পেইন্টিং কথন: দ্য লাস্ট সাপার
তানভীর আশিক তিন বছর সময় নিয়ে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি সৃষ্টি করেছেন এক অনবদ্য চিত্রকর্ম। দ্য লাস্ট সাপার। ‘মোনালিসা’র পর এটি তাঁর সর্বাধিক ...
https://bd.toonsmag.com/2014/09/paintings.html
তানভীর আশিক
তিন বছর সময় নিয়ে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি সৃষ্টি করেছেন এক অনবদ্য চিত্রকর্ম। দ্য লাস্ট সাপার। ‘মোনালিসা’র পর এটি তাঁর সর্বাধিক আলোচিত সৃষ্টিকর্ম। ৫২০ বছর পরও এর আবেদন একটুখানি কমেনি। শতাব্দী শতাব্দী ধরে চিত্রকলার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছে ‘দ্য লাস্ট সাপার’।
আমরা লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি নামে চিনলেও তাঁর পুরো নাম লিওনার্দো দি সের পিয়েরো দ্য ভিঞ্চি। তিনি কেবল চিত্রশিল্পীই নন। তিনি একজন ভাস্কর, শরীরতত্ত্ববিদ, গণিতশাস্ত্রবিদ, প্রকৃতিবিজ্ঞানী ও সামরিক বিশেষজ্ঞ। এমনকি জানা যায় তিনি ভালো গানও গাইতেন। শুধু তাই নয় গত শতাব্দীর বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নেপথ্য নায়কও ভিঞ্চি। মোনালিসা, দ্য লাস্ট সাপার, ভার্জিন অব দ্য রকস, মেসিলিয়া প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত শিল্পকর্ম। এ ছাড়া ড্রেফাস ম্যাডোনা, দ্য ক্যাপটিজম অব খ্রিস্ট, দ্য ম্যাডোনা অব দ্য কারনেশন, বেনোইস ম্যাডোনা, দ্য অ্যাডোরেশন অব দ্য মেজাই, লেডি ইউথ অ্যান আরমাইন ও দ্য ব্যাটল অব আনসিয়ারির মতো আরো অনেক চিত্রকর্ম রয়েছে তাঁর সৃষ্টিকর্মের ঝোলায়।
১৯৪৫ সালে ইতালির মিলানের সান্তা মারিয়া দেল গ্রেজির (Santa Maria delle Grazie) ডায়নিং হলের পিছনের দেয়ালে ছবি আঁকার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যে বিল্ডিংয়ের দেয়ালে ছবিটা আঁকতে হবে তা একটি সার্চের সাথে যুক্ত। তিনি আঁকার জন্য বেছে নিলেন বাইবেলের ‘দ্য লাস্ট সাপার’ অংশটুকুর একটি মুহূর্ত। যিশুখ্রিষ্ট তাঁর বারোজন শিষ্যকে নিয়ে মৃত্যুর আগে যে শেষ নৈশভোজ সারেন তাই দ্য লাস্ট সাপার নামে এই ভোজে যিশু তাঁর বারোজন শিষ্যকে নিয়ে রুটি ভাগ করে খান আর পান করেন সোমরস। নৈশভোজে যিশু ঘোষণা করেন এই শিষ্যদেরই একজন তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। তাঁকে ধরিয়ে দেবে। এই ঘোষণার মুহূর্তে যিশু আর তার সঙ্গীদের অভিব্যক্তির আবহই ফুটিয়ে তুলেছেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি তাঁর ‘দ্য লাস্ট সাপার’ চিত্রকর্মে।
ছবিতে যিশুকে মাঝখানে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে রেখে যিশুর বারোজন শিষ্যকে তিনজনের একেকটা দলে ভাগ করে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রথমে এঁকেছিলেন যিশুর ১২ শিষ্যের মুখ। কারো মুখে বিস্ময়, উদ্বেগ, কারো মুখে ভয়, কারো মুখে ছিলো বেদনা আর কারো মুখে সন্দেহ। তারপর দীর্ঘদিন রেখে দিলেন যিশুর মুখহীন শরীর। আঁকা হয় না। তিনি ভাবছেন আর ভাবছেন। কেমন হবে যিশুর মুখ, কী অভিব্যক্তি থাকবে তাতে? শেষে আঁকলেন যিশুর পবিত্রমুখাবয়ব। সেই মুখে ভয় নেই, ঘৃণা নেই, নেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তিনিতো জানেনই সব ঈশ্বরের ছক। তাঁকে ছেড়ে যেতে হবে পৃথিবী। আবেগ অনুভূতি হীন স্বর্গীয় এক মুখের ছবি আঁকলেন ভিঞ্চি।
‘দ্য লাস্ট সাপার’ নিয়ে বেশ কয়েকটি চিত্রকর্ম আঁকা হয়েছে। তবে লিওনার্দোর আঁকা চিত্রটিই সবচেয়ে বিখ্যাত।