এক টাকা নিয়ে একদিন মজার ঘটনা
রফিকুল ইসলাম সাগর বিডি.টুনসম্যাগ.কম যতদূর মনে পড়ে সম্ভবত ১৯৯৬ সালের ঘটনা। যে স্মৃতি এখন মনে পড়লে লজ্জাও লাগে আবার হাসিও পায়। স্কুলে যাওয়...
https://bd.toonsmag.com/2024/09/2201.html
রফিকুল ইসলাম সাগর
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
যতদূর মনে পড়ে সম্ভবত ১৯৯৬ সালের ঘটনা। যে স্মৃতি এখন মনে পড়লে লজ্জাও লাগে আবার হাসিও পায়। স্কুলে যাওয়ার সময় প্রতিদিন আম্মা আমাকে এক টাকা করে দিতেন। সেদিন স্কুল বন্ধ ছিল। সকাল-দুপুর পেরিয়ে বিকেল বেলা এসে আম্মার কাছে বায়না ধরলাম আমাকে এক টাকা দাও। আম্মা বললেন, খুচরো টাকা নেই। কাল স্কুলে যাওয়ার সময় একসাথে দুই টাকা নিয়ে যাস।
কে শোনে আম্মার কথা। আমি নাছোড়বান্দা! এক টাকা দেওয়াই লাগবে এখন।
দাওনা আম্মা, কত টাকার নোট দাও আমি এক টাকার কিছু খেয়ে বাকি টাকা ভাংতি করে এনে তোমার হাতে দিব। এভাবে বায়না করতেই থাকলাম। আম্মা বললেন, তুমি যে কত দিবা আমার তোমাকে চেনা আছে।
আমি বললাম, সত্যি আজকে ফেরত দিব। নাহলে আর কোনদিন দিও না। শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে আম্মা আমাকে দুই টাকার নোট দিয়ে বললেন, এক টাকা ফেরত এনে না দিলে আজকে তোর খবর আছে।
আমি খুশি মনে দুই টাকার নোট হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বায়না ধরে টাকা তো নিয়ে এলাম। এখন কী খাব? সেটা নির্ধারণ করতে পারছিলাম না। হটাৎ সামনে পড়লো বাদামওয়ালা। এক টাকার তাহলে বাদাম কেনা যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। বাদাম বিক্রেতাকে বললাম এক টাকার বাদাম দিতে। তিনি বাদাম দিলেন। আমি তাকে দুই টাকার নোট দিয়ে এক টাকা ফেরত দিতে বললাম। এখন ঝামেলা হলো তার কাছে এক টাকা খুচরো নেই। বলল একটু দাঁড়াও খুচরো হলেই তোমাকে দিচ্ছি। ততক্ষণে আমি খোসা ছাড়িয়ে বাদাম খাওয়া শুরু করলাম। দশ পনের মিনিট হয়ে গেল খুচরো এক টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। বাদাম বিক্রেতা আমাকে বলে, আরো এক টাকার বাদাম দিয়ে দেই। খুচরো তো হচ্ছে না। আমি বললাম, না এক টাকা আম্মাকে ফেরত দিতে হবে। নয়তো আমাকে মারবে।
এরমধ্যে আমার চেয়ে একটু বড় বয়সের একটি ছেলে বাদাম কিনতে এলো। সেও এক টাকার বাদাম কিনে দুই টাকার নোট দিলো। বাদামওয়ালার কাছে তো এক টাকার নোট নেই। এদিকে আমার বাদাম খাওয়াও শেষ। এখন এক টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। বাদাম বিক্রেতা চালাকি করে দুই টাকার একটি নোট আমাকে আর ওই ছেলেকে দিয়ে বলল, তোমরা এটা খুচরো করে দু'জন এক টাকা করে নিয়ে নাও। ওই ছেলের হাতে সেই দুই টাকার নোট। আমি তার সাথে সাথে ঘুরছি। বেশ কয়েকটি দোকানে দুইটা এক টাকা হবে কিনা জিজ্ঞেস করলাম আমরা কিন্তু কোনো দোকানি খুচরো দিচ্ছে না। ঘুরতে ঘুরতে আমার আর ধৈর্যে কুলালো না, বিরক্ত হয়ে গেলাম। ওই ছেলেটাও আমাকে বারবার তাগাদা দিচ্ছিল, তুমি এক টাকার কিছু কিনবা কিনবা করে। শেষ পর্যন্ত বাজার ঘুরে আমার ভাগের এক টাকা দিয়ে আমি নারকেলি কিনলাম। নারকেলি বিক্রেতাকে দুই টাকার নোট দিয়ে ওই ছেলে তার ভাগের এক টাকা নিয়ে চলে গেল।
নারকেলি খাওয়া শেষে আম্মাকে কী জবাব দিব? বাসায় গেলেই তো এক টাকা ফেরত চাইবে! এসব ভাবতে ভাবতে আবার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে শুরু করলাম। এই ভেবে যে দেরিতে বাসায় গেলে আম্মা সব ভুলে যাবে। কিন্তু বাসায় গিয়ে আর রক্ষা হলো না। আম্মার সামনে পড়তেই এক টাকা ফেরত চাইলেন। আমি তাকে ঘটনা বললাম। এবং বলি, কাল স্কুলে যাওয়ার সময় আমাকে আর এক টাকা দেওয়া লাগবে না, কাটাকাটি।
আম্মা রেগে গিয়ে বললেন, আমি যখন বলেছিলাম কাল একসাথে দুই টাকা নিস। তখন আমার কথা শুনিস নি। আমাকে একটু শান্তি দিস নি। তোর টাকা এখনি লাগবে। এখন আমি কিছু শুনব না। আমাকে এক টাকা ফেরত দেওয়া লাগবে।
এরপর এক টাকার জন্য চরম উত্তম মাধ্যম হজম করে মান অভিমান করে রাতের খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় ঠিকই আম্মা আবার এক টাকা দিলেন আর সব অভিমান ভুলে গেলাম।