কাজী তাবাসসুম আহমেদ-এর সাক্ষাৎকার
https://bd.toonsmag.com/2019/12/kazi-tabassum-ahmed.html
কাজী তাবাসসুম আহমেদ |
তাবাসসুম: আমি কাজী তাবাসসুম আহমেদ ।
আমার জন্ম কুমিল্লা শহরে, ১৯৯৮ সালে। আমার বেড়ে উঠা কুমিল্লা শহরেই। সেখানে আমি পড়াশোনা ২০১৪ সালে এস. এস.সি পর্যন্ত শেষ করে ঢাকায় চলে আসি। পরবর্তীতে ঢাকায় আমার শিক্ষাজীবন চলতে থাকে। বর্তমানে আমি কলেজ অব হোম ইকোনমিক্স থেকে রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশীপ বিষয়ে অনার্স ৩য় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি।
আরিফ: আপনি কবে থেকে ছবি আঁকছেন? শুরুটা বিভাবে হয়েছিলো? ছবি/ কার্টুন আঁকা কি শখ নাকি পেশা?
তাবাসসুম: প্রথমে কার্টুন আঁকা আমার শখ থেকে হলেও বর্তমানে আমি এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি।
আমার আঁকাআঁকির শুরু ছোটবেলায়। বলা যায় কয়েক দফায় পারিবারিকভাবে ছবি আঁকা আয়ত্ত করেছি। বড় চাচার কাছে প্রথম হাতেখড়ি। অক্ষর জ্ঞানের পূর্বেই ছবি আঁকার হাতেখড়ি হয়। পরবর্তীতে খালাতো ভাইয়ের কাছে পেস্টেল, জলরঙ, পেন্সিল পোট্রেইটসহ বেশ কিছু বেসিক মাধ্যম শিখি।
আরিফ: আপনি কোন মাধ্যমে কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন এবং কেন?
তাবাসসুম: ট্রেডিশোনালে এক্রেলিক মাধ্যমে আঁকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি আর কার্টুনিং এর ক্ষেত্রে ডিজিটালই পছন্দ। কারণ ডিজিটালে কালারিং করতে আমার কাছে স্পষ্ট এবং রঙিনভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব বলে মনে হয়।
আরিফ: বর্তমানে আপনি কি নিয়ে কাজ করছেন? বর্তমান কাজ সমূহ সম্পর্কে কিছু বলুন?
তাবাসসুম: বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি কার্টুনিং করছি। বাংলাদেশের কিছু দৈনিক পত্রিকা যেমন: দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক কালেরকণ্ঠতে কার্টুন কমিক্স করছি। শিশুতোষ আঁকা আমার বরাবরই পছন্দ।
আরিফ: অবসর সময়ে কি করতে পছন্দ করেন?
তাবাসসুম: ছবি আঁকা আমার নেশা তাই কাজের জন্যই হোক কিংবা অবসর সময়ে, আমি ছবি আঁকতে ভালোবাসি।
আরিফ: তিন জন শিল্পী/কার্টুনিস্ট/ইলাস্ট্রেটরের নাম বলুন যাদের কাজ আপনাকে অনুপ্রাণীত করে। তাঁরাদের কোন কাজ গুলো অনুপ্রাণিত করেছিলো?
তাবাসসুম: তিনজন কার্টুনিস্ট বা ইলাস্ট্রেটরের নাম বলা কিছুটা কষ্টসাধ্য কেননা আমি কার্টুনিং জগতে অনেকজনকে গুরু হিসেবে মান্য করি।
তবে কার্টুনিং নিয়ে বললে প্রথম নাম হিসেবে বলব কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশেদ ইমাম তন্ময়। উনার কাজ দেখে দেখেই আমার কার্টুনিং এর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
দ্বিতীয়ত, মোরশেদ মিশু। উনার আঁকা দি গ্লোবাল হ্যাপিনেজ চ্যালেঞ্জ সিরিজ জগৎজুড়ে বিশেষ নাম করেছে। উনার কাজ দেখে বুঝতে শিখেছিলাম কার্টুনিং কেবল আনন্দ দেওয়ার জন্য নয় বরং দুঃখ-সুখ এখানে পাশাপাশি অবস্থান করে।
তৃতীয়ত, আসিফুর রহমান। আমার কাছে মনে হয় কার্টুনিং এ উনি সবচেয়ে পরিশ্রমী কার্টুনিস্ট। উনার নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে নিত্যনতুন বিষয়ে শেখার আগ্রহ আমার কাজে আগ্রহ বাড়ায়।
উনারা যদি গুরু হন তবে মহাগুরু হচ্ছেন কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব। শেখার আগ্রহ থাকলে উনি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
আরিফ: আপনার শিল্পী/কার্টুনিস্ট হওয়ার পিছনে কার/কাদের অবদান সব চেয়ে বেশি?
তাবাসসুম: কার্টুনিস্ট হব সেটার কোনো প্ল্যানিং আমার ছিলোনা। তবে প্রথমদিকে পত্রিকায় কার্টুন ছাপা হলে আম্মু খুবই খুশী হতেন। পরবর্তীতে দেখা গেলো আম্মুর খুশীর জন্যই কার্টুন এঁকে যাচ্ছি। সেভাবে বলতে গেলে আম্মু প্রথম অনুপ্রেরণার জায়গায়।
তবে বন্ধুবান্ধবরা আমাকে প্রচন্ড উৎসাহ দেয়।
আরিফ: আপনার জীবনের লক্ষ্য কি? ১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
তাবাসসুম: ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষাগুলো দেওয়ার আগ পর্যন্ত স্বপ্ন দেখতাম চারুকলায় পড়ব। কিন্তু পাবলিক ভার্সিটি আর মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং এর পরীক্ষার চাপে যখন চারুকলার জন্য তেমন প্রস্তুতি ছিলোনা এবং সেখানে আমার চান্স হলোনা তখন খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। সে কষ্টটা এখনো কাজ করে। এবং কেন যেন মনে হয় আজন্ম কাজ করবে।
এখন আমি পড়াশোনা করছি এন্টারপ্রেনারশীপ নিয়ে।পাশাপাশি কার্টুনিং।
আগামী ১০বছর পর কী হবে আমি সেটা জানি না। তবে নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। মাল্টিটাস্কিং আমার বেশ পছন্দ। তাই আমি একজন এন্ট্রারপ্রেনার এবং কার্টুনিস্ট দুটোতে পারদর্শীতা দেখাতে চাই।
আরিফ: টুনস ম্যাগ সম্পর্কে কিছু বলুন; টুনস ম্যাগ সম্পর্কে আপনার ধারণা, অভিজ্ঞতা, এবং প্রত্যাশা।
তাবাসসুম: টুনস ম্যাগকে নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই যেটা বলতে চাই টুনস ম্যাগের সাহায্যে আমি প্রথববার ইন্টারন্যাশনাল কার্টুন কনটেস্টে অংশগ্রহণ করবার স্বাদ পাই। দেশের বাহিরে গিয়ে যখন বাংলাদেশী কার্টুনিস্ট হিসেবে আক্ষা দেওয়া হয় তখন দেশের জন্য সত্যিই গর্ব হয়। কাজ করার আগ্রহ বাড়ে।
আমি আশা করি টুনস ম্যাগ একদিন পৃথিবীর সকল কার্টুনিস্টদের একত্রে করে ফেলবে। আমরা সবাই মিলে বিশ্বকে রঙিন করে তুলব।
আরিফ: কেউ যদি আপনার পথ অনুসরণ করে আপনার মত হতে চায়, এবং আপনাকে যদি বলা হয় তাকে তিনটি পরামর্শ দিতে তাহলে আপনি কি কি পরামর্শ দিবেন?
তাবাসসুম: আমাকে কেউ অনুসরণ করলে আমি তাকে স্বাগত জানাই। পরামর্শ হিসেবে আমি তাকে বলব তিনটা নয় মাত্র একটা কাজ করাই জরুরি।সেটা হচ্ছে মনুষ্যত্ব অর্জন।
আমরা মানুষ তাই প্রথমে আমাদের মানুষের মতো আচরণ করা জানতে হবে। যেটা আমি সবসময় করার চেষ্টা করি।
দ্বিতীয়ত, নিজের দেশকে ভালোবাসা। দেশের অন্ন, বস্ত্র, হাওয়া,মাটি, পানি, পরিবেশ ভোগ করলেই চলবেনা বিনিময়ে দেশের জন্য আমি কি করতে পারছি সেটা মাথায় রাখতে হবে।
তৃতীয়ত, যে যেই কাজটাই করিনা কেন মনোযোগ সহকারে করা উচিত। নিজের কাজের প্রতি যত্নশীল ব্যক্তি কখনোই ব্যর্থ হন না। সে সবসময়ই সফল।
টুনস ম্যাগকে ভালোবাসা এবং ধন্যবাদ!!
আরিফ: আপনার আগামী দিনগুলো সফলতায় ভরে উঠুক। আপনার জন্যও অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা।