ওয়াল্ট ডিজনী: শৈশব সাজানোর জাদুকর
![](https://img2.blogblog.com/img/icon18_edit_allbkg.gif)
https://bd.toonsmag.com/2019/09/blog-post.html
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiy-PRntm3AKFHmsGDc6dV05ZK0k1X8wm5UgJTUxK17Dq-B2cPrpNZGYwCznKRVP0UyoJyixrIqPRB9zUTCpSvhk8zzT76OaD9MqyD1y4ZhW3N6aFAI0C-B8FEL4djAEvQrPQGOUhGqoyk/s640/independent.co.uk.jpg)
পৃথিবীতে এরকম কোনো শিশু খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে যে কি না টিভি দেখে থাকলেও, ‘মিকি মাউস’ নামের সদা বিনোদনমূলক ও চিত্তাকর্ষক ইঁদুরটির যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে একবারের জন্যও একে দেখেনি। মিকি ছিল আমাদের শৈশবে ‘ওয়াল্ট ডিজনী’ নামের দূরদর্শী কার্টুনিস্ট এর প্রভাব বিস্তার করার সবচেয়ে সহজ ও সাধারণ পন্থা; আর সেই প্রভাব প্রতিটি শিশুর শৈশবে শুরু হলেও আজীবন তার রেশ থেকেই গেছে কারণ তিনি বিভিন্ন উপায়ে আমাদের জীবনের সাথে জুড়ে রয়েছেন। ৩০ বা ৪০ বা তার চেয়েও বেশি বয়সী মানুষ যারা মিকি মাউসকে চিনে, তারা জীবনের সবচেয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সময়েও যদি মিকির চেহারাটা একবার দেখে তাহলে সামান্য না হেসে থাকতে পারবে না- বলাটা মোটেই বাড়িয়ে বলা হবেনা।
কিন্তু মিকি কীভাবে আমাদের জীবনে প্রবেশ করল বা কীভাবে তার জন্ম জন্ম হল, অথবা কীভাবে ওয়াল্ট ডিজনী’র তৈরি যে জগতের সাথে আমরা পরিচিত তা তৈরি হল- এসম্পর্কে আমরা কতটুকুই বা জানি? তবে ‘সেভিং মি. ব্যাংকস’ নামক চলচ্চিত্রের কল্যাণে এটা বলা যায় যে অনেকেই অন্তত এটুকু জানে যে ডিজনী অনেক প্রতিভার অধিকারী হলেও বাস্তব সম্মত ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি মোটেও দক্ষ ছিলেন না। আর একারণেই তার স্বপ্নের রূপকথার জগৎটিকে বেশ কয়েকবার আর্থিক দুর্দশার সম্মুক্ষীণ হতে হয়েছে।
প্রতিভার বহি:প্রকাশ ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ওয়াল্টার এলিয়াস ডিজনী ১৯০১ সালের ডিসেম্বর এর ৫ তারিখে ইলিনয় এর শিকাগো’তে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৯৬৬ সালের ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে ক্যালিফোর্নিয়া’র লস অ্যাঞ্জেলস্ এ মৃত্যুবরণ করেন। বাবা-মায়ের চতুর্থ পুত্র সন্তান ছিলেন ওয়াল্ট। তার বাবা এলিয়াস ডিজনী ছিলেন একাধারে একজন কাঠমিস্ত্রী, কৃষক ও ভবন নির্মাতা। আর তার মা ফ্লোরা কল ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। ওয়াল্টের অনেক বেশি ছোট্টবেলায় তার পরিবার শিকাগো ছেড়ে মিসৌরি’র মার্সেলিন নামক একটি গতানুগতিক মিডওয়েস্টার্ন ছোট্ট শহরের একটি খামার বাড়িতে চলে যায়। এই শহরটির অনুকরণেই ডিজনীল্যাণ্ডের মেইন স্ট্রিট, ইউএসএ নির্মাণ করা হয়েছে বলে বলা হয়ে থাকে। এখানেই স্কুলে পড়ার পাশাপাশি ওয়াল্ট প্রথমবারের মত ক্রেয়ন ও জলরঙ দিয়ে ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন।![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhHkZcSyxrcjp-G0QNLLzLyR-vA_pvTg-9vXl-nyCOGxn7NTOmFdr1TfGaQy8Obn2Y543TTpRUEhQ_0Iui7Rm1xvvaJMobkiLwGrF_Q7IK433dFHRbR-_w-bLYdud4xa7GGf9MXhOKcY1M/s640/abc7news.com.jpg)
চঞ্চল, অস্থির ব্যক্তিত্বের ধারাটি বাবার থেকেই ওয়াল্টের মাঝে সংক্রমিত হয়েছিল। মার্সেলিনে বসবাস করতে শুরু করার অল্প দিনের মধ্যেই পরিবারটি আবারো স্থান পরিবর্তন করে। এবারের গন্তব্য ছিল কানসাস সিটি যেখানে তার বাবা একটি প্রাত্যষিক দৈনিক পত্রিকার সরবরাহ স্বত্ব কিনে নেন এবং এই সরবরাহের কাজে পুত্ররাই বাবাকে সহযোগিতা করেছিল। এখানেই একটি কোরেসপণ্ডেন্স স্কুলের সাথে ওয়াল্ট কার্টুন আঁকা বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি ‘কানসাস সিটি আর্ট ইন্সটিটিউট ও স্কুল অফ ডিজাইন’ এ পড়ালেখা করেন। ১৯১৭ সালে তার পরিবার আবারও শিকাগোতে ফিরে যায়। আর ওয়াল্ট এখানে ম্যাক্কিনলী স্কুলে পড়ালেখা করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি ছবি তুলতেন, স্কুলের ম্যাগাজিনের জন্য ছবি আঁকতেন এবং কার্টুন আঁকাও শিখতেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি একজন কার্টুনিস্ট হতে চেয়েছিলেন। আর শুরুটা হয় একটি সংবাদপত্রে যোগদানের মাধ্যমে। কিন্তু প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হলে তার পরিকল্পনায় ছেদ পরে। এই যুদ্ধে তিনি আমেরিকান রেড ক্রসের জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে ফ্রান্স ও জার্মানিতে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯১৯ সালে তিনি কানসাস সিটিতে ফিরে আসেন। এখানকার বাণিজ্যিক স্টুডিওতে তিনি খণ্ডকালীন খসরা তৈরি ও অন্যান্য ছোটখাটো লেখালেখির কাজে যোগদান করেন। এখানেই উব আইওয়ার্কস এর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটে। আইওয়ার্কস, তার জীবনের একদম প্রথম পর্যায়ের সাফল্যের সময় থেকেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
কিংবদন্তীর যাত্রার আরম্ভ
ওয়াল্ট ডিজনী’র মত একজন দূরদর্শী শিল্পী যে অল্পতে খুশি থাকতে পারবেন না, তা বলাই বাহুল্য। তাই তো কর্মজীবনের শুরুতে তাকে যে কাজ করতে হয়েছিল তা ছেড়ে, আইওয়ার্কস কে সাথে নিয়ে ১৯২২ সালে তিনি নিজের মত করে কাজ করতে শুরু করেন। তারা দুইজনে মিলে একটি সেকেণ্ড হ্যাণ্ড ক্যামেরা যোগাড় করে তা দিয়ে ২-মিনিট দৈর্ঘ্যের অ্যানিমেটেড বিজ্ঞাপণ তৈরি করেন এবং তা চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহে তথা সিনেমা হলে চালানোর জন্য বিক্রি করেন। আইনত একটি দলীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ার চুক্তি সাক্ষরের জন্য প্রয়োজনীয় নুন্যতম বয়স হওয়ার পূর্বেই ওয়াল্ট তার কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে কিছু পুঁজির ব্যবস্থা করে, কানসাস সিটিতে ‘লাফ-ও-গ্রাম’ নামে একটি স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। এই স্টুডিও তে রূপকথার গল্পের ওপর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হত। এই স্টুডিওর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল ‘অ্যালিস ইন কার্টুনল্যাণ্ড’ নামে ৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের, রূপকথার গল্পের ধারাবাহিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ যেখানে গতিশীল চরিত্র ও অ্যানিমেশন- উভয় ধরনের কাজেরই ব্যবহার করা হয়েছিল।![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj6myycxSGDVVX7F-7k8e9T9h2pfL7JvfIEYif6DAcxoKFsRBwTClZj9cX7A240ibyRJmXAhvk6wpVVsQOXnagzMFjX7_He3o3kEHfd1CoWC68s8b5TfzVXLvK46aLhIs7ub7raqXSeMvU/s640/rd.com.jpg)
কিন্তু তার বাস্তব সম্মত ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার অভাবে তিনি ও তার সাথীরা নিউ ইয়র্কের একজন ঠকবাজ সরবরাহকারীর প্রতারণার শিকার হন এবং এর ফলে তাদের প্রতিষ্ঠানটি ১৯২৩ সালে অর্থনৈতিকভাবে পরিচালনা করতে অসমর্থ হয় পরে। এই ঘটনার পরে, ২১ বছর বয়সে ওয়াল্ট ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে যান এবং সেখানে সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। এখানে তিনি তার নির্মিত অ্যালিস শীর্ষক প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। এই ঘটনাটিই তার কর্মজীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং এবারে ভাই রয়’কে সাথে নিয়ে তিনি হলিউডে তার প্রতিষ্ঠানটি পুণরায় চালু করেন। রয় চিরদিনের জন্যই তার ব্যবসায়ের সাথী ছিলেন এবং শুধুমাত্র সৃজনশীলতা বা দূরদর্শীতা যখন ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট ছিলনা, এরকম বেশ কিছু সময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন। আইওয়ার্কসও তার সাথে ছিলেন। তিনি আঁকার বিষয়টির তদারকি করতেন। তারা একত্রে ‘ওসওয়াল্ড দ্য লাকি রেবিট’ নামে একটি নতুন চরিত্রকে উপস্থাপন করেন। এবারে প্রতিটি চলচ্চিত্র ১,৫০০ মার্কিন ডলারে সরবরাহ করার জন্য চুক্তি করা হয়।
মিকি, ডোনাল্ড ও অন্যান্যদের আগমন
চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন- শব্দের ব্যবহারের সময়টি এই জগতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায়। কিন্তু এই পরিবর্তনেরও অনেক পূর্বে ডিজনী ও আইওয়ার্কস ১৯২৭ সালে আরও একটি নতুন চরিত্র নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেন। ‘মিকি’ নামের এক সদা চঞ্চল, হাসিখুশি ও স্বকীয় একটি ইঁদুর। মিকি শুরু থেকেই গোটা পৃথিবীর মানুষের মন জয় করতে থাকে এবং এখনও করে যাচ্ছে। ওয়াল্ট ডিজনী ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে যথেষ্ট পারদর্শী না হলেও নি:সন্দেহে একজন দূরদর্শী কাটুনিস্ট ছিলেন। আর একারণেই চলচ্চিত্রে শব্দ ও সংগীতের প্রয়োগে কী ধরনের পরিবর্তন ও সাফল্য তথা বিপ্লব ঘটতে পারে এটা আন্দাজ করেই ১৯২৮ সালে তিনি মিকি মাউস কে নিয়ে তিন নম্বর চলচ্চিত্রটি তৈরি করেন। ‘স্টীমবোট উইলি’ নামের এই চলচ্চিত্রটি শুরু থেকেই ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। মিকি ও তার বান্ধবী মিনি- কথা বলার ক্ষমতা, বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা ও মানুষের মত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে খুব দ্রুত দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ডিজনী নিজে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত মিকি’র কণ্ঠশিল্পীর ভূমিকা পালন করেন।![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEijhUURB14tfUrHHVWBFQcV_QfAFRJ8a85BlGY55mvgAfjbP0wOxOYjveBWQapUloxkEBxzEWUdFL6B6DWLbY8VJhJHnJhRbogHLRH-cyVTQjcEIKI52wPFVoTRSrLyAd5Xx2AArqUy4sI/s640/entrepreneur.com.jpg)
মিকির মাধ্যমে ব্যাপক সাফল্য লাভের পরেই ডিজনী ‘ডোনাল্ড ডাক’ এবং ‘প্লুটো’ ও ‘গুফি’ নামক দুইটি কুকুরের চরিত্রকে উপস্থাপন করেন। ১৯৩৩ সালের দেশজুড়ে বিরাজকৃত অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে তিনি ‘থ্রি লিটল্ পিগস্’ নামক একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এই চলচ্চিত্রের বিখ্যাত সংগীত ‘হু’জ অ্যাফ্রেইড অফ দ্য বিগ ব্যাড উল্ফ?’ সে দুর্দশার সময়ে মানুষের মাঝে আশাবাদ জাগিয়ে রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ৩০ এর দশককেই ডিজনী তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও শ্রমসাধ্য কাজের জন্য বেছে নেন, আর নিজের সমস্ত সময় ও শ্রম এর পিছনে ব্যয় করেন। তার এই প্রচেষ্টা তার প্রতিষ্ঠানের জন্য জাদুর মতই কাজ করেছিল কারণ, সেই মন্দার সময়েও তার প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিকভাবে লাভবান ছিল।
এই সময়ে তার প্রতিষ্ঠানে এক ঝাঁক তরুণ কার্টুনিস্টকে নিয়োগ দেয়। এই তরুণ দলের তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বে ছিলেন আইওয়ার্কস। ১৯৩২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিলি সিম্ফনিজ ধারাবাহিকের ‘ফ্লাওয়ার্স এণ্ড ট্রিজ’ নামক অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রে এই সময়ে রঙের ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে মিকি মাউস ও ডোনাল্ড ডাক এর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে রয় এই দুইটি চরিত্রকে নিয়ে, বিক্রির উদ্দ্যেশ্যে হাতঘড়ি, পুতুল, শার্ট ও টপ এর মত বিভিন্ন মার্চেণ্ডাইজ তৈরি করেন। ডিজনী’র প্রতিষ্ঠান এই সময়ে ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট সফল সময় পার করছিল। ১৯৩৪ সালে শুরু হওয়া ও ১৯৩৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘স্নো হোয়াইট এণ্ড দ্য সেভেন ডওয়ার্ফস’ ছিল এই প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বিশাল ব্যপ্তির কাজ যা সম্পন্ন করতে যথেষ্ট পরিমাণ দক্ষ পরিচালনা ও মানব সম্পদের প্রয়োজন ছিল। সময়ের সাথে সাথে ডিজনী স্টুডিও আরও বহুসংখ্যক বিনোদনমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যেখানে অ্যানিমেশনের পাশাপাশি বাস্তবের অভিনেতাদের নিয়েও কাজ করা হয়। রূপকথার পাশাপাশি অন্যান্য ঘরনার চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হয়।
ডিজনীল্যাণ্ড
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjjCDXDHGlCEhlCNAsgbAeRonYtrWWf5-mYyOfT0DWkpTmwFIBE4RqVV1sXXUGBrG5MizcN0sBp4bmoLEPn_Et7lVvJqN9LY_IwE83wz83nh7frBTw0hgjuV9Gi1WdEDn2paXwDrvM5o0s/s640/disneyparks.disney.go.com.jpg)
সব বয়সের নারী-পুরুষের স্বপ্নের রূপকথার জগৎ ‘ডিজনীল্যাণ্ড’ এর নকশা ও নির্মাণশৈলীর মাঝে ওয়াল্ট ডিজনীর ব্যক্তিগত জীবনের স্মৃতিবিজড়িত আবেগ ও কল্পনার বহি:প্রকাশ প্রত্যক্ষভাবেই নজরে পরে। ১৯৫০ সাল থেকে ডিজনী নিজেই এর পরিকল্পনা করেছিলেন। আর এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ১৯৫৫ সালে। লস অ্যাঞ্জেলস্ এর নিকটে অবস্থিত বিশাল আকারের এই বিনোদন কেন্দ্রটি বিশ্বজুরে সকল মানুষের কাছেই অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পর্যটন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। ডিজনী’র মৃত্যুকালে ফ্লোরিডা’র ওরল্যাণ্ডো’র নিকটে একই রকম দ্বিতীয় পার্কের নির্মাণ কাজ চলছিল যা ১৯৭১ সালে চালু করা হয়।
ওয়াল্ট ডিজনী কখনই একজন ব্যবসায়ী হতে আগ্রহী ছিলেন না, তার জীবনের মূল লক্ষ্যই ছিল কার্টুন নির্মাণ করা। নিজের পুরো জীবন জুরেই তিনি এরকম সব চরিত্র নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। আর সেসকল চরিত্রই পৃথিবীর সকল দেশের সকল বয়সের মানুষের কাছেই সমানভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এটা সম্ভব হয়েছিল শুধুমাত্র ডিজনীর ব্যতিক্রমী হাস্যরসবোধ ও সদাতরুণ মনমানসিকতার জন্য; জীবনের কোনো দু:সময়ে তিনি কখনই স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেননি। তার মৃত্যুর পরেও, যুগের পর যুগ ধরে, বিভিন্ন বয়সী মানুষের জীবনে ডিজনীল্যাণ্ডের প্রভাব কেমন হতে পারে তা তিনি অনেক আগেই আন্দাজ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এটা সত্যি যে তিনি জীবনে অনেক সময়ই আর্থিক সমস্যার সম্মুক্ষীণ হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কখনই তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা ছাড়েননি। আর এর মাঝেই নিহিত রয়েছে বেঁচে থাকার সত্যিকার অর্থ।