শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের বিখ্যাত ছবি দ্যা স্ট্রাগ বিডি.টুনসম্যাগ.কম শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্...
https://bd.toonsmag.com/2014/08/blog-post_12.html
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের বিখ্যাত ছবি দ্যা স্ট্রাগ |
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শিল্পকলায় অবদানের জন্য তাঁর জীবদ্দশায় তিনি পেয়েছেন শিল্পাচার্য খেতাব। ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পুলিশের দারোগা। মা জয়নাবুন্নেছা গৃহিনী। নয় ভাইবোনের মধ্যে জয়নুল আবেদিন ছিলেন সবার বড়। পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারের কাছ থেকেই। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকা পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফলসহ আরও কত কি এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। ১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখার বাদ দিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন।
তাঁর মা জয়নুল আবেদিন আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার তখন আর্ট স্কুলে ভর্তি করান। পরবর্তীতে ছেলে জয়নুল আবেদিনও মায়ের সেই ভালবাসার ঋণ শোধ করেছেন দেশের স্বনামধন্য শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে। জয়নুল আবেদিন ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে পড়েন। ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।
এই শিল্পী ১৯৪২-৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের করুণ ছবি এঁকে আমাদের অন্তর আত্নাকে নাড়া দিয়েছেন। যে ছবি গুলোর মাধ্যমে আজো আমরা সেই দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা ও বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করতে পারি । শুধু দুর্ভিক্ষের ছবি নয়, তার আঁকা প্রতিটি ছবিই একেকটি সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বাস্তব অবস্থাকে আমাদের চোখের সামন্যে তুলে ধরে। বাংলা ১৩৪৯ সালের দুর্ভিক্ষের সময় রাস্তায় পড়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষের ছবি ও স্কেচে জয়নুলের ক্যানভাস জীবন্ত হয়ে উঠে। এ ছবি একেঁই মানবতাবাদী এই শিল্পীর খ্যাতি ও সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
চিত্রশিল্পও যে কোন প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি বা প্রতিরোধের হাতিয়ার অথবা অধিকার-সাম্য-স্বাধীনতার ভাষা হতে পারে তা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন আমাদের দেখিয়েছেন। শিল্পীর তুলিতে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপকতা কতটা বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে জ্যান্তরূপে আবির্ভূত হতে পারে, তা জয়নুলের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিগুলো না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।“ ১৯৭০ সালে জয়নুল এঁকেছিলেন দীর্ঘ এক ছবি,নবান্ন"। এ ছবি গ্রাম বাংলার জীবনের প্রতিচ্ছবি।
দেশের দক্ষিণে উপকূলবর্তী চর ‘মনপুরা’; যা শান্ত, সবুজ এক বনানী। ১৯৭০ সালের প্রলংয়করী ঘূর্ণিঝড় এ দ্বীপে আঘাত হানে। লক্ষাধিক লোকা মারা যায় সে ঝড়ের তাণ্ডবে। জয়নুল সেই ধ্বংসলীলার ছবি একেছিলেন - ’মনপুরা ৭০’। তুলির আচড়ে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন প্রকৃতির সেই নির্মম আচরন। প্রচণ্ড ঢেউয়ের দাপটে তীরে উঠে আসা মৃত গবাদিপশু, নারী-পুরুষ, শিশুর মিছিল। এ যেন সেলুলয়েডের ফিতায় বন্দী শ্বাসরুদ্ধকর মুহর্ত। প্রকৃতির তাণ্ডবে বেঁচে যাওয়া এক মানুষ হাঁটুমুড়ে বসে আছে-জীবন্মৃত, অসাড়। এ ছবি প্রকৃতির এক নির্মম, নিষ্ঠুর ইতিহাস।
জয়নুল আবেদীন ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমীর সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি এখানে কাজ করেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর অন্যতম উপদেষ্টা মনোনীত হন। একই বছর জয়নুল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ১৯৭৬ সালের ২৮ মে মৃত্যুবরণ করেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত চারুকলা অনুষদের পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।