চাপাবাজ বন্ধু
ব্ল্যাক রুবেল রানা, বিডি.টুনসম্যাগ.কম : শ্রিয়ার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক কেউ জানে না। আজকাল কোন ছেলে-মেয়ে প্রেম করলে তার গন্ঠি দুয়েকজন...
https://bd.toonsmag.com/2014/11/blog-post_97.html
ব্ল্যাক রুবেল রানা, বিডি.টুনসম্যাগ.কম : শ্রিয়ার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক কেউ জানে না। আজকাল কোন ছেলে-মেয়ে প্রেম করলে তার গন্ঠি দুয়েকজন বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করে যে, আমি অমুক মেয়েটার সাথে প্রেম করি বা অমুক ছেলেটা সাথে প্রেম করি। কিন্তু আমরা দুজন একধম অন্যরকম। আমরা বলতে গেলে গোপন প্রেম করছি! অনেক ছেলেরা আছে যে কোন মেয়ের সাথে প্রেম করলে সে মেয়ের বাড়ির আশপাশে দিনের রাতে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ষোল থেকে আঠারো ঘন্টা নাওয়া খাওয়া ভুলে ঘুরঘুর করে। আমি কিন্তু তা করি না। এই জন্য কেউ বুঝতে পারে না যে আমি শ্রিয়ার সাথে প্রেম করি। শ্রিয়ার প্রেমে পাগল অনেক ছেলে, অনেকের মাঝে আমারই এক বন্ধু সোহোগ একটু বেশি। সোহাগকে সকাল-বিকাল সবসময় শ্রিয়াদের বাড়ির আশপাশে দেখা যায় ফ্যাশানাবল ভাবে ঘুরাঘুরি করতে। মার্কেটে নতুন কোন ফ্যাশনের পোশাক বের হলেই সোহাগ সে পোশাক কিনে পড়ে ফ্যাশনের সাজে শ্রিয়াদের বাড়ির সামনে আসবে শ্রিয়াকে দেখানোর জন্য। এভাবে শ্রিয়ার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সোহাগ তাদের বাড়ির সামনে ফ্যাশনে আনফ্যাশনে যে কোন ভাবেই হোক থাকবেই, কিন্তু শ্রিয়ার সাথে আজও কোন কথা বলতে পারেনি, প্রেম তো করবে দূরের কথা!! সোহাগ যে শ্রিয়াদের বাসার সামনে শ্রিয়াকে দেখার জন্য বা তার ভালোবাসা পাবার আশায় ঘুরঘুর করে তা শ্রিয়া আমার সাথে শেয়ার করে বলে,
‘জানো আশেক, সোহাগ আমার ভালোবাসা পাবার জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু কোন লাভ নেই, আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে আমার জীবনে জীবন সঙ্গী করব না, যত জনই যত যাই করুক। আমি একমাত্র তোমার, একথাটা তুমি মনে রেখো।’ শ্রিয়ার প্রতি আমার সে বিশ্বাসটুকু আছে তাই আমি নিশ্চিন্তিত। যাই হোক, একদিন সোহাগ আমার কাছে এসে বলল, ‘দোস্ত আশেক, আমার তো হয়ে গেছে।’ ‘কি হয়ে গেছে তোর?’ আমি জানতে চাইলাম তার কাছে। ‘দোস্ত, শ্রিয়ার সাথে আমার প্রেম হয়ে গেছে।’ খুব খুশি খুশি ভাব নিয়ে কথাগুলো বলল সোহাগ। আমিত জানি তার এই কথাগুলো একশ পার্সেন্ট মিথ্যা, চাপা মারা। চাপা মেরে বন্ধুদের মাঝে প্রেমিক সাজতে চায় আর কি, বাস্তবে তার কপালে প্রেম জুটবেই না। আমি তার কথা শুনে বললাম, ‘দোস্ত, তোর তো শ্রিয়ার সাথে প্রেম হয়ে গেল, আমার কি হবে? আমাকে একটা প্রেম করিয়ে দে-না? আচ্ছা থাক, আমার প্রেমটেম পরে হবেনি, শ্রিয়ার সাথে তোর প্রেম হয়ে গেছে এই উপলক্ষ্যে আমাকে খাওয়াতে হবে, বল কি খাওয়াবি?’ খাওয়ার কথা শোনে এবার সে তার হাসি উজ্জ্বল মুখটা ভার করে বলল, ‘আশেক, ঠিক আছে তোকে অন্যদিন খাওয়ামুনি।’
‘না দোস্ত, অন্য দিন না, আজকেই খাওয়াতে হবে।’ চেপে ধরলাম তাকে। চাপে পড়ে আমাকে খাওয়াতে বাধ্য হল। আমি ইচ্ছামত পেট ভরে ডাবল-ইডাবল করে খাইলাম। এরপর এই কথাগুলো আমি শ্রিয়ার সাথে শেয়ার করি। কথাগুলো শোনে শ্রিয়ার তো হাসতে হাসতে অস্থির অবস্থা। এরপর কয়েকদিনের মধ্যে সোহাগকে আর দেখতে পাইনি আমি, কয়েকদিন পর আবার যখন দেখা হল তখন সে বলল, ‘আশেক, সামনে রোববার শ্রিয়াকে নিয়ে সিনামা হলে গিয়ে সিনামা দেখুম।’ আমিত তার কথা শুনে মনে মনে হাসি। ‘দোস্ত, তোর কপালটা একটু এগিয়ে দে আমার দিকে, তোর কপালের সাথে আমার কপাল একটু ঘষা দিই, যেন তোর প্রেমিকা শ্রিয়ার মত একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারি!!’ সেদিন এর বেশি কথা বলতে পারলাম না, সে চলে গেল। সে চলে যাওয়ার পর আমি মনে মনে বলি, শালা চাপাবাজ, সামনে রোববারে তুমি শ্রিয়াকে নিয়ে হলে গিয়ে সিনামা দেখবা, রোববারে তোমাকে জাদু দেখামু আমি। শ্রিয়াকে বললাম, রোববারে মন্দিরা বৃজে আসার জন্য, আমরা দুজন বৃজে বসে বিকালে সময় কাটাব। আমার কথা শোনে শ্রিয়া বলল, ‘আমরা তো গোপন প্রেম করছি, যদি বৃজে যাই তাহলে তো আমাদের পরিচিত লোকেরা দেখে ফেলবে।’ ‘দেখুক তাতে কি, একদিন না একদিন তো আমাদের প্রেমেরে কথা লোকে জানবেই তাই না? তাই আজ একজনকে জানানোর জন্য তোমাকে বৃজে আসতে হবে
‘ঠিক আছে, আমি আসবো।’ বিকালে শ্রিয়া আর আমি বৃজে গিয়ে সোহাগকে ফোন দিলাম, পর পর চারবার রিং বাজার পর সোহাগ ফোন রিসিভ করল। আমি বললাম,
‘দোস্ত, তুই এখন কোথায় আছিস?’ ‘দোস্ত, শ্রিয়াকে নিয়ে সিনামা দেখতে যেতে চেয়েছিলাম না?’ ‘হ্যাঁ যেতে চেয়েছিলি তো।’ ‘শ্রিয়াকে নিয়ে সিনামা দেখে তাকে তাদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসলাম, তুই যে আমাকে ফোন দিয়েছিলি তখন শ্রিয়া আর আমি রিকশায় ছিলাম, তার সামনে ফোন রিসিভ করিনি, যদি সে মাইন করে তাই, দোস্ত, তুই রাগ করিস না।’ ‘আচ্ছা, রাগ করবো না, তুই একটু মন্দিরা বৃজে আসতে পারবি জলদি, তোকে একটা চমক দেখাবো।’ ‘হ্যাঁ পারবো, আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি।’ ফোনে কথাগুলো বললাম লাউড ইস্পিকার দিয়ে, সোহাগের কথাগুলো শ্রিয়াও শোনলো।
শ্রিয়া সোহাগের কথাগুলো শোনে বলল, ‘বদমাইশটাকে আসতে দেও, তাকে আমি জুতা দিয়ে পিটামু।’ দশ মিনিট নয় আঠারো মিনিট পর সোহাগ আসলো। এসে সে আমার সাথে শ্রিয়াকে দেখে ‘থ’ হয়ে হাঁ করে তাকিয়ে আছে! ‘কিরে দোস্ত, শ্রিয়াকে নিয়ে সিনামা হলে গিয়ে কি সিনামা দেখলি, নামটা বলতো শুনি?’ আমার কথা শোনে সে তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের করছে না, সেই যে হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে, দাঁড়িয়েই আছে!
শ্রিয়া আস্তে আস্তে তার পায়ে জুতা খুঁলতে খুঁলতে বলল, ‘এই বদমাইশ, আমি তোর প্রেমে পড়েছি, তোর সাথে আমি সিনামা দেখতে গিয়েছি, তুই এইমাত্র আমাকে রিকশায় করে আমাদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসলি, তাহলে আমি এখানে আসলাম কি করে হে? দাঁড়া আজ তোকে দেখাচ্ছি মজা।’ শ্রিয়ার কথা শোনে এবং তার পায়ের জুতা খুঁলতে দেখে সোহাগ পিছন ফিরে দিল এক দৌড়! দৌড়াতেই আছে, পিছনে ফিরে আর তাকায় না, সামনের দিকে দৌড় আর দৌড়।