আইসক্রিমের বাক্সে বন্দী শৈশবের আনন্দ

রফিকুল ইসলাম সাগর  বিডি.টুনসম্যাগ.কম স্মৃতির পাতায় থাকা দিন। কারা কারা উপভোগ করেছি এই দিনগুলো? তাদের শৈশব ছিল অনেক মধুর..!! এখনো গ্রামে বেড...


রফিকুল ইসলাম সাগর 
বিডি.টুনসম্যাগ.কম

স্মৃতির পাতায় থাকা দিন। কারা কারা উপভোগ করেছি এই দিনগুলো? তাদের শৈশব ছিল অনেক মধুর..!! এখনো গ্রামে বেড়াতে গেলে ছবির এসব আইসক্রিমওয়ালা বাড়ির সামনে টিং টিং ঘন্টি বাজালে ফিরে যাই হারানো সেই শৈশবে! এছাড়া বিক্রেতা ঘন্টি বাজানোর পাশাপাশি তার আইসক্রিমের বাক্সের ঢাকনা খোলা লাগানোর মাঝে একধরনের শব্দ করে ক্রেতাদের তার আগমনের জানান দেন। তখন আইসক্রিমওয়ালাকে ডেকে বাড়ির সবার মাথা গুনে গুনে হিসাব করে আইসক্রিম কেনার পরেও দেখা যায় আরও অতিরিক্ত দু'চারজন ভাগ বসাতে হাজির হয়। একবার খাওয়ার পর সবার আবার খাওয়ার আবদার চলে। আশেপাশের শিশুরা খবর পেয়ে একে একে ছুটে এসে বলে, আমাকেও আইসক্রিম কিনে দেন। সবাইকে আইসক্রিম কিনে দেওয়ার মাঝে আমিও এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করি। এই সস্তা আইসক্রিম খাওয়ার মাঝে যে আনন্দ পাই, হাজার টাকা দামের সুস্বাদু আইসক্রিমেও তা যেন পাই না। যদিও এখন শহরের বাবা-মায়েরা নোংরা পেট খারাপ করবে বলে তাদের বাচ্চাদের এসব সস্তা আইসক্রিম কিনে দিতে চায় না। এখন অবশ্য সর্বত্রই ভেজালে সয়লাব। আমাদের বাবা-মা এসব চিন্তা করতেন না। 

শৈশবে এরকম আইসক্রিমওয়ালার কাছ থেকে আটানায় লাল আইসক্রিম, ১ টাকায় নারকেলি আইসক্রিম যাতে নারকেলে ছিল ভরপুর, ২ টাকায় বড় সাইজের 'বোম্বাই' আইসক্রিম কিনে খেতাম। আইসক্রিম খাওয়ার এই ১ টাকা, ২ টাকা আদায়ের জন্য মায়ের পিছনে পিছনে কত যে ঘুর ঘুর করেছি। আর এখনকার প্রজন্ম কিছু চাওয়ার আগেই বাবা-মা সবকিছু হাজির করে দেন। বায়না ধরে আমাদের এই ১ টাকা ২ টাকা আদায় করার সুখ এখনকার প্রজন্ম উপলব্ধি করতে পারবে না। এখনকার বাচ্চারা ক্ষণে ক্ষণে বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দোকানে গিয়ে মজা কিনে নিয়ে আসে। আর আমি দিনে একবারই টাকা পেতাম। ১ টাকা বা সর্বোচ্চ ২ টাকা। এখনকার সময়ের বাচ্চারা এই বাক্সে বন্দী আইসক্রিম কিনে খেলেও আমাদের সময়কার অনুভূতি ছিল আলাদা। 

এখন নারকেলি আইসক্রিম পাঁচ টাকা, দশ টাকায় পাওয়া গেলেও নারকেল থাকে নামে মাত্র। তবে 'বোম্বাই' আইসক্রিম দেখিনা। এই আইসক্রিমটির প্রতি আমার অন্যরকম আকর্ষণ ছিল। গ্রামে বা শহরের বস্তি এলাকায় বাক্সে করে এসব আইসক্রিমওয়ালাদের কাঠের বাক্সের ঢাকনা উঁচিয়ে শব্দ করে শিশুদের জড়ো করার কৌশল দেখলে শৈশবের স্মৃতি গুলো মনে পড়ে যায়। সেই শব্দ শুনে আমিও যেন শিশু রুপে এগিয়ে যাই আইসক্রিম খেতে। 

কিছুদিন আগে ময়মনসিংহের একটি গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম সেখানে তেঁতুল আইসক্রিম প্রতি পিছ ৩ টাকা, নারকেলি আইসক্রিম ৫ টাকা, আরেকটি লোভনীয় অফারের অরেঞ্জ আইসক্রিম ৫ টাকা পিছ। যার ভেতরে ১,২ ও ৫ টাকার কয়েন থাকে। চুষতে চুষতে আইসক্রিম শেষ করার পর যার ভাগ্যে যা পড়ে। বাড়ির বুড়ো থেকে শিশু সবাই দলবেঁধে আইসক্রিম খেয়েছিলাম। এতো গুলো আইসক্রিম একসাথে বিক্রি করতে পেরে আইসক্রিমওয়ালা হয়েছিল ভিশন খুশি। খুশি হয়ে ক'টা আইসক্রিম ফ্রিতেও দিয়েছিলেন। যদিও আমি পরে সেগুলোর টাকাও দিয়ে দিয়েছিলাম। তিনি মনে হয় এখনো অপেক্ষায় আছেন আবার কবে একসাথে এতো গুলো মানুষ বেড়াতে আসবে। আমরা যারা সামর্থ্যবান শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে যাই এরকম একজন আইসক্রিমওয়ালা দিনে যে পরিমাণ আইসক্রিম নিয়ে বের হোন বিক্রি করার আশায়। তার সব আইসক্রিম কিনে নিলেও আমাদের কাছে টাকার পরিমাণটা খুব স্বল্প। একটা চকবার আইসক্রিমের দামে তাদের কাছ থেকে ৬টা নারকেলি আইসক্রিম কেনা যায়। আইসক্রিম বিক্রির এই স্বল্প টাকায় তার পুরো সংসার চলে। তার পরিবার অপেক্ষায় থাকে কখন আইসক্রিম বিক্রি শেষ করে বাড়িতে বাজার নিয়ে ফিরবে। 

এই বিভাগে আরো আছে

গল্প 7236046014100373110

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সঙ্গে থাকুন

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক

বৈশিষ্ট্যযুক্ত

বিশ্বসেরা ১০ কার্টুনিস্ট

শিল্পী রফিকুননবী সাধারণ মানুষের কাছে যতটা না তার ফাইন আর্টসের জন্য পরিচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় তার ‘টোকাই’ কার্টুন চরিত্রের জন্য। এ ...

-

  • ফেসবুকে অনুসরণ করুন

    আঁকা-আঁকি আহ্ববান

    আপনার আঁকা, মজার মজার লেখা, ছবি আঁকার কলা-কৌশল, শিল্পীর জীবনী, প্রবন্ধ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অথবা প্রদর্শনীর সংবাদ টুনস ম্যাগে ছাপাতে চাইলে পাঠিয়ে দিন। আমাদের ইমেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়।

    সহায়তা করুন

    item