ঈদের মার্কেট
বিডি.টুনসম্যাগ.কম ঈদের আর মাত্র ক'দিন বাকি আছে । অথচ এখনোও অফিস থেকে বেতন- বোনাস দেওয়ার কোনো নাম গন্ধও নেই। এদিকে বাড়িতেও শান্ত...
https://bd.toonsmag.com/2014/09/blog-post_97.html
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
আমরা শহরের একটি নাম করা শপিং কমপ্লেক্সে গেলাম। একটি শাড়ীর দোকানে বউয়ের জন্য বেশ কয়েকটি শাড়ী পছন্দ করলাম, কিন্তু আমার পছন্দে কি আসে যায়, বউয়ের
তো পছন্দ হওয়া লাগবে? ঐ দোকানের কোনো শাড়ীই বউয়ের পছন্দ হলো না। বের হয়ে অন্য দোকানে শাড়ী দেখতে থাকলাম। এইভাবে বেশকিছু দোকানে ঘুরেছি শাড়ী কেনার জন্য। কিন্তু বউয়ের কিছুতেই কিছু পছন্দ হচ্ছে না, বউ আমাকে মাঝে মাঝে ঝাড়ি দিয়ে শাড়ি পছন্দ করতে বলছে। আমিও তার হুকুম পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। হঠাত্ বসের ফোন! এখন মিথ্যা কথা বলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই বসকে বললাম,
ভাগ্যিস আমাদের কারোর শারীরিক কোনো ক্ষতি হয়নি, এজন্য প্রভুর কাছে শুকরিয়া। তবে একটা ভুল হয়ে গেছে, ওদের কাছে শোনাই তো হয়নি যে ওরা ব্যাংকের লোনটা শোধ করবে নাকি আমাকেই করতে হবে?
ঈদের আর মাত্র ক'দিন বাকি আছে। অথচ এখনোও অফিস থেকে বেতন-বোনাস দেওয়ার কোনো নাম গন্ধও নেই। এদিকে বাড়িতেও শান্তিতে থাকতে পারছি না। আমার একমাত্র আপন বৌয়ের লাগাতার 'মার্কেটে চল', 'গরু কিনো', বকবকানিতে কান ঝালাপালা করা নির্যাতনের কারনে। অফিসের বস রফিক সাহেবের ভাষ্য শুনে বুঝলাম এবারের বেতন বা ঈদ বোনাস ঈদের আগে পাওয়ার কোনো লক্ষনও দেখা যাচ্ছে না। তাই বৌয়ের হাত থেকে নিস্তার পেতে কি করা যায় ভাবছি।
আমার সহকর্মী সেলিম সাহেবকে তো দেখলাম বেতন-বোনাস না পাওয়ার সম্ভাবনা দেখে বৌ বাচ্চাদের জন্য ঈদ মার্কেট ও গরু কেনা বাবদ ব্যাংক থেকে লোন তুললেন। চিন্তা করছি আমিও কি তার দেখানো পথেই হাটবো? অবশ্য এবার দেখছি বেশ কিছু ব্যাংক পবিত্র ঈদ উপলক্ষে 'ঈদের মার্কেট ও গরু কেনা' খরচ নামে বিভিন্ন হারে মুনাফা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিমানের অর্থ লোন দিচ্ছে। এ কারনে তারা বেশ কিছুদিন দৈনিক পত্রিকায় ও টিভি চ্যানেলে ব্যাপক ভাবে ব্যাংক লোনের বিজ্ঞাপনও দিচ্ছে। তবে আইডিয়াটা মোটামুটি খারাপ না, আমাদের মতো যারা ঈদের সময়ে বিপদে পড়েছে তাদের জন্য বেশ ভালো উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংক গুলো। এজন্য ব্যাংক কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ দেওয়া যেতেই পারে, কারন এই স্বার্থপরের দুনিয়ায় কে কাকে টাকা ধার দেয় বলুন?
অবশেষে বউকে খুশি করার লক্ষে ঈদের মার্কেট বাবদ ৩০ হাজার টাকা ব্যাংক লোন নিয়েই নিলাম। বুঝতেই পারছেন বউ বলে কথা। ব্যাংককে ফেরত দিতে হবে ৩৫ হাজার টাকা। এটাই হলো ব্যাংকের গ্রাহক সেবা। লোন নেওয়া ৩০ হাজার টাকা নিয়ে অফিস কামাই করে বউকে নিয়ে গেলাম ঈদের মার্কেট করতে। যদি ঈদের মার্কেট করার কারনে অফিসে একদিনের ছুটি চাইতাম, তাহলে বসের ঝাড়ি ছাড়া অন্য কিছুই পেতাম না। তাই বসকে না জানিয়েই মার্কেটের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। আগামীকাল অফিসে গিয়ে বসকে বলবো একটু অসুস্থ্য ছিলাম, তাই আসতে পারিনি", ব্যাস ঝামেলা খতম।
আমরা শহরের একটি নাম করা শপিং কমপ্লেক্সে গেলাম। একটি শাড়ীর দোকানে বউয়ের জন্য বেশ কয়েকটি শাড়ী পছন্দ করলাম, কিন্তু আমার পছন্দে কি আসে যায়, বউয়ের
তো পছন্দ হওয়া লাগবে? ঐ দোকানের কোনো শাড়ীই বউয়ের পছন্দ হলো না। বের হয়ে অন্য দোকানে শাড়ী দেখতে থাকলাম। এইভাবে বেশকিছু দোকানে ঘুরেছি শাড়ী কেনার জন্য। কিন্তু বউয়ের কিছুতেই কিছু পছন্দ হচ্ছে না, বউ আমাকে মাঝে মাঝে ঝাড়ি দিয়ে শাড়ি পছন্দ করতে বলছে। আমিও তার হুকুম পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। হঠাত্ বসের ফোন! এখন মিথ্যা কথা বলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই বসকে বললাম,
-স্যার আমি খুবই অসুস্থ্য, অফিসে আসতে পারবো না। বস আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন- আরিফ সাহেব,
-আপনি যেখানে দাড়িয়ে আছেন তার থেকে চারটি দোকান পিছনে একটু তাকাবেন কি?
আমি তাকিয়ে দেখে হতোবাক হলাম, যে বস অফিসে একটি ফাইলও উচু করে দেখেন না, অথচ সে কিনা চার-পাঁচটা ব্যাগ হাতে দাড়িয়ে আছেন ! আমি বসের কাছে গিয়ে বললাম, স্যার আপনার হাতে ব্যাগ? দিন আমার কাছে।
তিনি বললেন, 'আস্তে কথা বলো, দোকানের ভিতরে তোমার বসেরও বস শাড়ী চয়েস করছে।' বুঝলাম বসেরও আমার মতো একই অবস্থা, তাই চলে এলাম আমার বাড়ির বস মানে বউয়ের কাছে। না বলে যাওয়ায় বরাদ্ধকৃত ঝাড়িটিও খেলাম। অতঃপর সন্ধ্যার কিছুক্ষন পর বউয়ের জন্য দুইটা শাড়ী, একটা আওয়ারা থ্রি- পিচ, বিভিন্ন মেকাপ সামগ্রী কেনা শেষ হলো।
-আপনি যেখানে দাড়িয়ে আছেন তার থেকে চারটি দোকান পিছনে একটু তাকাবেন কি?
আমি তাকিয়ে দেখে হতোবাক হলাম, যে বস অফিসে একটি ফাইলও উচু করে দেখেন না, অথচ সে কিনা চার-পাঁচটা ব্যাগ হাতে দাড়িয়ে আছেন ! আমি বসের কাছে গিয়ে বললাম, স্যার আপনার হাতে ব্যাগ? দিন আমার কাছে।
তিনি বললেন, 'আস্তে কথা বলো, দোকানের ভিতরে তোমার বসেরও বস শাড়ী চয়েস করছে।' বুঝলাম বসেরও আমার মতো একই অবস্থা, তাই চলে এলাম আমার বাড়ির বস মানে বউয়ের কাছে। না বলে যাওয়ায় বরাদ্ধকৃত ঝাড়িটিও খেলাম। অতঃপর সন্ধ্যার কিছুক্ষন পর বউয়ের জন্য দুইটা শাড়ী, একটা আওয়ারা থ্রি- পিচ, বিভিন্ন মেকাপ সামগ্রী কেনা শেষ হলো।
সারাদিনের মার্কেট করা ব্যাগ আমার হাতে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ট্যাক্সি ক্যাব থেকে নেমে আমরা রিক্সায় উঠে বাড়ির পথে যাচ্ছি। হঠাত্ যখন রিক্সাটি একটি অন্ধকার জায়গা অতিক্রম করছে, এমন সময় মুখে কালো কাপড় বাধা চার-পাঁচ জন লোক এসে আমাদের রিক্সা থামিয়ে দাড়ালো। তারা নিজেদের মোবাইলের আলো দিয়ে দেখালো তাদের হাতে থাকা চকচক করা চাকু আর কালো রংয়ের পিস্তল। রিক্সা চালক এবং আমাদের দু'জনের ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তাদের একজন বলল, বাঁচতে চাইলে কোনো শব্দ করবেন না, চুপ করে বসে থাকুন আর যা যা আছে দিয়ে দিন। কি আর করা, শপিংএর চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি, তাই আমাদের শপিং, যে টাকা ছিলো, আমার মোবাইল, ঘড়ি, বউয়ের স্বর্ণ+ইমিটেশনের সব গয়না এমনকি আমার প্রিয় জেল পেনটিও ওরা নিয়ে গেল। মাত্র একশো টাকা ফেরত দিয়ে গেল রিক্সার ভাড়া বাবদ। তবুও ভালো যে এই কথা তো বলেনি যে "বাঁচতে চাইলে মরে যান"।
ভাগ্যিস আমাদের কারোর শারীরিক কোনো ক্ষতি হয়নি, এজন্য প্রভুর কাছে শুকরিয়া। তবে একটা ভুল হয়ে গেছে, ওদের কাছে শোনাই তো হয়নি যে ওরা ব্যাংকের লোনটা শোধ করবে নাকি আমাকেই করতে হবে?