নিসর্গের পাঠ্যক্রম
বিডি.টুনসম্যাগ.কম চাক্তাই খাল, মাধ্যম জলরং নওশাদ জামিল : প্রকৃতি বা নিসর্গ চিত্রকলার অনুষঙ্গ হিসেবে নতুন নয়, বলা যায় বেশ পুরনো। বহ...
https://bd.toonsmag.com/2015/08/280521.html
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
চাক্তাই খাল, মাধ্যম জলরং |
নওশাদ জামিল : প্রকৃতি বা নিসর্গ চিত্রকলার অনুষঙ্গ হিসেবে নতুন নয়, বলা যায় বেশ পুরনো। বহুল ব্যবহৃতও বটে। নানা রূপে ও নানা ভঙ্গিমায় নিসর্গ এসেছে চিত্রকলায়। তার পরও আধুনিক ও সমকালীন চিত্রকলায় এর এতটুকু কদর কমেনি। জীবনজগতের নানা টানাপড়েন, বৈশ্বিক অস্থিরতাসহ হাজারো অনুষঙ্গ ছড়িয়ে আছে চারদিকে। তবে কেন বারবার ক্যানভাসে উঁকি দেয় নিসর্গের অনুপম ছবি? বোধহয় এর কারণ একটাই, আর তা হলো সৌন্দর্যবোধ। শিল্পীরা প্রকৃতির মধ্যেই খুঁজে পান তাঁদের আশ্রয়, খুঁজে পান সৌন্দর্যের খনি। শিল্পী সোহাগ পারভেজের আঁকা চিত্রকর্ম দেখতে দেখতে মনে হয়, অন্য অনেক শিল্পীর মতো তিনিও প্রকৃতিতে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন, পেয়েছেন সত্যিকারের সৌন্দর্য।
জল রঙে আঁকা তাঁর ছবিগুলোয় উঠে এসেছে সৌন্দর্য সৃষ্টির নানা উপকরণ। বান্দরবানের পাহাড়ি পরিবেশ, লেক, মুরং পরিবার, রাঙামাটির শান্ত পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছুটে চলা নদী, নদীর তীরে বেদের বহর, বেদেনীর গায়ে লোকজ সাজ-সবই উঠে এসেছে তাঁর মুনশিয়ানায়। সোহাগের ছবিতে নিসর্গের রং ও নিসর্গের অবয়ব সব সময়ই হাজির। প্রকৃতিকে দেখার নিজস্ব অবলোকন আছে তাঁর। ফলে তাঁর চিত্রপট উপস্থিত হয় এক মায়াবি আবহ নিয়ে।
আবহমান বাংলার রূপবৈচিত্র্য ও নিসর্গের রূপমাধুরীর প্রেমে মুগ্ধ শিল্পী সোহাগ। বাংলার প্রকৃতিকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন তাঁর চিত্রপটে। ছবি আঁকার জন্য টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া এবং দেশের আনাচে-কানাচের অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন রং-তুলি ক্যানভাস নিয়ে। তাঁর তিন বছরের কাজ নিয়ে গ্যালারি অ্যাথেনায় চলেছে একক চিত্রপ্রদর্শনী। 'আমার সোনার দেশ' শীর্ষক এ প্রদর্শনীতে শিল্পী তাঁর মুনশিয়ানায় তুলে ধরেছেন নিসর্গের অনবদ্য সব ছবি।
প্রতিশ্রুতিশীল এ শিল্পীর ছবি দেখে মনে হয়, তিনি যেন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়েই প্রকৃতিকে ছুঁয়েছেন, দেখেছেন, অনুভব করেছেন, তারপর প্রকৃতিকে ক্যানভাসে তুলে এনেছেন তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিমায়। তিনি নদী থেকে নিয়েছেন গতি, সতেজ রূপ; বাংলার মেঘ-বৃষ্টি থেকে নিয়েছেন স্বচ্ছ, সজীব রং; অপরূপ দৃশ্য থেকে বুনেছেন অবয়ব; মানুষের বর্ণিল অবয়ব থেকে নিয়েছেন জীবনগাথা। ফলে প্রথমত, শেষ পর্যন্ত প্রকৃতিলগ্ন থাকতে চান তিনি। হয়তো তাই ঘুরেফিরে তাঁর ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে নিসর্গের রূপমাধুরী।
প্রচুর নিসর্গচিত্র আঁকলেও ক্যানভাসে রং ব্যবহারে অত্যন্ত পরিশীলিত ও মার্জিত তিনি। অতি উজ্জ্বল রং নয়, প্রকৃতির মধ্যে বিরাজমান রংটাই তুলে আনেন তিনি। এ ছাড়া অতি সূক্ষ্ম রেখা ও আলো-ছায়ার ব্যবহারেও তাঁর মুনশিয়ানা প্রশ্নাতীত। অনেকের কাজ ক্যানভাসে ফটোগ্রাফির আদলে সৃষ্ট, সোহাগের কাজ তেমন নয়। নিজস্বতায় উজ্জ্বল। প্রতীক ও ইমেজের মধ্যে নানা ভঙ্গিমায় ভাঙচুর করেন, যোগসূত্র স্থাপন করেন। পাহাড় থেকে তীব্রগতিতে নেমে এসেছে যে ঝরনাধারা, সাধারণত ওই পাহাড় হয় সবুজে ঘেরা কিংবা বাদামি। কিন্তু সোহাগ তা পাল্টে দেন। তিনি দেখান কমলা রঙের পাহাড় থেকে নামছে নীল রঙের ধারা। ফলে প্রকৃতি ও নিসর্গ তাঁর কাছে ধরা দেয় ভিন্ন এক ইমেজ নিয়ে। সাদা চোখে দেখা নদী এখানে শুধু স্রোতধারা নয়, চলনবিলের জলরাশি শুধু জলাশয় নয়, প্রকৃতি দেখারও নতুনতর স্বরলিপি এটা।
প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ৭১টি চিত্রকর্ম। এর মধ্যে ৬২টি জলরং, একটি পোস্টাল, একটি পোস্টার ও সাতটি অ্যাক্রেলিক কালারের ছবি নিয়ে এ প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর সমাপনী দিন ১১ সেপ্টেম্বর। প্রদর্শনী খোলা থাকবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। সূত্র : কালের কন্ঠ