বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পটুয়া কামরুল
বিডি.টুনসম্যাগ.কম বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়ার দানবমূর্তি সম্বলিত পোস্টার এবং বাংলাদেশের ক্ষমতা...
https://bd.toonsmag.com/2014/08/blog-post_8.html
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়ার দানবমূর্তি সম্বলিত পোস্টার এবং বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সামরিক স্বৈরাচারকে নিয়ে কার্টুনচিত্র 'দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে' পোস্টার এঁকে কামরুল হাসান বিশেষভাবে খ্যাতি অর্জন করেন।
কামরুল হাসান ১৯২১ সালের ২ ডিসেম্বর বর্ধমান জেলার (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যাধীন) কালনা থানার নারেঙ্গা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম এ.এস.এম. কামরুল হাসান অর্থাৎ আবু শরাফ (শার্ফ) মোহাম্মদ কামরুল হাসান। তাঁর ডাকনাম ছিল সাতন। কামরুল হাসানের জন্মের আগে তাঁর মার পরপর কয়েকটি সন্তানের মৃত্যু হলে তখনকার সংস্কার অনুযায়ী তাঁকে সাতকড়ির বিনিময়ে কেনা হয় বলে তাঁর নাম হয় সাতকড়ি, সংক্ষেপে সাতন। তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ হাশিম ও মাতার নাম মোসাম্মৎ আলিয়া খাতুন।
১৯৩০ সালে কলকাতার তালতলাস্থ ইউরোপীয়ন এসাইলাম লেনে অবস্থিত মডেল এম.ই. স্কুলের ইনফ্যান্ট ক্লাস থেকেই কামরুল হাসানের বিদ্যাশিক্ষার শুরু হয়। এ স্কুলে কামরুল হাসান ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। এরপর কামরুল হাসান ১৯৩৭ সালে বাবার আগ্রহে কলকাতা মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। স্কুল ও মাদ্রাসায় পড়ার সময় তিনি প্রচুর ছবি আঁকতেন। তাঁর তিনরঙা একটি ছবি মাদ্রাসার বার্ষিক ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল। এরপর ১৯৩৮ সালের জুলাই মাসে কামরুল হাসান কলকাতার 'গভর্নমেন্ট স্কুল অফ আর্টস'-এ ভর্তি হন এবং চারুকলা বিভাগ থেকেই ১৯৪৭ সালে তিনি ডিপ্লোমা অর্জন করেন। পাকিস্তান আন্দোলনের সময় সমসমায়িক অনেক মুসলিম যুবকের মতই তিনি এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ভারত বিভাগের পরে, কামরুল হাসান ঢাকাতে আসেন, যা ছিল সদ্যস্থাপিত পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী। ১৯৪৮ সালে জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে একত্রে তিনি গভর্নমেন্ট ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস (বর্তমানে, ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাজনৈতিকভাবে বামপন্থী হাসান অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন যা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ূব খানের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়ার মুখের ছবি দিয়ে আঁকা পোস্টারটি খুব বিখ্যাত। কামরুল হাসান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও রেডিও এর কলা বিভাগের পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলে শিল্পী কামরুল হাসান অসহায় মানুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। ১৯৭১ সালের শুরু থেকেই রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পর সর্বত্র প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। ঢাকায় হাতিরপুল এলাকায় প্রতিরোধ কমিটির চেয়ারম্যান হন শিল্পী কামরুল হাসান। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়ার দানবমূর্তি সম্বলিত পোস্টার এঁকে কামরুল হাসান বিশেষভাবে খ্যাতি অর্জন করেন। এখানে কামরুল হাসানের নেতৃত্বে কাজ করেন শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী, নিতুন কুন্ডু, জহির আহমদ প্রমুখ। এই শিল্পীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রচনা করেন একাধিক পোস্টার। এসব পোস্টারের মাধ্যমে পাকবাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে যেমন তীব্র ধিক্কার ও প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের মনে দেশের জন্য যুদ্ধের উৎসাহ ও উদ্দীপনাও সৃষ্টি হয়। এসব পোস্টারের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ-কামরুল হাসানের আঁকা ইয়াহিয়ার দানবমূর্তি বিষয়ক কার্টুন সম্বলিত পোস্টারটি। পোস্টারটির ভাষা ছিল এইরূপঃ (বাংলায়) এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে। সমগ্র মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এই পোস্টারটি যেন সম্পৃক্ত হয়ে আছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়ার মুখের ছবি দিয়ে আঁকা পোস্টারটি খুব বিখ্যাত। কামরুল হাসান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও রেডিও এর কলা বিভাগের পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলে শিল্পী কামরুল হাসান অসহায় মানুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। ১৯৭১ সালের শুরু থেকেই রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পর সর্বত্র প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। ঢাকায় হাতিরপুল এলাকায় প্রতিরোধ কমিটির চেয়ারম্যান হন শিল্পী কামরুল হাসান। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়ার দানবমূর্তি সম্বলিত পোস্টার এঁকে কামরুল হাসান বিশেষভাবে খ্যাতি অর্জন করেন। এখানে কামরুল হাসানের নেতৃত্বে কাজ করেন শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী, নিতুন কুন্ডু, জহির আহমদ প্রমুখ। এই শিল্পীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রচনা করেন একাধিক পোস্টার। এসব পোস্টারের মাধ্যমে পাকবাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে যেমন তীব্র ধিক্কার ও প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের মনে দেশের জন্য যুদ্ধের উৎসাহ ও উদ্দীপনাও সৃষ্টি হয়। এসব পোস্টারের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ-কামরুল হাসানের আঁকা ইয়াহিয়ার দানবমূর্তি বিষয়ক কার্টুন সম্বলিত পোস্টারটি। পোস্টারটির ভাষা ছিল এইরূপঃ (বাংলায়) এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে। সমগ্র মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এই পোস্টারটি যেন সম্পৃক্ত হয়ে আছে।
১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে শিল্পী কামরুল হাসান একটি কবিতা উৎসবে যোগ দেন। সারাদিন তিনি সেখানেই অবস্থান করেন।
বিকেলের স্বরচিত কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতিত্ব করছিলেন এবং বসে বসে কবিতা শুনছিলেন এবং হাতের কাছে যা পাচ্ছিলেন তাতেই এঁকে যাচ্ছিলেন কিছু একটা।
এভাবেই কবি রবীন্দ্র গোপের ডায়রির পাতায় আঁকেন সেসময়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সামরিক স্বৈরাচারকে নিয়ে কার্টুনচিত্র দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে।
জীবিকাসূত্রে কামরুল হাসান ১৯৪৮ থেকে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেন এবং ১৯৬০ থেকে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের নকশা কেন্দ্রের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রচার বিভাগের শিল্প বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দেশে-বিদেশে বহু একক এবং যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন কামরুল হাসান। একক প্রদর্শনীগুলো হলোঃ ১৯৫৪ এবং ১৯৫৫ ঢাকা; ১৯৫৭ রেঙ্গুন, মিয়ানমার; ১৯৬৯ পাকিস্তান; ১৯৭৫ ঢাকা; ১৯৭৯ লন্ডন; ১৯৯১ ঢাকা। উল্লেখযোগ্য যৌথ প্রদর্শনীসমূহ হলো : ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৯ ঢাকা, করাচি, লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডি; ১৯৭৫-৮৮ বাংলাদেশে ৬টি জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী; ১৯৭৮ জিডিআর; ১৯৮০ ফুকুওকা, জাপান; ১৯৮১ হংকং; ১৯৮৫ মালয়েশিয়া; ১৯৮৭ ভারত; ১৯৮১, ১৯৮৩ ও ১৯৮৬ দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী, বাংলাদেশ। চিত্রকলায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট'স গোল্ড মেডাল (১৯৬৫), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৭৯), বাংলাদেশ চারু শিল্পী সংসদ সম্মাননা (১৯৮৪), বাংলা একাডেমীর ফেলো (১৯৮৫) পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে কামরুল হাসান জাতীয় কবিতা উৎসবে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থাকাকালীন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ৩ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ চত্বরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
কাঠখোদাই মাধ্যমে কাজ করছেন কামরুল হাসান |
১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে কামরুল হাসান জাতীয় কবিতা উৎসবে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থাকাকালীন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ৩ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ চত্বরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।