কার্টুনিস্ট সাদাতউদ্দীন আহমেদদ এমিল-এর সাক্ষাৎকার
https://bd.toonsmag.com/2019/12/sadat.html
সাদাতউদ্দীন আহমেদদ এমিল। ছবির উৎস: ফেসবুক |
সাদাত: নাম অনেক লম্বা-সাদাতউদ্দীন আহমেদদ এমিল, ৩৩ + বছর। আমার জন্ম চট্টগ্রাম শহরের নন্দন কাননে। সে সুবাদে বেশ চমৎকার একটা স্কুলে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, যার নাম সহজপাঠ। ফুলকি পরিচালিত এ স্কুলে পাশাপাশি গান, ছবি আকা শিক্ষার স্কুলও ছিল। বাসার একেবারে কাছে হওয়ায় সব গুলোতেই আমি যাতায়াত করতাম। সেটা প্রাইমারি স্কুলের কথা। এরপর যাই চট্টগ্রামের বিখ্যাত কলেজিয়েট স্কুলে। এই স্কুলের মাঠটাই আমার সব চাইতে আকর্ষনীয় মনে হত। এত বড় মাঠের স্কুলে পড়ার সৌভাগ্য সবার হয় না। স্কুলে ভর্তির আগে থেকেই আকাআকির শুরু হলেও, এই কলেজিয়েট স্কুলে এসেই প্রথম কার্টুন আকা শুরু করি। স্কুলের কিছু কিছু ক্লাস খুব বোরিং হতো। ক্লাস সিক্সের দিকে, ক্লাসরুমে বিরক্তিকর লেকচার চলতে শুরু হলে, আমি সেই শিক্ষকের কার্টুন আঁকতে শুরু করতাম। বিশেষ করে অঙ্ক খাতায় আঁকবার মতো অনেক জায়গা থাকতো, আর ব্যাকা-ত্যাড়া করে সেই শিক্ষকের মুখ এঁকে বিরক্তির বহিঃপ্রকাশও হতো। বন্ধুরাও এই ব্যাপারটায় খুব মজা পেতো। সেভাবেই শুরু।
এরপর গান, থিয়েটার, চারুকলায় পড়া শেষ করে এখন পেশাদার কার্টুনিস্ট। এটাই আমার পেশা।
ডেইলি স্টারের জন্য করা সাদাতের রাজনৈতিক কার্টুন, উৎস: সাদাত কার্টুন |
আরিফ: আপনি কবে থেকে ছবি আঁকছেন? শুরুটা বিভাবে হয়েছিলো? ছবি/ কার্টুন আঁকা কি শখ নাকি পেশা? আপনি কোন মাধ্যমে কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন এবং কেন?
সাদাত: পছন্দ যদি বলি, তাহলে আমার দুটো কাজ করতে বেশি ভাল লাগে-১ নিজের মত পেইন্টিং ২ রাজনৈতিক কার্টুন।
পেইন্টিং এ এক্রেলিক রঙ আর কার্টুনে কালি তুলি কাগজেই ছবি আকি। সময়ের বাধ্যবাধকতার কারনে রঙ করি ফটোশপে।
ডেইলি স্টারের জন্য করা সাদাতের রাজনৈতিক কার্টুন, উৎস: সাদাত কার্টুন |
আরিফ: বর্তমানে আপনি কি নিয়ে কাজ করছেন? বর্তমান কাজ সমূহ সম্পর্কে কিছু বলুন?
সাদাত: বর্তমানে নিজের সলো পেইন্টিং প্রদর্শনীর জন্যে কাজ করছি পাশাপাশি পত্রিকার জন্যে কার্টুন তো আছেই।আর একটা গ্রাফিক নভেল শুরু করার চিন্তা করছি।এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
আরিফ: অবসর সময়ে কি করতে পছন্দ করেন?
সাদাত: অবসরে গান শুনি। বই পড়ি। গীটার নিয়ে টুং টাং করি। পেইন্টিং করি।
আরিফ: তিন জন শিল্পী/কার্টুনিস্ট/ইলাস্ট্রেটরের নাম বলুন যাদের কাজ আপনাকে অনুপ্রাণীত করে। তাঁদের কোন কাজ গুলো অনুপ্রাণীত করেছিলো?
সাদাত: কার্টুনের ক্ষেত্রে শিশির ভট্টাচার্য। কারন ছোটবেলা থেকে পত্রিকায় তার কাজ দেখেই কার্টুনে আগ্রহ তৈরি হয়। এছাড়া জর্ডানের আমজাদ রাশমি, কিউবার এঞ্জেলো বলিগান, আমেরিকান ক্লে বেনেট, ইকোনমিস্ট-এর কার্টুনিস্ট ‘কাল’ , ক্যারিকেচারে আমেরিকান জেশন সেইলার বা জার্মানির সেবাস্টিয়ান ক্রুগার... আসলে লিস্ট অনেক লম্বা হয়ে যাবে।
পেইন্টার হিসেবে গুস্টাভ ক্লিমট, সাল্ভাদর দালি, ভ্যান গঘ এর কাজ ভাল লাগে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের উপরে সাদাতের কার্টুন |
আরিফ: আপনার শিল্পী/কার্টুনিস্ট হওয়ার পিছনে কার/কাদের অবদান সবচেয়ে বেশি?
সাদাত: শিশির স্যারের কার্টুন দেখে আগ্রহ জন্মায় এবং আকতে শুরু করি। পত্রিকায় আমাকে আকার সুযোগ করে দেন এক সময়ের প্রথম আলোর আবাসিক সম্পাদক আবুল মোমেন। প্রথম আলোর 'আলোকিত চট্টগাম' পাতায়। পরবর্তিতে চারুকলায় ভর্তি হবার পর শিশির স্যারও নানা রকম উপদেশ দিয়ে সাহায্য করেছেন। তাই এই দুজনের অবদান সবচে বেশি বলা চলে।
আরিফ: আপনার জীবনের লক্ষ্য কি? ১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
সাদাত: দশ বছরের পরিকল্পনা করে আমি আসলে আগাইনা। আমি ছোট ছোট পরিকল্পনা করে আগাই। যখন যেটা করি মন দিয়ে করার চেষ্টা করি। সেটাই কয়েক বছর পর একটা জায়গায় নিয়ে দাড় করায়। তবে হ্যা, দশ বছর পর আমি চাই ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করার। মানে কোন অফিস বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম শৃংখলার বাইরে নিজের মত কাজ।
সাদাতের করা বইয়ের প্রচ্ছদের একাংশ |
আরিফ: কেউ যদি আপনার পথ অনুসরণ করে আপনার মত হতে চায়, এবং আপনাকে যদি বলা হয় তাকে তিনটি পরামর্শ দিতে তাহলে আপনি তাকে কি কি পরামর্শ দিবেন?
সাদাত: প্রথমত, দেখার চোখ তৈরি করা। মানে যা কিছু দৃশ্যমান তাকে নানা এঙ্গেল থেকে দেখার চেষ্টা করা। একই সাথে নিজের পারিপার্শ্বকে অনুধাবন করার চেষ্টা করা।
দ্বিতীয়ত, একটা সময় পর্যন্ত প্রতিদিন অসংখ্য ছোট ছোট ড্রইং করা। যেকোন কিছু আকবর চেষ্টা করা। সেগুলো সংগ্রহ করে রাখা এবং মাঝে মাঝে বের করে দেখা।
তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক ব্যাপারটিকে যথাসম্ভব কাজের কোয়ালিটির সাথে ব্লেন্ড না করা। যদিও এটা একটা অনিবার্য বাস্তবতা।কিন্তু অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কে সামনে রেখে শিল্প চর্চা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। সোজা ভাষায় অর্থনৈতিক চিন্তাকে শিল্প ভাবনার মাথায় বসতে দেয়া চলবে না।