শত শিল্পীর তুলিতে শিল্পাচার্যের প্রতিকৃতি, লালিত দর্শন
ব্যতিক্রমী উদ্যোগ শিল্পকলার বিডি.টুনসম্যাগ.কম মোরসালিন মিজান : শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। বিরল প্রতিভা। বাঙালীর গর্বের ধন। রং তুলির ...
https://bd.toonsmag.com/2014/11/news12xvz.html
ব্যতিক্রমী উদ্যোগ শিল্পকলার
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
মোরসালিন মিজান : শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। বিরল প্রতিভা। বাঙালীর গর্বের ধন। রং তুলির আঁচড়ে দেশকে এঁকেছেন তিনি। তাঁর কালের নিখুঁত বর্ণনা করেছেন। চারুকলার আজকের যে শক্ত অবস্থান, আভিজাত্য, তার মূলে এই মহান শিল্পী। ছবি আঁকার পাশাপাশি ছাত্রদের হাতে কলমে শিখিয়েছেন। গড়ে নিয়েছেন। বাকিদের কাছেও অনুপ্রেরণার অনন্ত উৎস তিনি। শিল্পাচার্যের সরাসরি ছাত্ররা তো বটেই, আজকের নবীন শিল্পীটিও প্রতিনিয়ত জয়নুল আবেদিনকে আশ্রয় করেন। আবিষ্কারের চেষ্টা করেন।
তবে কার চোখে জয়নুল আবেদিন ঠিক কেমন, খুব কমই জানা গেছে। অথবা বিচ্ছিন্নভাবে জানা গেছে। আর তার পর একটি সুচিন্তা। পরিকল্পিত উদ্যোগ। উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে শিল্পকলা একাডেমি। সে অনুযায়ী, এবার খ্যাতিমান ১০০ শিল্পী আঁকবেন জয়নুল আবেদিন ও তাঁর লালিত দর্শন। কিছুদিন ধরেই এ ভাবনা নিয়ে কাজ হচ্ছিল। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে বাস্তবায়ন। একসঙ্গে শত শিল্পীর তুলিতে জয়নুল আঁকার এমন উদ্যোগ দেশে প্রথম। আর তাই কর্মশালা নিয়ে আশাবাদের শেষ নেই। এ উদ্যোগ শিল্পাচার্যকে বহু ব্যঞ্জনায় উপস্থাপন করবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
জানা যায়, শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনে বছরব্যাপী কর্মসূচী পালন করছে শিল্পকলা একাডেমি। এরই অংশ হিসেবে কিংবদন্তি জয়নুল আবেদিনকে তুলে ধরার প্রস্তুতি। একাডেমির চারুকলা বিভাগের ইন্সট্রাক্টর প্রদ্যোৎ কুমার জানান, গত সপ্তাহে কর্মশালার শিল্পী তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন শিল্পাচার্যের সরাসরি ছাত্র ও বর্তমান সময়ের খ্যাতিমান শিল্পীরা। নির্বাচিত শিল্পীদের বাসায় ক্যানভাস ও রং পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। প্রতিটি ক্যানভাসের এক মাপ। ৩০ x ৩৬ ইঞ্চি। শিল্পীরা নিজ নিজ চিন্তার জগৎ ও কল্পনার রং দিয়ে সবকটি ক্যানভাস সাজাবেন।
একাডেমি সূত্র জানায়, শিল্পাচার্যের সরাসরি ছাত্র ছিলেন এমন সৌভাগ্যবান শিল্পীদের প্রায় সবাই আছেন কর্মশালায়। প্রিয় শিক্ষক ও তাঁর ভাবনার জগৎ ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, হাশেম খান, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, রেজাউল করিম, রফিকুন নবী, আবুল বারক্ আলভী, আবু তাহের, মাহমুদুল হক, আব্দুস শাকুর শাহ, হামিদুজ্জামান, বীরেন সোম, মোহাম্মদ মোহসীন, নাসিম আহমেদ নাদভীস, অলকেশ ঘোষের মতো বিখ্যাত শিল্পীরা। বর্তমান সময়ের প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদেরও একটি বড় অংশ আঁকবেন শিল্পাচার্যকে। এ তালিকায় আছেন- শিল্পী রনজিৎ দাস, কনক চাঁপা চাকমা, আতিয়ার ইসলাম এ্যানি, মোখলেছুর রহমান, খালিদ মাহমুদ মিঠু, সৈয়দ হাসান মাহমুদ, আব্দুল মান্নান, রোকেয়া সুলতানা, গোলাম ফারুক বেবুল, রেজাউন নবী, রফি হক, মাহবুবুর রহমান, মাকসুদুল আহসানসহ আরও অনেকে। একেবারে নবীন শিল্পীরাও নিজের মতো করে আঁকবেন।
জানা যায়, উদ্যোগটিকে শিল্পাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা জানানোর সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন শিল্পীরা। কর্মশালায় অংশ নেয়া বরেণ্য শিল্পীদের এক একটি শিল্পকর্মের অর্থ মূল্য এখন অনেক। তকে কর্মশালায় ছবি আঁকতে কোন টাকাই তাঁরা নিচ্ছেন না। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে ছবি আঁকা ও সংগ্রহের কাজ। জাতীয় চিত্রশালায় জয়নুল আবেদিনের নামে স্থাপিত একক গ্যালারিতে এসব ছবির স্থায়ী প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে।
বিশেষ এই কর্মশালা প্রসঙ্গে দেশের বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ভাগ্য সঙ্গে ছিল আমাদের। তাই জয়নুল আবেদিনের মতো মস্তবড় শিল্পীকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলাম। এ দেশে চারুকলার চর্চাকে এগিয়ে নিতে অবিস্মরনীয় ভূমিকা ছিল শিল্পাচার্যের। সে জায়গা থেকে দেখলে কর্মশালায় অংশ নেয়া মানে গুরুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ। একসঙ্গে বহু শিল্পী সুযোগটি পেল। শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, শিল্পাচার্য থেকে আমরা শেকড় আঁকড়ে ধরে থাকা শিখেছি। মাটিকে দেশকে ভালবাসতে শিখেছি। ক্যানভাসে সেইসব চিন্তার প্রতিফন ঘটবে। এভাবে সব মিলিয়ে একটি ভাল কাজ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আয়োজন সম্পর্কে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, জয়নুল আবেদিন ক্ষনজন্মা শিল্পী। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের চারুকলার ইতিহাস রচনা অসম্ভব। শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তাই ব্যতিক্রমী কিছু কাজ করার ইচ্ছে ছিল। সেই ভাবনা থেকেই ১০০ শিল্পীর তুলিতে জয়নুলকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা। শিল্পাচার্য ও তাঁর দর্শন সম্পর্কে ভবিষ্যত প্রজন্মকে আরও আগ্রহী করতে এসব ছবি ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সূত্র : জনকন্ঠ