কৃপন দুলাভাইয়ের ঈদ সালামি
শরীফ বিল্লাহ বিডি.টুনসম্যাগ.কম এই ঈদটা দুলাভাই আমাদের সাথেই করবেন। খুবই উন্নতমানের কৃপটা হিসেবে তিনি আমাদের কাছে পরিচিত। পকেটে তার হা...
https://bd.toonsmag.com/2015/07/170904.html
শরীফ বিল্লাহ
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
এই ঈদটা দুলাভাই আমাদের সাথেই করবেন। খুবই উন্নতমানের কৃপটা হিসেবে তিনি আমাদের কাছে পরিচিত। পকেটে তার হাত যায়না বললেই চলে। যদিও যায় সে হাত আর বের হয় না। শত চেষ্টা করেও তার থেকে সালামি খসানো আমাদের কাছে দুরহ কাজই। এই কাজে সফলতা মানে সাত সমুদ্র ষোল নদী পার হওয়ার সমান। গত তিন চারটি বছর বিভিন্ন কলাকেীশলে তার থেকে সালামি নিতে চেষ্টা করেছি কিন্তু তিনি উল্টো মহাকেীশল খাটিয়ে আমাদের সে কেীশল লন্ডভন্ড করে দিতে সক্ষম হন। কিন্তু এবার সিদ্বান্ত নিলাম যে করেই হোক তার থেকে সেলামি খসাবোই। এর জন্য আমরা মনে মনে মহাপরিকল্পনা আটলাম। আমাদের এই মহাপরিকল্পনার দলে আছে আমার ছোট ভাই কেরামত ও আমার বড় চাচাতো ভাই ছালামত। চাচাতো ভাইকে দলে রাখার অন্যতম প্রধান কারন হল সে একটু পাকনা টাইপের। এ যাবত কালের কোন মিশনে সে বিফল হয়নি। যত জটিল কঠিন কাজ সে সমাধা করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের তার উপর আস্থা এত বেশি যে তাকে ছাড়া আমাদের মিশন যে সফল হতে পারে তা ভাবতেই পারিনি। ইতিমধ্যে মিশনের কার্যক্রম নিয়ে আমরা একট জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছি। বৈঠকটা অনুষ্ঠিত হবে পুকুরের দক্ষিন পাশের ঝোঁপের ভিতর। সবাই ঠিকমত আসলেও ছালামত আসতে একটু দেরি হয়ে গেল কারন পাশের গ্রামে আরেকটা জরুরি মিটিং শেষ করে সে এই মাএ ফিরেছে। বিরাট ব্যস্ত লোক বলা যায়।ইতিমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটা মশার কামড় খেয়ে ফেলেছি। কামড়ের ছোটে যেভাবে শরীরে থাপ্পড় মেরেছি শুনতে মনে হচ্ছে তালি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হল।
-দুলাভাই যে স্টাইলের লোক তাকে আমাদের ছাই দিয়ে ধরতে হবে, বলল কেরামত।
-আসার সাথে সাথে আমরা দুলাভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরব। কোনভাবেই সালামি দেয়ার আগে ছাড়বো না। প্রয়োজনে পা টানতে টানতে খুলেই ফেলবো-বললাম আমি।
ছালামত এতক্ষন ধরে বোবার মত সব কথা শুনছিল। কোন কথাই বলছিল না। যেহেতু মিটিংয়ের সে প্রধান অতিথি তাই সবার শেষে সে কথা বলবে।
-এত দেরিতে কথা বললেতো আমাদের মশার কামড় খেয়েই মরতে হবে। আর সালামি খাওয়া লাগবে না, বলল কেরামত।
এতক্ষন পর ছালামতের মুখে কথা আসল। আমি যেহেতু সিনিয়র এবং মহা গেয়ানি তাই আমাকে নিয়ে ইনসাল্ট করা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। এর জন্য আমি তিব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাই।
আপনি ক্ষোভ ও নিন্দা পরে জানান। আগে দুলাভাই থেকে টাকা খসানোর ফর্মুলা জানান, বলল কেরামত।
ছালামত মাথা ঝাঁকিয়ে বলতে শুরু করল, দুলাভাই আসার সাথে সাথে আমরা সবাই তার কাছে একসাথে যাবো না। আমাদের সবাইকে দেখলে তিনি হয়তো হার্টফেল খেয়ে ফেলবেন। এতে আমাদের আপা অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যেতে পারেন। তাই আমরা তার কাছে একজন একজন করে যাবো। একজন যদি কোন ভাবে কিছু টাকা খসাতে পারে তাহলে বাকিরা সবাই তার কাছে ঝাঁপিয়ে পড়ব। ফলে তিনি অন্যদের সালামি না দিয়ে থাকতে পারবেন না।
কিন্তু প্রথমে তার সামনে যাবে কে? কেরামত বলল।
তোমরা বার বার ই ভুলে যাচ্ছ আমি সিনিয়র। সেখানে আমিই আগে যাবো এটাই স্বাভাবিক। এরপর আমার সিনিয়রিটি নিয়ে কেউ আঘাত করলে আমি কিন্তু উত্তেজিত হয়ে যেতে বাধ্য হব, বলল ছালামত।
আমরা তার কথা শুনে হালকা ভয় পেলাম।
ঈদের দিন সকালে আমরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ি রেডি থাকলাম। দুলাভাই আমাদের বাড়িতে আসলেন। ছালামত দেীঁড়ে গিয়ে দুলাভাইয়ের পা চেপে ধরল। সাথে সাথে দুলাভাই সে কি কান্না।আমরা তো ভয় পেয়ে গেলাম। অতিরিক্ত টানাটানির কারনে দুলাভাইয়ের পা জয়েন্ট থেকে খুলে গেল কিনা। আমরা দেীঁড়ে গেলাম। আপা সহ বাড়ির সবাই ছুটে আসল। দুলাভাইয়ের পা তো ঠিক ই আছে। কিন্তু তিনি এভাবে কাঁদছে কেন। আমি বললাম দুলাভাই তোমার কি হয়েছে? তুমি কাঁদছ কেন? তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আসার সময় পথে ছিনতাইকারির কবলে পড়লাম।ছিনতাইকারি আমাকে মেরে মানিব্যাগটা নিয়ে গেল। ওখানে আমার সকল টাকা ছিল। সব টাকা নতুন নিয়েছিলাম। আহা কত শখ ছিল শালা শালিদের ঈদে সেলামি দিব। নতুন টাকা দিব। আমার সব আশাই শেষ হয়ে গেল। এখন আমি বাড়ি যাওয়ার ও কোন টাকা নাই।
আমরা তিন পরিকল্পনাকারি একজন আরেকজনের দিকে তাকালাম। দুলাভাই যে কি চালাক তা আমরা হাঁড়ে হাঁড়ে বুঝে গেলাম। আমাদের পরিকল্পনা যে দুলাভাইয়ের পরিকল্পনার কাছে ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল তা বুঝতে আর বাকি রইল না। তাই দ্রুত জায়গা ত্যাগের সিদ্বান্ত নিলাম। যা অবস্থা উল্টো দুলাভাইকে সালামি দিতে হয় কিনা আমাদের। যাওয়ার সময় আমরা এত জোরে দেীঁড়ালাম আমাদের পা দুখানা কেউ দেখেছে কিনা সন্দেহ আছে।