শান্তি ও সংহতিতে ২৮ শিল্পী
বিডি.টুনসম্যাগ.কম শিল্পী : শহীদ কবির খান মিজান প্রকৃত বিচারে শিল্পীরা নিভৃতচারী। তবু সংহতি গড়েন তাঁরাও। অ্যাকাডেমিকতার বিরুদ্ধে, প্রচ...
https://bd.toonsmag.com/2016/04/221226.html
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
খান মিজান
প্রকৃত বিচারে শিল্পীরা নিভৃতচারী। তবু সংহতি গড়েন তাঁরাও। অ্যাকাডেমিকতার বিরুদ্ধে, প্রচল ধারার বিরুদ্ধে, অশুভর বিরুদ্ধে নানা কারণে শিল্পীদের এমন অবস্থান নতুন নয়। প্যারিসে, মিউনিখে, নিউ ইয়র্কে এর চিহ্ন রয়েছে ঢের। আবার প্রীতি প্রদর্শনীর আকাঙ্ক্ষা থেকেও যূথাবদ্ধ হন শিল্পীরা। প্রগতিশীল রাষ্ট্রে কিছু প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে কিছু দায় তুলে নেয় কাঁধে। গণমানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা এ ধরনের কাজে এমন উৎসাহের জোগানদার হয়।
পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে হয় তার বিপরীত। চিরায়ত লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্য সম্পর্কে প্রতিনিয়ত নাগরিককে ভুল দর্শনে দীক্ষিত করার অভিসন্ধিতে নানা ছলচাতুরী সেখানে। এ ক্ষেত্রে শিল্পীসমাজের কাউকে না কাউকে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হয়। নানা জোগাড়যন্তর তুলে ধরায় মধ্যস্থতা করতে হয়। বিপ্লব গোস্বামীসহ কয়েকজন তারুণ্যদীপ্ত শিল্পী সেই বোধ থেকে আয়োজন করেছেন দুই বাংলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর চিত্রকর্মের প্রদর্শনী।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় চলছে বাংলাদেশ ও ভারতের নবীন-প্রবীণ ২৮ শিল্পীর এ যৌথ চিত্রমেলা। অগ্রজ শিল্পী বিজন চৌধুরী, ধীরাজ চৌধুরী, রবিন মণ্ডল, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, শহীদ কবীরের সঙ্গে অনুজ বিপ্লব গোস্বামী, আজমীর হোসেন, মিন্টু দে, রজত সেনসহ এ প্রজন্মের বেশ কয়েকজন শিল্পী। শান্তি ও সংহতি শিরোনামের প্রদর্শনীটি এখনো চলছে।
প্রদর্শনীর শিরোনাম থেকেই স্পষ্ট, শান্তির সপক্ষে একদল শিল্পীর এ সংহতি। কোনো বিশেষ ধারার পক্ষে-বিপক্ষে না গিয়ে কেন শান্তির পক্ষে এ অবস্থান তাঁদের? হয়তো এ কারণে যে তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশে নীরবে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন থেকে যে অস্থিরতা গ্রাস করছে মানুষের মনোজগৎ, তার আঁচ অনুভব করছেন শিল্পীরাও। তবে উদ্দেশ্য যা-ই হোক—এ ধরনের সংঘ থেকে আয়োজিত প্রদর্শনী একটি দালিলিক মূল্য বহনের দাবি রাখে।
আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস বলে, আজকের বাংলাদেশ অঞ্চলের শিল্পচর্চা আর প্রাচীন ভারতবর্ষের যেকোনো প্রান্তিক ভূখণ্ড থেকে উৎসারিত শিল্পকর্ম পৃথক হলেও আত্মিকভাবে তা এক সূত্রে গাঁথা। নানা ঐতিহাসিক ঘটনার পরম্পরায় আমাদের ভেতর বিশেষ করে দুই বাংলায় রয়েছে আত্মিক ঐক্য। সেই ঐক্যের সূত্র ধরেও যদি এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, তবু তারও রয়েছে আলাদা মূল্যমান। আধুনিক বাংলাদেশের চিত্রচর্চাকে ওপার বাংলার শিল্পচর্চা নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে। আবার এ অঞ্চল থেকে আহৃত শিল্পের নির্যাস পরিপুষ্ট করেছে ওপারের শিল্পকে।
ভারতবর্ষের খ্যাতনামা শিল্পী বিজন চৌধুরীর চিত্রকর্মে উদ্ভাসিত প্রাচীনকালের জীবনযাত্রা, ধীরাজ চৌধুরীর হাতে রূপকে বিশ্লিষ্ট করে সংকটের স্বরূপ অন্বেষণের চেষ্টা বীরেন সোমের ধূসর সবুজ জমিন নির্মাণ, শহীদ কাদরির ক্লেদাক্ত জীবন থেকে উৎসারিত চিত্রমালা—এ সব মায়াবী আলোয় আলোকিত শিল্পকর্মের পাশে নবীন কয়েকজন শিল্পীর চিত্রকর্ম। তাতে শিল্পীর স্বরূপ অন্বেষণের প্রয়াসসহ সাম্প্রতিক ধ্যান-ধারণার ইঙ্গিত। ফলে এ ধরনের প্রদর্শনী নবীন শিল্পীদের কাছে তো বটেই, শিল্পের পাঠকের কাছেও বাঙালির আত্মপরিচয় সন্ধানে অভিযাত্রাস্বরূপ।
শান্তি ও সংহতি শিরোনাম থাকলেও প্রদর্শিত ছবিতে রয়েছে শিল্পীর আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা, কষ্ট, যন্ত্রণা, প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রতিবেশের নানা উপাদান। প্রবীণ শিল্পীদের কিছু বিরল চিত্রকর্ম রয়েছে প্রদর্শনীতে। চিত্রকর্মের উপস্থাপনে সূক্ষ্ম শিল্পবোধ ও পরিমিতিবোধের কারণে পেয়েছে পূর্ণাঙ্গ শিল্পরূপ, রেখা, রং ও পরিপ্রেক্ষিত নির্মাণে সিদ্ধহস্ত। প্রবীণ শিল্পীদের সঙ্গে নবীন প্রজন্মের শিল্পীদের এ অংশগ্রহণ তাত্পর্যপূর্ণ। পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুস্তর ব্যবধান সত্ত্বেও খুব সহজেই এ দেশের চিত্রকলা আন্দোলনে তরুণদেরও বোধ-বুদ্ধি ও সৃষ্টির প্রসারতা উপলব্ধি করা যায়।
২৮ জন শিল্পীর অভিব্যক্তি ও নিজেদের সৃষ্টির উন্মুখতাকে তুলে ধরার মধ্যে আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি শিল্পীদের নানা লক্ষণ ও প্রবণতা। তাদের অভিজ্ঞতা রং ব্যবহার ও পরিসর ভাবনাকে অবলম্বন করে কেউ তাঁর সৃজনে নবমাত্রা সঞ্চার করেছেন। সামগ্রিকভাবে প্রদর্শনীটি দুই বাংলার চিত্রচর্চার খণ্ডিত চিত্র হলেও গুরুত্বের দাবি দার। -দৈনিক কালের কন্ঠ
শিল্পী : শহীদ কবির |
খান মিজান
প্রকৃত বিচারে শিল্পীরা নিভৃতচারী। তবু সংহতি গড়েন তাঁরাও। অ্যাকাডেমিকতার বিরুদ্ধে, প্রচল ধারার বিরুদ্ধে, অশুভর বিরুদ্ধে নানা কারণে শিল্পীদের এমন অবস্থান নতুন নয়। প্যারিসে, মিউনিখে, নিউ ইয়র্কে এর চিহ্ন রয়েছে ঢের। আবার প্রীতি প্রদর্শনীর আকাঙ্ক্ষা থেকেও যূথাবদ্ধ হন শিল্পীরা। প্রগতিশীল রাষ্ট্রে কিছু প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে কিছু দায় তুলে নেয় কাঁধে। গণমানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা এ ধরনের কাজে এমন উৎসাহের জোগানদার হয়।
পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে হয় তার বিপরীত। চিরায়ত লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্য সম্পর্কে প্রতিনিয়ত নাগরিককে ভুল দর্শনে দীক্ষিত করার অভিসন্ধিতে নানা ছলচাতুরী সেখানে। এ ক্ষেত্রে শিল্পীসমাজের কাউকে না কাউকে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হয়। নানা জোগাড়যন্তর তুলে ধরায় মধ্যস্থতা করতে হয়। বিপ্লব গোস্বামীসহ কয়েকজন তারুণ্যদীপ্ত শিল্পী সেই বোধ থেকে আয়োজন করেছেন দুই বাংলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর চিত্রকর্মের প্রদর্শনী।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় চলছে বাংলাদেশ ও ভারতের নবীন-প্রবীণ ২৮ শিল্পীর এ যৌথ চিত্রমেলা। অগ্রজ শিল্পী বিজন চৌধুরী, ধীরাজ চৌধুরী, রবিন মণ্ডল, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, শহীদ কবীরের সঙ্গে অনুজ বিপ্লব গোস্বামী, আজমীর হোসেন, মিন্টু দে, রজত সেনসহ এ প্রজন্মের বেশ কয়েকজন শিল্পী। শান্তি ও সংহতি শিরোনামের প্রদর্শনীটি এখনো চলছে।
প্রদর্শনীর শিরোনাম থেকেই স্পষ্ট, শান্তির সপক্ষে একদল শিল্পীর এ সংহতি। কোনো বিশেষ ধারার পক্ষে-বিপক্ষে না গিয়ে কেন শান্তির পক্ষে এ অবস্থান তাঁদের? হয়তো এ কারণে যে তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশে নীরবে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন থেকে যে অস্থিরতা গ্রাস করছে মানুষের মনোজগৎ, তার আঁচ অনুভব করছেন শিল্পীরাও। তবে উদ্দেশ্য যা-ই হোক—এ ধরনের সংঘ থেকে আয়োজিত প্রদর্শনী একটি দালিলিক মূল্য বহনের দাবি রাখে।
আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস বলে, আজকের বাংলাদেশ অঞ্চলের শিল্পচর্চা আর প্রাচীন ভারতবর্ষের যেকোনো প্রান্তিক ভূখণ্ড থেকে উৎসারিত শিল্পকর্ম পৃথক হলেও আত্মিকভাবে তা এক সূত্রে গাঁথা। নানা ঐতিহাসিক ঘটনার পরম্পরায় আমাদের ভেতর বিশেষ করে দুই বাংলায় রয়েছে আত্মিক ঐক্য। সেই ঐক্যের সূত্র ধরেও যদি এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, তবু তারও রয়েছে আলাদা মূল্যমান। আধুনিক বাংলাদেশের চিত্রচর্চাকে ওপার বাংলার শিল্পচর্চা নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে। আবার এ অঞ্চল থেকে আহৃত শিল্পের নির্যাস পরিপুষ্ট করেছে ওপারের শিল্পকে।
ভারতবর্ষের খ্যাতনামা শিল্পী বিজন চৌধুরীর চিত্রকর্মে উদ্ভাসিত প্রাচীনকালের জীবনযাত্রা, ধীরাজ চৌধুরীর হাতে রূপকে বিশ্লিষ্ট করে সংকটের স্বরূপ অন্বেষণের চেষ্টা বীরেন সোমের ধূসর সবুজ জমিন নির্মাণ, শহীদ কাদরির ক্লেদাক্ত জীবন থেকে উৎসারিত চিত্রমালা—এ সব মায়াবী আলোয় আলোকিত শিল্পকর্মের পাশে নবীন কয়েকজন শিল্পীর চিত্রকর্ম। তাতে শিল্পীর স্বরূপ অন্বেষণের প্রয়াসসহ সাম্প্রতিক ধ্যান-ধারণার ইঙ্গিত। ফলে এ ধরনের প্রদর্শনী নবীন শিল্পীদের কাছে তো বটেই, শিল্পের পাঠকের কাছেও বাঙালির আত্মপরিচয় সন্ধানে অভিযাত্রাস্বরূপ।
শান্তি ও সংহতি শিরোনাম থাকলেও প্রদর্শিত ছবিতে রয়েছে শিল্পীর আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা, কষ্ট, যন্ত্রণা, প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রতিবেশের নানা উপাদান। প্রবীণ শিল্পীদের কিছু বিরল চিত্রকর্ম রয়েছে প্রদর্শনীতে। চিত্রকর্মের উপস্থাপনে সূক্ষ্ম শিল্পবোধ ও পরিমিতিবোধের কারণে পেয়েছে পূর্ণাঙ্গ শিল্পরূপ, রেখা, রং ও পরিপ্রেক্ষিত নির্মাণে সিদ্ধহস্ত। প্রবীণ শিল্পীদের সঙ্গে নবীন প্রজন্মের শিল্পীদের এ অংশগ্রহণ তাত্পর্যপূর্ণ। পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুস্তর ব্যবধান সত্ত্বেও খুব সহজেই এ দেশের চিত্রকলা আন্দোলনে তরুণদেরও বোধ-বুদ্ধি ও সৃষ্টির প্রসারতা উপলব্ধি করা যায়।
২৮ জন শিল্পীর অভিব্যক্তি ও নিজেদের সৃষ্টির উন্মুখতাকে তুলে ধরার মধ্যে আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি শিল্পীদের নানা লক্ষণ ও প্রবণতা। তাদের অভিজ্ঞতা রং ব্যবহার ও পরিসর ভাবনাকে অবলম্বন করে কেউ তাঁর সৃজনে নবমাত্রা সঞ্চার করেছেন। সামগ্রিকভাবে প্রদর্শনীটি দুই বাংলার চিত্রচর্চার খণ্ডিত চিত্র হলেও গুরুত্বের দাবি দার। -দৈনিক কালের কন্ঠ