা দিন দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে লাগল।
অফিসের বস ফোন করেছেন। মৌ মোবাইলটা এনে দিয়ে বলল, ‘তোমার বান্ধবী ফোন করেছে। নাও বসে বসে প্রেমালাপ করো।’
সেদিন মাসুদের অ্যানি খালা ফোন ধরেছেন। মৌ ফোন ধরল।
‘হ্যালো মাসুদ আছে। আমি ওর অ্যানি ...।’
‘কী? তুমি ওর সাবেক প্রেমিকা অ্যানি। এতবড় সাহস তোমার।’
চার.
সাহস করে কথাটা বলেই বসল মাসুদ। ‘শোন মৌ, তোমার সঙ্গে একটা বিষয় শেয়ার করা দরকার।’
‘বল শুনি।’ মুখ ঝামটা দিয়ে বলল মৌ।
‘বাঁধনের কথা তো বলেছি তোমাকে। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বান্ধবী। লন্ডনে থাকত। কয়েকদিন হল ঢাকায় চলে এসেছে একেবারে। হাজব্যান্ডের সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমার সাথে দেখা করতে চায়।’
‘কেন? তোমার সাথে দেখা করতে চায় কেন? তোমাকে বিয়ে করবে। আমাকে ফেলে দুজনে লন্ডনে গিয়ে থাকবে।’
মাসুদ চুপ করে থাকল।
একটুপর বলল, ‘আজ আমি ওর সাথে দেখা করতে যাব। একটা চাইনিজে।’
‘আমিও যাব।’ মৌ চিৎকার করে বলল।
‘আশ্চর্য! তুমি কেন যাবে?’
‘যাবো না। তোমরা প্রাক্তন প্রেমিক প্রেমিকা কী সব পরিকল্পনা করছো জানতে হবে না।’
অগত্যা হাল ছেড়ে দিল মাসুদ। ‘ঠিক আছে। আমরা দুজনে একসাথেই যাব আজ বিকেলে।’
সারা রাস্তায় একটা কথাও বলল না মৌ। মাঝে মাঝেই রুমাল দিয়ে চোখ মুছল। মাসুদ উদাস ভঙ্গিতে বাইরে তাকিয়ে থাকল।
মৌ ভাবল, ‘পাষাণ। আমাকে ছেড়ে প্রিয় বান্ধবীর কথা ভাবছে।’
চাইনিজে ঢুকে এদিক ওদিক তাকাল মাসুদ। তারপর ওর হাত ধরল, ‘এসো আমার বাঁধনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।’
আস্তে আস্তে কোণে বসে থাকা একটা জটলার দিকে এগুলো ও।
‘এই নাও এরাই আমার বাঁধন। তবে এদের আমি পেয়েছি বৈবাহিক সূত্রে।’
মৌ অবাক হয়ে দেখল ওর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে যারা তারা আর কেউ নয়-ওরই বড় আপা, দুলাভাই, ভাগ্নে-ভগ্নি, জলি খালা, খালাতো বোন মলি।
সবাই একসাথে বলল, ‘সারপ্রাইজ।’
বিশ্বজিৎ দাস
সহকারী অধ্যাপক পদার্থবিজ্ঞান
দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দিনাজপুর।