চক্ষু না ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র

রুপম আহমেদ মঈন বিডি.টুনসম্যাগ.কম জামিল সাহেব ইদানীং একটি বিশাল সমস্যায় ভুগছেন ল্যাপটপ বের করা নিয়ে। ল্যাপটপের পরিবর্তে ব্রিফকেস বের কর...

রুপম আহমেদ মঈন
বিডি.টুনসম্যাগ.কম

জামিল সাহেব ইদানীং একটি বিশাল সমস্যায় ভুগছেন ল্যাপটপ বের করা নিয়ে। ল্যাপটপের পরিবর্তে ব্রিফকেস বের করে ল্যাপটপের বাটন খুঁজতে থাকেন। ঢাকা লেখাকে টাকা লেখা দেখেন। সম্বলকে দেখেন কম্বল! এই নিয়ে সে এখন ভীষণ চিন্তিত।

তবে গতকাল তিনি ঠিক করেছেন যে আজ অফিস থেকে যাওয়ার পথে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখাবেন।
যাই হোক, একদিন তিনি তাড়াতাড়ি অফিস শেষ করে বেরিয়ে পড়লেন চক্ষু চিকিৎসক দেখানোর উদ্দেশ্যে। শেষ বিকালের আধোছায়াতে একটি বড় বিল্ডিংয়ের ওপর একটি সাইনবোর্ড তার চোখে পড়ল। সেখানে লেখা, 'ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র'।
জামিল সাবের চোখে মুখে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস। মনে মনে ভাবলেন এটা যখন চক্ষু গবেষণা কেন্দ্র, নিশ্চয়ই এখানে ভালো কোনো চিকিৎসক আছেন। যাকে নির্দ্বিধায় চোখের সমস্যার কথা বলা যাবে!
এদিকে ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা তার অফিসে বসে কাজ করছেন। নতুন নির্মাণাধীন অফিস হওয়ায় অফিসের দরজা লাগানো হলেও কোনো জানালা এখন পর্যন্তও লাগানো হয়নি।
হঠাৎ জামিল সাহেবের আগমন। জামিল সাহেবের দিকে এক পলক তাকিয়ে অবাক হয়ে অফিসার জিজ্ঞেস করলেন,
: আচ্ছা আপনার কি চোখে সমস্যা?
জামিল সাহেবের চোখে মুখে এবার যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবলেন এত ভালো চিকিৎসক যে এদেশে আছে তা তো আগে জানতাম না। আমার বলার আগেই ডাক্তার সাহেব বুঝে গেছেন যে আমার চোখে সমস্যা। জামিল সাহেবকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অফিসার আবারও জিজ্ঞেস করলেন,
: কী ব্যাপার আপনি কিছু বলছেন না যে? আপনার কি চোখে সমস্যা আছে?
: আচ্ছা ডা. সাহেব আপনি আমার রোগ সম্পর্কে কিছু
না জিজ্ঞেস করেই কী করে বুঝলেন যে আমার চোখে সমস্যা আছে?
জামিল সাহেবের কথা শুনে অফিসার একেবারেই থ হয়ে গেলেন। এবার তিনি একটু স্থির হয়ে বললেন,
: আমার অফিসের এত বড় দরজা থাকতে আপনি গ্রিলহীন জানালা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছেন! আর এ জন্যই আমি বুঝতে পেরেছি যে আপনার চোখে সমস্যা আছে। আর আমি কোনো ডাক্তার না, বুঝেছেন? আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন।
এবার জামিল সাহেব মুখ ভোতা করে অফিসারকে জিজ্ঞেস করলেন,
: কেন এটা 'চক্ষু গবেষণা কেন্দ্র' না? আর এটা আপনার চেম্বার না?
অফিসার এবার কিছু না বুঝতে পেরে পিওনকে ডাকলেন। যাতে পিওন জামিল সাহেবকে বের করে দেন। তাকে বের করে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে অফিসের পিওন তাকে অফিসের বাইরে নিয়ে এসে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে পড়ে শোনালেন এই সাইনবোর্ডে লেখা আছে, 'ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র'।
জামিল সাহেব সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে রইলেন আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন,
: দুনিয়াটা বড়ই স্বার্থপর। সামান্য ৩০০ টাকা
ভিজিট না দিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েছি বলে আজ আমাকে এতটা অপমানিত হতে হলো! আর চোখে একটু কম দেখি বলে আমাকে কি সাত পাঁচ বুঝটাই না দিল এরা। আমি নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি 'চক্ষু
গবেষণা কেন্দ্র', আর সামান্য কটা টাকা ভিজিট দেইনি বলে 'ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র' বলে আমাকে এভাবে বের করে দিল। দুনিয়াটা বড়ই নিষ্ঠুর! টাকা ছাড়া কেউ দাম দেয় না।
আক্ষেপ করে বলতে বলতে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন জামিল সাহেব।
শাহপুর, সিরাজগঞ্জ।

এই বিভাগে আরো আছে

রম্য গল্প 2071140957566273687

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সঙ্গে থাকুন

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক

বৈশিষ্ট্যযুক্ত

বিশ্বসেরা ১০ কার্টুনিস্ট

শিল্পী রফিকুননবী সাধারণ মানুষের কাছে যতটা না তার ফাইন আর্টসের জন্য পরিচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় তার ‘টোকাই’ কার্টুন চরিত্রের জন্য। এ ...

-

  • ফেসবুকে অনুসরণ করুন

    আঁকা-আঁকি আহ্ববান

    আপনার আঁকা, মজার মজার লেখা, ছবি আঁকার কলা-কৌশল, শিল্পীর জীবনী, প্রবন্ধ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অথবা প্রদর্শনীর সংবাদ টুনস ম্যাগে ছাপাতে চাইলে পাঠিয়ে দিন। আমাদের ইমেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়।

    সহায়তা করুন

    item