ভারতের প্রধানমন্ত্রী অফিসে কার্টুন টাঙ্গিয়ে রাখতেন : আহসান হাবীব
বিডি.টুনসম্যাগ.কম আহসান হাবীব। জনপ্রিয় কার্টুন ম্যাগাজিন 'উম্মাদ' এর সম্পাদক। বাংলাদেশে কার্টুন জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তার ...
https://bd.toonsmag.com/2014/08/blog-post_25.html
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
আহসান হাবীব। জনপ্রিয় কার্টুন ম্যাগাজিন 'উম্মাদ' এর সম্পাদক। বাংলাদেশে কার্টুন জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তার রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা। তার জন্ম সিলেটের মীরাবাজারে। ১৯৫৭ সালের ১৫ নভেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে স্নাতকোত্তর। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬০ এর অধিক। স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান নিয়ে পারিবারিক জীবনযাপন করছেন। মিরপুরের ’উম্মাদ’ পত্রিকা অফিসে তার কার্টুনে আসা, উম্মাদ সম্পাদনা সহ নানা বিষয়ে বিশদ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাদিম মজিদ। সঙ্গে ছিলেন তরুণ লেখক ফরিদুল ইসলাম নির্জন।
নাদিম : আপনি কার্টুনজগতে কিভাবে প্রবেশ করলেন?
আহসান হাবীব : আমার প্রথম কার্টুন প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে দৈনিক অবজারভারে। সেখানে ইয়ং অবজারভার নামে একটি পাতায় আমার কমিকস প্রকাশিত হয়েছিল। আমি কার্টুন আঁকা শিখেছি আমার মেজোভাই মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছ থেকে। সে তখন দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় কার্টুন আঁকত।
নাদিম : বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকা পত্রিকা ’উম্মাদ’। আপনি এ পত্রিকার সম্পাদক। এ পত্রিকায় কিভাবে যুক্ত হলেন?
আহসান হাবীব : উম্মাদের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। প্রকাশ করেছিলেন ইস্তেয়াক হোসেন এবং কাজী খালিদ আশরাফ। আমি দ্বিতীয় সংখ্যায় তাদের সাথে যুক্ত হই এবং নবম সংখ্যা থেকে উম্মাদের সব দায়িত্ব নিজের কাধে নিই।
নাদিম : আপনি একাধারে লেখক, কার্টুনিস্ট এবং সম্পাদক। কোন পরিচয় দিতে নিজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
আহসান হাবীব : আমি কার্টুনিস্ট পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আর লেখালেখি করি শখের বশে।
নাদিম : আপনি কৌতুক নিয়ে বই লিখে থাকেন। এভাবে আলাদা করে কৌতুক নিয়ে বই লেখার কারণ?
আহসান হাবীব : আমাদের দেশে কৌতুক সমৃদ্ধ নয়। আমাদের যে কৌতূকগুলো প্রচলিত আছে, সেগুলো থেকে হাসির অংশটুকু রেখে অপ্রয়োজনীয় অংশটুকু ফেলে দিই। এতে শুধু কৌতুকের বই সমৃদ্ধ হচ্ছে। প্রতিবছর বইমেলায় আমার একটি করে কৌতুকের বই প্রকাশিত হয়।
নাদিম : কার্টুনকে আপনি নিজে কিভাবে দেখেন?
আহসান হাবীব : কার্টুনকে সিরিয়াসলি নেয়া হয় না। একজন দোষী ব্যক্তিকে নিয়ে কার্টুন আঁকলে করলে সে খেপে না। কার্টুন দেখে যদি কেউ রেগে যায়, তাহলে তা কার্টুন হয় না। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোররাজি দেশাই তার অফিসে কার্টুন টাঙ্গিয়ে রাখতেন। কার্টুনগুলো ছিলো তাকে বিদ্রুপ করে আঁকা। এসব কার্টুন থেকে নিজের ভুলগুলো শুধরে নিতে চেষ্টা করতেন।
নাদিম : আপনি উম্মাদ সম্পাদনা ছাড়া আর কি করেন?
আহসান হাবীব : আমার আরেকটি পত্রিকা আছে। ট্রাভেল এন্ড ফ্যাশন। সে পত্রিকা সম্পাদনা করি।
নাদিম : অবসর সময়ে কি করেন?
আহসান হাবীব : বই পড়ি, মুভি দেখি। আসলে আমি অবসর সময়ে লিখি।
নাদিম : কার্টুন সম্পাদনা নিয়ে একটি মজার অভিজ্ঞতা বলুন।
আহসান হাবীব : উম্মাদ পত্রিকায় অনেকে লেখা পাঠায়। কার্টুন দেয়। নতুনদের বড় অংশগ্রহণ থাকে। নতুনদের জন্য ভালো প্লাটফরম এ পত্রিকা। একবার এক ছেলে একটি কার্টুন দিয়ে যায়। আমার পছন্দ হয়নি দেখে তা ডাস্টবিনে ফেলে দিই। পরেরদিন সে ছেলেটি অফিসে এসে দেখে তার কার্টুন ডাস্টবিনে। সে আমাকে অভিযোগ করলে বলি, আসলে উম্মাদের সিলেকটেড লেখাগুলো ডাস্টবিনে থাকে। সে জানে, উম্মাদের সবকিছু উল্টাপাল্টা। তাই আমার কথা বিশ্বাস করে। পরবর্তীতে তার সে কার্টুন সম্পাদনা করে উম্মাদে প্রকাশ করি।
নাদিম : আপনি কার কার কার্টুন পছন্দ করেন বেশি?
আহসান হাবীব : বাংলাদেশে তরুণ কার্টুনিস্টদের মধ্যে মেহেদী হক। ভারতে সুধীর ধর এবং যুক্তরাষ্ট্রে সার্জিও অ্যারাগন।
নাদিম : আপনার হাত ধরে আমাদের দেশে কার্টুন বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
আহসান হাবীব : আসলে আমি একলা উঠিনি। উম্মাদ তরুণদের দারুন প্লাটফরম। এখানে যে কার্টুন নিয়ে আসে, তার কার্টুন ছাপানোর চেষ্টা করি। প্রয়োজন সম্পাদনা করি। তাকে বুঝিয়ে দিই, কার্টুনের এখানে এখানে খুঁত আছে। আজ যারা পরিচিত কার্টুনিস্ট, তাদের জিজ্ঞেস করলে প্রায়জন-ই বলবে তার প্রথম কার্টুন উম্মাদে ছাপা হয়েছে। দেশে কার্টুনিস্ট এখন পেশা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এক একজন কার্টুনিস্ট পঁচিশ হাজার টাকার উপরে বেতন পায়। আমাদের দেশে কার্টুন এক্সট্রিম পর্যায়ে চলে গেছে। আমাদের এখন কমিকসে যেতে হবে। কমিকস নিয়ে আমাদের দেশে কাজ শুরু হয়ে গেছে। মেহেদী হকের নেতৃত্বে ঢাকা কমিকস থেকে গত বছর বই মেলায় ১০ টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
নাদিম : প্রতিবছর উম্মাদ একুশে বইমেলায় স্টল পায়। গত বছর কোন স্টল পায়নি। এখন আপনি কি ভাবছেন?
আহসান হাবীব : বাংলা একাডেমি এবারের বইমেলায় তাদের নতুন নীতিমালা প্রয়োগ করেছে। তারা কোন পত্রিকাকে স্টল দেয়নি। সে কারণে উম্মাদও স্টল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মেলায় বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য উম্মাদকে স্টল বরাদ্ধ দিতে পারত। ভারতে তিনটি কার্টুন পত্রিকা ছিলো। এখন সবগুলো বন্ধ হয়েগেছে। আমাদের পত্রিকা পাঠক কিনে বলে টিকে আছে। মেলা উপলক্ষে আমরা উম্মাদের বিশষ সংখ্যা প্রকাম করতাম। মেলায় স্টল পেলে পাঠকদের সাথে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ হয়। তারা কি ভাবছে, তা ধরতে পারি।
নাদিম : 'টুনস ম্যাগ' কার্টুন ম্যাগজিনের জন্য আপনার পরামর্শ-
আহসান হাবীব : বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে প্রতিদিন যে কার্টুন প্রকাশিত হয়, সেখান থেকে সপ্তাহের সেরা কার্টুন টুনস ম্যাগ প্রকাশ করতে পারে। এটি বিশেষজ্ঞ কারো দ্বারা নয়, আপনাদের দৃষ্টিতে যে কার্টুন সেরা বলে বিবেচিত হবে তা দেয়া যেতে পারে। এছাড়া সপ্তাহের সেরা কার্টুন স্ট্রিপ, নির্বাচিত জোকস, ফানি পাজল এবং কোলাজ কার্টুন দিলে বৈচিত্র্য বাড়বে।
নাদিম : টুনস ম্যাগ বাংলাকে কষ্ট করে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আহসান হাবীব : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।