লুকিং ফর দ্যা কচু বাগান!
বিডি.টুনসম্যাগ.কম মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ ঢাকায় যারা আমার মত মেস বাসী তাদের জন্য কমন একটা সমস্যার নাম হল বুয়া। প্রথমত বুয়া খুঁজে পাওয়া কঠি...
https://bd.toonsmag.com/2014/10/blog-post_5.html
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
ঢাকায় যারা আমার মত মেস বাসী তাদের জন্য কমন একটা সমস্যার নাম হল বুয়া। প্রথমত বুয়া খুঁজে পাওয়া কঠিন, খুঁজে পেলেও চুরি ঠেকানো কঠিন, চুরি ঠেকালে সে বুয়া টিকিয়ে রাখা কঠিন। তার উপর মন মত বাজার করা, সকাল সকাল বাজার করা ইত্যাদি ঝামেলা তো আছেই। আর দুইদিন পর পর এই ছুতোয় সেই ছুতোয় বাড়ি যাওয়া তো আবশ্যক। এই সব কারনে আমাদের সন্টু মামা বুয়াকে ব্যাঙ্গাত্তক উচ্চারনে ‘ভুয়া’ বলে ডাকেন। এটা তার আঞ্চলিক টান মনে করে কেও কিছু বলেনি কখনো। সেই বুয়া (সন্টু মামার ভাষায় ভুয়া) চতুর্থ বারের মত দাদী মৃত্যুর অজুহাত দেখিয়ে সপতাহ খানেকের জন্য লাপাত্তা। যাদের টাকার গরম আছে তারা হোটেল থেকে উদর পুর্তি করে আমাদের সামনে এসে দাঁত খিলাচ্ছে। আর আমরা মগা টাইপের কয়েকজন এক সাথে হয়ে তেল নুন হলুদ ছাড়া ডিম ভাজি আর আলু ভর্তার উপর চলছি। সন্টু মামা দাঁত খালানিদের দলে। জানি তার পকেটের অবস্থাও তেমন ভালো না তবু আলসে মামা ধার টার করে হলেও পেটের কষ্ট দিতে রাজি নন। একদিন আমি ডিম ভাজি করার জন্য তেল খুঁজছি এমন সময় সন্টু মামা দাঁত খেলাতে খেলাতে রান্না ঘরে হেলে দুলে হাজীর।
-বুঝলি গুণীজন বলে গেছেন ‘ঋণ করে ঘি খাও’, মানে হল প্রয়জনে ভিক্ষা কর তবু সুধু ডিম ভাজি খেওনা না।
-মামা, এই বানীটা সম্ভবত তোমার জন্য দেওয়া হয়েছে আমার জন্য না। এইবার তোমার জলহস্তীর মতন শরীর টা রান্না ঘর থেকে টেনে টুনে বের কর নইলে আমি কোন কাজই করতে পারছি না। রান্না ঘরের আশি পারসেন্ট যায়গা তুমি একাই দখল করে আছো।
ব্যাপার কি সন্টু মামাকে আমি পরক্ষ ভাবে মটকু বলেছি এটা তো উনার না বোঝার কথা না। বুঝেও কেন রিয়াকশন করছেন না ? অন্যসময় হলে এতক্ষণ পিঠের উপর দরাম করে একটা চর লাগাতেন। আমি কাহিনী বোঝার জন্য তেল খোঁজা অফ দিয়ে মামার দিকে তাকিয়ে হত বাক হয়ে গেলাম। মামা আমাদের রান্না ঘরের সামনের জানালা দিয়ে পাশের বাসার রান্না ঘরের দিকে গরিলার মত হা করে তাকিয়ে আছেন। মামার দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখি সামনের বাসায় একটা মেয়ে তার পড়ার টেবিলে বসে ফোনে কথা বলছে। দশ পরেন গজ দূর থেকে সব প্রায় স্পষ্টই দেখা যায়। আমি মামাকে বল্লাম
-মামা তোমার ঐতিহাসিক হা বন্ধ কর, নইলে সুয়েজ খাল মনে করে মুখের ভেতর ইজ্রাইলি জাহাজ ঢুকে যাবে।
-অরে চান্দু এইবার বুঝেছি কেন তোমরা সারাদিন রান্না ঘরে পরে থাক, বলি রান্না কর না মেয়ে দেখ?
-কি বলছ মামা? সবাই কি আর তোমার মত উদার প্রেমিক?
-ঐ টিটকারি করবি না, আর ঐ মেয়ের দিকে নেক নজরে তাকাবি, আজ থেকে ঐ মেয়েটা তোদের মামি। খালার নজরে তাকাবি।
-কিন্তু মামা যেমন তেমন খালা নিয়ে সমাজে একটা বাজে কথা প্রচলন আছে।
-আমি কোন কথা শূনতে চাই না, খালা না ডাকলে ফুপি ডাকবি। কিন্তু নজর পবিত্র হতে হবে।
-তোমার মত ?
-অরে প্লিজ আর টিপ্পনি কাটিস না, আজ থেকে তোদের দলে আমি। ভাত রান্না করবো, আলু ভর্তা করবো, ডিম ভাজি করবো, তোরা শুধু বাজার করবি আমি সারাদিন ধরে রান্না করবো। তোরা কেও রান্না ঘরে আসতে পারবি না।
-কিন্তু মামা তোমার হাতের রান্না আমরা খেতে পারব তো ?
-ভালো কথা বলেছিস, আমার বোন খুব ভালো রান্না করে ওর কাছ থেকে রান্নার সব নিয়ম কানুন জেনে নেব। প্লিজ ভাইগ্না তোরা শুধু পায়ের উপর পা তুলে খাবি, রান্না ঘরের সব কাজ আমার।
তার পর আমাদের ফুর্তি দেখে কে ? বাজার করি, ক্লাস করি, ঘুমাই দম কষে খাই। খেতে বসে নুন কম হয়েছে , হলুদ একটু বেশি হয়েছে, আরেকটু সেদ্ধ করা দরকার ছিল বলে রিয়্যালিটি শোর বিচারকদের মত মতামত দেই। মামা বেশিক্ষণ সময় রান্না ঘরে আর বাদ বাকি সময় রুম আটকিয়ে কি যেন করে। আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে জানতে পারি ঘরের দরজা জানালা আটকিয়ে উপটান, মুলতানি মাটি মেখে নিজের ডিসপ্লে চেঞ্জ করার চেষ্টায় আছেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম
-কি মামা, দূর থেকে মূকাভিনয় ই করছ না কথা বার্তা হয়েছে?
-অরে পাগল আমাকে কি এতই ছাগল মনে হয় যে লস প্রজেক্টে ইনভেস্ট করবো ?
-মানে মামা তুমি ইনভেস্ট করাও শুরু করেছ নাকি ?
-আরে হা (মামা এদিক অদিক তাকিয়ে চাপা গলায় বলেন), ইশারা পরবো শেষ। কাল মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদান হয়েছে ইশারায়। মানে আমি হাতের আঙ্গুল দেখিয়ে দেখিয়ে ওকে আমার নাম্বার জানিয়ে দিলাম আরকি । এখানে বিরাট কেলেংকারি বেধে যাচ্ছিলো বুঝেছিস? জানিস ই তো আমার নাম্বার মাঝের দুইটা ডিজিজ ডাবল জিরো। ধর ওয়ান বলতে হবে আমি জাস্ট হাতের এক আঙ্গুল তুলেছি সে বুঝে নিয়েছে এখন ওয়ান হবে, সেভেন এ তুলেছি এক হাতের পাঁচ আঙ্গুল অপর হাতের দুই আঙ্গুল, ডাবল জিরো যেই দুই হাত দিয়ে দেখাতে গিয়েছি কি না কি বুঝলো আল্লাহ জানে ধপাশ করে জানালা বন্ধ কর দিল। আমার তো বেজায় মন খারাপ।পাক্কা দুই ঘন্টা পর জানালা খুলল। পরে আমি বুদ্ধি করে স্টেডিয়ামে যেমন করে প্লাকার্ড দেখায় এমন করে আমার নাম্বার লিখে একটা প্লাকার্ড বানালাম। একটু পরেই দেখি মিস কল।
-বাহ মামা তুমি তো ফাটিয়ে দিয়েছ।
-খারাপ কিছু মিন করলি নাকি ?
আরে নাহ, আমি বলবো খারাপ কথা তাও তোমাকে নিয়ে? আমাদের এতো আরামের খাবার দাবার বন্ধ হয়ে যাবে না ? মামা তার পর, ইনভেস্ট এর কথা বলছিলে না??
-শোন শিউলী কে বল্লাম তুমি শুধু মিস কল দিবা আমিই ব্যাক করবো।
-শিউলিটা আবার কে ?
-আরে তোর মামী, ঐ যে জানালার মেয়েটা।
-ওহ ঐ মেয়ের নাম শিউলী?
-হুম আমি বড্ড জোর করে ওর মোবাইলে দুইশ টাকা লোড করে দিলাম, নিতেই চায় না। এই যুগে এমন মেয়ে পাওয়া যায় বল ? এখন কার সব মেয়েই হল ধান্দা বাজ পাবলিক, আমার শিউলি ব্যাতিক্ক্রম।
-তা তো অবশ্যই। তার পর?
মামা কি যেন বলার জন্য সুয়েজ খালের গেইট মাত্রই খুললেন তখনি আবার মিস কল। ‘এক মিনিট’ বলে মামা কানের কাছে ফোন নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। এরি মধ্যে রান্না ঘর আমাদের জন্য ডেঞ্জার জোন ঘোষণা করা হয়েছে। মামা ম্যানেজারের থেকে বুয়ার নাম্বার নিয়ে তাকে এক মাসের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন বলে বাতাসে জোর গুঞ্জন। মামা তার রুপ চর্চা, ফোনালাপ আর আমাদের জন্য রান্না বেশ ভালো ভাবেই সামলাচ্ছেন। রোজার মাসেও তিনি এই রাত ঐ রাত (মানে সেহেরী) এ ভালই পারফর্মেন্স করছেন। প্রেম মানুষকে বদলে দেয় শুনেছি, কিন্তু আমাদের সন্টু মামাকে পুরা উলটে পালটে দিয়েছে। ঈদের ছুটি ঘনিয়ে আসতেই আমাদের মধ্যে সাজ সাজ রব পরে গেছে। কেনাকাটা, বাড়ি যাওয়া, কোথায় ঘূরবো, দাওয়াত খাবো তার প্লান নিয়ে মহা ব্যাস্ত। ওদিকে সনটু মামা নিরুত্তাপ। তিনি নাকি ঈদে বাড়িও যাবেন না। কি ব্যাপার মামা তোমার ব্যাটারি কি ডাউন হয়ে গেল? প্রশ্ন করতেই মামা বলল
-শোন, প্লান করেছি আমরা দুজন একসাথে ছাদে উঠে চাঁদ দেখব আর চান রাইতে ওকে ঈদের আশিকি টু ড্রেস টা উপহার দিয়ে ভালোবাসার কথা বলবো।
-তাই নাকি ? তা এতো দিন থাকতে চান রাইত কেই বেছে নিলে ?
-অরে গাধা তুই মানুষ হলি না, চান রাইতে সবাই খুব হাসি খুশি থাকে। এই সময় অফার দিলে তা বিফলে যাওয়ার সম্ভাবনা জিরো।
-তাই নাকি ?
- তুই কি জানিশ ঝিনুকের মাঝে মুক্তো কি ভাবে হয় ?
-না, নিশ্চয়ই তুমি জানো ?
-আরে জানি জানি, প্রেম করতে গেলে অনেক কিছুই জানতে হয়। বলে মামা গলা পরিষ্কার করে নিলেন।
আমার আর শোনা হল না মুক্তো কি ভাবে এতো কিছু থাকতে ঝিনুকের ভেতর আত্মগোপন করে। আবার মিস কল আসায় মামা যথারীতি কানে ফোন নিয়ে রান্না ঘরে লগ ইন করলো।
চান রাত, নয়টার দিকে বাড়ি সবার সাথে খুব আড্ডা দিচ্ছি। সনটু মামার ফোন। মামা প্রথমে কয়েক মিনিট হাও মাও করে কানলেন। আমি কিছুতেই তাকে সাভাবিক করতে পারছি না। অনেক ধমক ধামক দিয়ে থামিয়ে, কান্না করার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। মামা বললেন
-এতো টাকা দিয়ে আশিকি টু ড্রেস টা ওকে গিফট করলাম, আর ও কি না বলে আমি নাকি এই মেসের বাবুর্চি। বলে ‘বাবুর্চি না হলে সারাদিন রান্না ঘরে কি করেন? রান্না ছাড়া তো আর কোন কাজ করতে দেখি না আপনাকে ? তাছাড়া আপনার গ্রামে বাবা মা থাকলে কেন ঈদে ঢাকায় থাকবেন? বাবা মা কান্না কাটি করবে না?’ তুই বল ভাইগ্না আমি কি বাবুর্চি ?
বলে মামা আবার হাও মাও শুরু করলেন। আমি মামাকে থামতে বল্লাম, তাকে থামানো জরুরী হয়ে পড়েছে কেননা অল্প একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহর তলিয়ে একাকার হয়ে যায়, মামা যে হারে কান্না করছেন তাতে ঢাকা শহর ডুবতে বেশি সময় লাগার কথা না। মামাকে থামালাম। ঐ মেয়েকে ভুলে যেতে বল্লাম, তার জন্য আমরা এর চেয়ে সুন্দরী মেয়ে খুঁজে দেব বলে আশ্বাস ও দিলাম কিন্তু কে শোনে কার কথা ? মামা বাবুর্চি হয়ে বেচে থাকতে পারবে না। এই ঈদের রাতেই সে সুসাইড করবে। আমি যেন তাকে বাধা দেওয়ার কোন চেষটাই না করি বলে হুংকার ও দিলেন। মামা আমাকে একটু লাইনে রেখে কি যেন খোঁজা খুঁজি করলেন। আমি আগ্রহী হয়ে বল্লাম
-মামা কি খোজ ?
-পাইছি এই জিনিশটাই খুজতেছিলাম, তোর পাঞ্জাবির সাথে পড়ার জন্য যে ওরনার মত একটা কি জানি কিনেছিলিনা পহেলা বৈশাখে ?
- হ্যাঁ ওটার নাম উত্তরীয়।
-হ তোর উত্তরীয় টাই কাজে লাগাবো। শালার শিউলিকে দেখিয়ে দেব আমি কি পারি।
- মানে মামা তুমি কি করবে ? কচু গাছে ফাঁসি নেবে নাকি ? তার মানে লুকিং ফর দ্যা কচু বাগান??
- এই ঢাকায় কচু গাছ পাবো কোথায় ? কচু খেত গেলেও তো পাবে না। তাই কচু গাছে না আমি রান্না ঘরেই ফাঁসি নেব। আর ফাঁসি নেব শিউলির ঘরের দিকে মুখ করে। যাতে ও জানালা খুলেই আধা হাত লম্বা কার্পেটের মত জিহবা দেখে জ্ঞান হারায়। বলেই মামা ফোন রেখে দিলেন। আমার মাথায় ‘কার্পেটের মত জিহ্বা’ শব্দ তা ঢুকে গেল। এই শব্দটা আমি দিয়েছি বলে সন্টু মামা আমার সাথে কতবার যে রাগ করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। এইবার ঢাকায় গিয়ে আমার দেওয়া নাম ব্যাবহার করায় তার বীরুধে পাইরেসির অভিযোগ এনে বন্ধুদের নিয়ে বুফের বিল আদায় করে নেওয়া যায় কি না দেখে নিবো। আমি মামার নাম্বারে ‘ঈদ মোবারক’ লিখে একটা মেসেজ দিয়ে পারিবারিক আড্ডায় যোগ দিলাম।
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
ঢাকায় যারা আমার মত মেস বাসী তাদের জন্য কমন একটা সমস্যার নাম হল বুয়া। প্রথমত বুয়া খুঁজে পাওয়া কঠিন, খুঁজে পেলেও চুরি ঠেকানো কঠিন, চুরি ঠেকালে সে বুয়া টিকিয়ে রাখা কঠিন। তার উপর মন মত বাজার করা, সকাল সকাল বাজার করা ইত্যাদি ঝামেলা তো আছেই। আর দুইদিন পর পর এই ছুতোয় সেই ছুতোয় বাড়ি যাওয়া তো আবশ্যক। এই সব কারনে আমাদের সন্টু মামা বুয়াকে ব্যাঙ্গাত্তক উচ্চারনে ‘ভুয়া’ বলে ডাকেন। এটা তার আঞ্চলিক টান মনে করে কেও কিছু বলেনি কখনো। সেই বুয়া (সন্টু মামার ভাষায় ভুয়া) চতুর্থ বারের মত দাদী মৃত্যুর অজুহাত দেখিয়ে সপতাহ খানেকের জন্য লাপাত্তা। যাদের টাকার গরম আছে তারা হোটেল থেকে উদর পুর্তি করে আমাদের সামনে এসে দাঁত খিলাচ্ছে। আর আমরা মগা টাইপের কয়েকজন এক সাথে হয়ে তেল নুন হলুদ ছাড়া ডিম ভাজি আর আলু ভর্তার উপর চলছি। সন্টু মামা দাঁত খালানিদের দলে। জানি তার পকেটের অবস্থাও তেমন ভালো না তবু আলসে মামা ধার টার করে হলেও পেটের কষ্ট দিতে রাজি নন। একদিন আমি ডিম ভাজি করার জন্য তেল খুঁজছি এমন সময় সন্টু মামা দাঁত খেলাতে খেলাতে রান্না ঘরে হেলে দুলে হাজীর।
-বুঝলি গুণীজন বলে গেছেন ‘ঋণ করে ঘি খাও’, মানে হল প্রয়জনে ভিক্ষা কর তবু সুধু ডিম ভাজি খেওনা না।
-মামা, এই বানীটা সম্ভবত তোমার জন্য দেওয়া হয়েছে আমার জন্য না। এইবার তোমার জলহস্তীর মতন শরীর টা রান্না ঘর থেকে টেনে টুনে বের কর নইলে আমি কোন কাজই করতে পারছি না। রান্না ঘরের আশি পারসেন্ট যায়গা তুমি একাই দখল করে আছো।
ব্যাপার কি সন্টু মামাকে আমি পরক্ষ ভাবে মটকু বলেছি এটা তো উনার না বোঝার কথা না। বুঝেও কেন রিয়াকশন করছেন না ? অন্যসময় হলে এতক্ষণ পিঠের উপর দরাম করে একটা চর লাগাতেন। আমি কাহিনী বোঝার জন্য তেল খোঁজা অফ দিয়ে মামার দিকে তাকিয়ে হত বাক হয়ে গেলাম। মামা আমাদের রান্না ঘরের সামনের জানালা দিয়ে পাশের বাসার রান্না ঘরের দিকে গরিলার মত হা করে তাকিয়ে আছেন। মামার দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখি সামনের বাসায় একটা মেয়ে তার পড়ার টেবিলে বসে ফোনে কথা বলছে। দশ পরেন গজ দূর থেকে সব প্রায় স্পষ্টই দেখা যায়। আমি মামাকে বল্লাম
-মামা তোমার ঐতিহাসিক হা বন্ধ কর, নইলে সুয়েজ খাল মনে করে মুখের ভেতর ইজ্রাইলি জাহাজ ঢুকে যাবে।
-অরে চান্দু এইবার বুঝেছি কেন তোমরা সারাদিন রান্না ঘরে পরে থাক, বলি রান্না কর না মেয়ে দেখ?
-কি বলছ মামা? সবাই কি আর তোমার মত উদার প্রেমিক?
-ঐ টিটকারি করবি না, আর ঐ মেয়ের দিকে নেক নজরে তাকাবি, আজ থেকে ঐ মেয়েটা তোদের মামি। খালার নজরে তাকাবি।
-কিন্তু মামা যেমন তেমন খালা নিয়ে সমাজে একটা বাজে কথা প্রচলন আছে।
-আমি কোন কথা শূনতে চাই না, খালা না ডাকলে ফুপি ডাকবি। কিন্তু নজর পবিত্র হতে হবে।
-তোমার মত ?
-অরে প্লিজ আর টিপ্পনি কাটিস না, আজ থেকে তোদের দলে আমি। ভাত রান্না করবো, আলু ভর্তা করবো, ডিম ভাজি করবো, তোরা শুধু বাজার করবি আমি সারাদিন ধরে রান্না করবো। তোরা কেও রান্না ঘরে আসতে পারবি না।
-কিন্তু মামা তোমার হাতের রান্না আমরা খেতে পারব তো ?
-ভালো কথা বলেছিস, আমার বোন খুব ভালো রান্না করে ওর কাছ থেকে রান্নার সব নিয়ম কানুন জেনে নেব। প্লিজ ভাইগ্না তোরা শুধু পায়ের উপর পা তুলে খাবি, রান্না ঘরের সব কাজ আমার।
তার পর আমাদের ফুর্তি দেখে কে ? বাজার করি, ক্লাস করি, ঘুমাই দম কষে খাই। খেতে বসে নুন কম হয়েছে , হলুদ একটু বেশি হয়েছে, আরেকটু সেদ্ধ করা দরকার ছিল বলে রিয়্যালিটি শোর বিচারকদের মত মতামত দেই। মামা বেশিক্ষণ সময় রান্না ঘরে আর বাদ বাকি সময় রুম আটকিয়ে কি যেন করে। আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে জানতে পারি ঘরের দরজা জানালা আটকিয়ে উপটান, মুলতানি মাটি মেখে নিজের ডিসপ্লে চেঞ্জ করার চেষ্টায় আছেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম
-কি মামা, দূর থেকে মূকাভিনয় ই করছ না কথা বার্তা হয়েছে?
-অরে পাগল আমাকে কি এতই ছাগল মনে হয় যে লস প্রজেক্টে ইনভেস্ট করবো ?
-মানে মামা তুমি ইনভেস্ট করাও শুরু করেছ নাকি ?
-আরে হা (মামা এদিক অদিক তাকিয়ে চাপা গলায় বলেন), ইশারা পরবো শেষ। কাল মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদান হয়েছে ইশারায়। মানে আমি হাতের আঙ্গুল দেখিয়ে দেখিয়ে ওকে আমার নাম্বার জানিয়ে দিলাম আরকি । এখানে বিরাট কেলেংকারি বেধে যাচ্ছিলো বুঝেছিস? জানিস ই তো আমার নাম্বার মাঝের দুইটা ডিজিজ ডাবল জিরো। ধর ওয়ান বলতে হবে আমি জাস্ট হাতের এক আঙ্গুল তুলেছি সে বুঝে নিয়েছে এখন ওয়ান হবে, সেভেন এ তুলেছি এক হাতের পাঁচ আঙ্গুল অপর হাতের দুই আঙ্গুল, ডাবল জিরো যেই দুই হাত দিয়ে দেখাতে গিয়েছি কি না কি বুঝলো আল্লাহ জানে ধপাশ করে জানালা বন্ধ কর দিল। আমার তো বেজায় মন খারাপ।পাক্কা দুই ঘন্টা পর জানালা খুলল। পরে আমি বুদ্ধি করে স্টেডিয়ামে যেমন করে প্লাকার্ড দেখায় এমন করে আমার নাম্বার লিখে একটা প্লাকার্ড বানালাম। একটু পরেই দেখি মিস কল।
-বাহ মামা তুমি তো ফাটিয়ে দিয়েছ।
-খারাপ কিছু মিন করলি নাকি ?
আরে নাহ, আমি বলবো খারাপ কথা তাও তোমাকে নিয়ে? আমাদের এতো আরামের খাবার দাবার বন্ধ হয়ে যাবে না ? মামা তার পর, ইনভেস্ট এর কথা বলছিলে না??
-শোন শিউলী কে বল্লাম তুমি শুধু মিস কল দিবা আমিই ব্যাক করবো।
-শিউলিটা আবার কে ?
-আরে তোর মামী, ঐ যে জানালার মেয়েটা।
-ওহ ঐ মেয়ের নাম শিউলী?
-হুম আমি বড্ড জোর করে ওর মোবাইলে দুইশ টাকা লোড করে দিলাম, নিতেই চায় না। এই যুগে এমন মেয়ে পাওয়া যায় বল ? এখন কার সব মেয়েই হল ধান্দা বাজ পাবলিক, আমার শিউলি ব্যাতিক্ক্রম।
-তা তো অবশ্যই। তার পর?
মামা কি যেন বলার জন্য সুয়েজ খালের গেইট মাত্রই খুললেন তখনি আবার মিস কল। ‘এক মিনিট’ বলে মামা কানের কাছে ফোন নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। এরি মধ্যে রান্না ঘর আমাদের জন্য ডেঞ্জার জোন ঘোষণা করা হয়েছে। মামা ম্যানেজারের থেকে বুয়ার নাম্বার নিয়ে তাকে এক মাসের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন বলে বাতাসে জোর গুঞ্জন। মামা তার রুপ চর্চা, ফোনালাপ আর আমাদের জন্য রান্না বেশ ভালো ভাবেই সামলাচ্ছেন। রোজার মাসেও তিনি এই রাত ঐ রাত (মানে সেহেরী) এ ভালই পারফর্মেন্স করছেন। প্রেম মানুষকে বদলে দেয় শুনেছি, কিন্তু আমাদের সন্টু মামাকে পুরা উলটে পালটে দিয়েছে। ঈদের ছুটি ঘনিয়ে আসতেই আমাদের মধ্যে সাজ সাজ রব পরে গেছে। কেনাকাটা, বাড়ি যাওয়া, কোথায় ঘূরবো, দাওয়াত খাবো তার প্লান নিয়ে মহা ব্যাস্ত। ওদিকে সনটু মামা নিরুত্তাপ। তিনি নাকি ঈদে বাড়িও যাবেন না। কি ব্যাপার মামা তোমার ব্যাটারি কি ডাউন হয়ে গেল? প্রশ্ন করতেই মামা বলল
-শোন, প্লান করেছি আমরা দুজন একসাথে ছাদে উঠে চাঁদ দেখব আর চান রাইতে ওকে ঈদের আশিকি টু ড্রেস টা উপহার দিয়ে ভালোবাসার কথা বলবো।
-তাই নাকি ? তা এতো দিন থাকতে চান রাইত কেই বেছে নিলে ?
-অরে গাধা তুই মানুষ হলি না, চান রাইতে সবাই খুব হাসি খুশি থাকে। এই সময় অফার দিলে তা বিফলে যাওয়ার সম্ভাবনা জিরো।
-তাই নাকি ?
- তুই কি জানিশ ঝিনুকের মাঝে মুক্তো কি ভাবে হয় ?
-না, নিশ্চয়ই তুমি জানো ?
-আরে জানি জানি, প্রেম করতে গেলে অনেক কিছুই জানতে হয়। বলে মামা গলা পরিষ্কার করে নিলেন।
আমার আর শোনা হল না মুক্তো কি ভাবে এতো কিছু থাকতে ঝিনুকের ভেতর আত্মগোপন করে। আবার মিস কল আসায় মামা যথারীতি কানে ফোন নিয়ে রান্না ঘরে লগ ইন করলো।
চান রাত, নয়টার দিকে বাড়ি সবার সাথে খুব আড্ডা দিচ্ছি। সনটু মামার ফোন। মামা প্রথমে কয়েক মিনিট হাও মাও করে কানলেন। আমি কিছুতেই তাকে সাভাবিক করতে পারছি না। অনেক ধমক ধামক দিয়ে থামিয়ে, কান্না করার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। মামা বললেন
-এতো টাকা দিয়ে আশিকি টু ড্রেস টা ওকে গিফট করলাম, আর ও কি না বলে আমি নাকি এই মেসের বাবুর্চি। বলে ‘বাবুর্চি না হলে সারাদিন রান্না ঘরে কি করেন? রান্না ছাড়া তো আর কোন কাজ করতে দেখি না আপনাকে ? তাছাড়া আপনার গ্রামে বাবা মা থাকলে কেন ঈদে ঢাকায় থাকবেন? বাবা মা কান্না কাটি করবে না?’ তুই বল ভাইগ্না আমি কি বাবুর্চি ?
বলে মামা আবার হাও মাও শুরু করলেন। আমি মামাকে থামতে বল্লাম, তাকে থামানো জরুরী হয়ে পড়েছে কেননা অল্প একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহর তলিয়ে একাকার হয়ে যায়, মামা যে হারে কান্না করছেন তাতে ঢাকা শহর ডুবতে বেশি সময় লাগার কথা না। মামাকে থামালাম। ঐ মেয়েকে ভুলে যেতে বল্লাম, তার জন্য আমরা এর চেয়ে সুন্দরী মেয়ে খুঁজে দেব বলে আশ্বাস ও দিলাম কিন্তু কে শোনে কার কথা ? মামা বাবুর্চি হয়ে বেচে থাকতে পারবে না। এই ঈদের রাতেই সে সুসাইড করবে। আমি যেন তাকে বাধা দেওয়ার কোন চেষটাই না করি বলে হুংকার ও দিলেন। মামা আমাকে একটু লাইনে রেখে কি যেন খোঁজা খুঁজি করলেন। আমি আগ্রহী হয়ে বল্লাম
-মামা কি খোজ ?
-পাইছি এই জিনিশটাই খুজতেছিলাম, তোর পাঞ্জাবির সাথে পড়ার জন্য যে ওরনার মত একটা কি জানি কিনেছিলিনা পহেলা বৈশাখে ?
- হ্যাঁ ওটার নাম উত্তরীয়।
-হ তোর উত্তরীয় টাই কাজে লাগাবো। শালার শিউলিকে দেখিয়ে দেব আমি কি পারি।
- মানে মামা তুমি কি করবে ? কচু গাছে ফাঁসি নেবে নাকি ? তার মানে লুকিং ফর দ্যা কচু বাগান??
- এই ঢাকায় কচু গাছ পাবো কোথায় ? কচু খেত গেলেও তো পাবে না। তাই কচু গাছে না আমি রান্না ঘরেই ফাঁসি নেব। আর ফাঁসি নেব শিউলির ঘরের দিকে মুখ করে। যাতে ও জানালা খুলেই আধা হাত লম্বা কার্পেটের মত জিহবা দেখে জ্ঞান হারায়। বলেই মামা ফোন রেখে দিলেন। আমার মাথায় ‘কার্পেটের মত জিহ্বা’ শব্দ তা ঢুকে গেল। এই শব্দটা আমি দিয়েছি বলে সন্টু মামা আমার সাথে কতবার যে রাগ করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। এইবার ঢাকায় গিয়ে আমার দেওয়া নাম ব্যাবহার করায় তার বীরুধে পাইরেসির অভিযোগ এনে বন্ধুদের নিয়ে বুফের বিল আদায় করে নেওয়া যায় কি না দেখে নিবো। আমি মামার নাম্বারে ‘ঈদ মোবারক’ লিখে একটা মেসেজ দিয়ে পারিবারিক আড্ডায় যোগ দিলাম।