অন্যেরটা কপি না করে নিজের প্রতিভা কাজে লাগাও : শিল্পী উত্তম সেন
বিডি.টুনসম্যাগ.কম : সালটা ১৯৭২। তিনি তখন ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র। খেলাঘরের পাতায় তার প্রথম ছড়া ছাপা হয় উত্তম কুমার সেন নামে। সেই থেকে তার লে...
https://bd.toonsmag.com/2014/12/Interview-Uttam-Sen.html
বিডি.টুনসম্যাগ.কম : সালটা ১৯৭২। তিনি তখন ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র। খেলাঘরের পাতায় তার প্রথম ছড়া ছাপা হয় উত্তম কুমার সেন নামে। সেই থেকে তার লেখালেখির শুরু। তিনি শিল্পী উত্তম সেন। তার প্রতিবেশী ছিলেন দুই শক্তিশালী ছড়াকার- দীপকর চক্রবর্তী এবং অজয়দাশগুপ্ত। তাদের আগ্রহে তিনি লেখালেখিতে আরো উৎসাহী হয়েছেন। সেই সময়ে বাংলাদেশের প্রায় সব পত্রিকায় উত্তম সেনের লেখা ছাপা হয়। ইত্তেফাকের কচি কাঁচার আসর, সংবাদের খেলাঘর, পূর্বদেশের চাঁদের হাঁট, গণকণ্ঠের কচিকণ্ঠ, আজাদের মুকুলে মহফিল এছাড়াও ধান শালিকের দেশ, খেলাঘর সন্দেশ, কিশোর বাংরা, শিশু ছাড়াও অনেক ম্যাগাজিনে সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত লেখার সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি।
লেখালেখি আবার চিত্রশিল্পী হবার বাসনাও। ছবি আঁকতেন ইচ্ছে মতো, ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় তার লেখক বন্ধু বিশ্বজিৎ চৌধুরী সহ-সম্পাদনা করেছিলেন লুকোচুটি নামের পকেট সাইজের ছড়া সংকলন। এ সংকলনের প্রচ্ছদটা ছিল শিল্পী উত্তম সেনের করা।
লেখালেখির পাট আস্তে আস্তে চুকিয়ে তিনি গভীর মনোযোগী হলেন ছবি আঁকার দিকে। পত্রিকায় আঁকার জন্য মনটা উতলা হয়ে থাকতো। চারুকলা কলেজে ভর্তি না হয়ে সরকারি মহসিন কলেজে পড়ার ফাঁকে হঠাৎ করে চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক নয়া বাংলায় আঁকার সুযোগ পান। বেতন, মাসে দুই শত টাকা। এখানে কাজ শুরু করার পর ভাবলেন পত্রিকাই তার একমাত্র জায়গা। তারপর দৈনিক পূর্বকোণ, আজকের কাগজ, লালসবুজ, বাংলাবাজার পত্রিকা, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক সংবাদের পরে বর্তমানে দৈনিক যুগান্তরে।
শিল্পী উত্তম সেন প্রচ্ছদের জন্য দুইবার মুক্তধারা পুরস্কার, চট্টগ্রাম একাডেমী পুরস্কার এবং সংবর্ধিত হয়েছেন বহুবার। তার প্রকাশিত বই- রঙিন মেঘের দল, যৌথ ছড়ার বই ধ্র“ব এষের সাথে। বইয়ের নামটা কবি, সাংবাদিক আবু হাসান শাহরিয়ারে দেয়া- ছড়া আঁকা ছবি লেখা বইটিতে ধ্র“ব’র ছড়ার সাথে উত্তম সেনের ইলাস্ট্রেশন এবং উত্তম সেনের ছড়ার সাথে ইলাস্ট্রেশন করেন ধ্র“ব।
নেশা আর পেশা দুইয়ে মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত সন্ধি হলো পত্রিকার সাথেই।
শিল্পী উত্তম সেন-এর আঁকায় চট্টগ্রাম |
শিল্পী উত্তম সেন তার আঁকা-আঁকি এবং জীবনের নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, সোহানুর রহমান অনন্ত'র সাথে। তা টুনস ম্যাগ বাংলার পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা হলো-
এস আর অনন্ত : দাদা বর্তমান সময়ে ছেলে মেয়েরা কম্পিউটারে বেশির ভাগ কাজ করে থাকে, আর আপনারা এখনো হাতে সব কিছু করছেন, আপনার কি কখনো কম্পিউটারে করতে ইচ্ছে করে না?
শিল্পী উত্তম সেন : দেখ এটা হচ্ছে যুগের পরিবর্তন, আমাদের সময় আমরা হাতে একেছি, এখনো আঁকি, কিন্তু যুগ তোমাদের জন্য সেই জিনিসটা আরো সহজ করে দিয়েছে, এখন চাইলেই মানুষ কম্পিউটারের মাধ্যমে, একটি ভূল কাজকে একাধিক ভার শুদ্ধ করতে পারে।
অনন্ত : দাদা আপনি তো শিুশুদের নিয়ে বেশি আঁকেন এবং লেখেন, তো এই যে আপনার এত সুন্দর সুন্দর আঁকা সেটা আপনি কি রকম চিন্তা ভাবনা করে আঁকেন?
উত্তম সেন : দেখ প্রথম তোমাকে কিছু আঁকতে সাবজেক্টটা বুঝতে হবে, আমি যখন শিশুদের নিয়ে কাজ করি, তখন আমি বুঝতে চেষ্টা করি ওদের মন কি চায়, কি দেখে ওরা আনন্দিত হবে। এই জিনিসটা আমি সবসময় আমার কাজের আগে চিন্তা করি।
অনন্ত : দাদা, বর্তমান সময়ে আমরা লক্ষ্য করি, তরুণ প্রজন্ম আঁকা-আঁকির বিষয়টা খুব তারাতারি আয়ত্ত করার চেষ্টা করে, ফলে দেখা যায় তাদের ডয়িং-এ ভূল থেকে যায়, এই বিষয়য়ে কিছু বলূন?
উত্তম সেন : শিল্পী হতে হলে ডয়িং মাস্ট জানতে হবে, এর কোন বিকল্প নাই। আর কোন কাজই তারাতারি সুন্দর ফল বয়ে আনতে পারে না। শিল্পী হওয়া সাধনার কাজ সেটা একদিনের কাজ নয়, আমি তো অনেক দিন ধরে আঁকছি তবুও মনে হয় এখনো অনেক কিছুই জানি না, অপ্রাপ্তিতে ভুগি।
অনন্ত : বইমেলা মানেই আপনাদের নানন্দিক প্রচ্ছদ, এবার মেলা নিয়ে আলাদা ভাবে কি ভাবছেণ?
উত্তম সেন : আসলে বইমেলা হলো প্রাণের মেলা, আমাদের কবি শিল্পীদের মিলন মেলা। আলাদা ভাবে যদিও এখনো কিছু ভাবিনি, তবে চমক হিসেবে অনেক কিছুই থাকবে আশা করি।
অনন্ত : আপনিতো একজন শিল্পী-ই নন পাশাপাশি লেখকও, তা দুটো এক সাথে করতে সমস্যা হয় না?
উত্তম সেন : সমস্যা তো কিছুটা হয়, দুটো এক সাথে করা কখনো সহজ কাজ না, তারপরও চেষ্টা করি নিজের ভালোটাকে দিতে, জানিনা কতটুকু হয়।
অনন্ত : যতটুকু জানি, আপনি বেশ কয়েকবার পুরস্কৃত হয়েছেন, এ নিয়ে আপনি কি বলবেন?
উত্তম সেন : আসলে পুরস্কার পাওয়া যতটা না আনন্দের তার চেয়ে বেশি কিন্তু দায়িত্ব বেরে যাওয়া, নিজেকে আরো ভূল ত্রুটি থেকে গুছিয়ে নেওয়া। সম্মানটাকে ধরে রাখাই হচ্ছে মূল কথা।
অনন্ত : দাদা, এতক্ষন সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধণ্যবাদ, শেষে যারা ভবিষ্যৎ শিল্পী হতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
উত্তম সেন : আগেও বলেছি এখনও বলি, শিল্পী হওয়া একদিনের কাজ নয়, এর জন্য সাধনা, শ্রম দুটোই থাকতে হবে। অন্যেরটা কপি করা নয় বরং তোমার প্রতিভা কাজে লাগিয়ে দেখ তুমি কি করতে পারো। নতুনদের প্রতি আমার অনেক অনেক ভালবাসা ও শুভ কামনা রইলো।