লোডশেডিংয়ে একদিন আমাদের সাথে যা যা ঘটে গেল

বিডি.টুনসম্যাগ.কম কার্টুন: সংগৃহীত  রফিকুল ইসলাম সাগর  আমি একটানা ঘরে বসে থাকার ছেলে না। তবুও বিদ্যুৎ না থাকায় দীর্ঘ সময় পরিবারকে সময় দিত...

বিডি.টুনসম্যাগ.কম
কার্টুন: সংগৃহীত 



রফিকুল ইসলাম সাগর 
আমি একটানা ঘরে বসে থাকার ছেলে না। তবুও বিদ্যুৎ না থাকায় দীর্ঘ সময় পরিবারকে সময় দিতে হলো। এসময় অর্ধাঙ্গিনীসহ বাড়িতে থাকা মা-বোন সবার একটাই আবদার- (বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্ধকারে আমরা মেয়ে মানুষ একটা পুরুষ মানুষও না থাকলে ভয় করবে) সবার এমন আবদারে বাসায় সময় দিলাম। এর মধ্যে একটা কথা না বললেই নয়, গিন্নী বারবার বলছিল- দেশে কিছু হচ্ছে নাকি, দেশে কিছু হচ্ছে নাকি? বারবার তার এমন চিন্তায় আমার মনেও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েগিয়েছিল - দেশে কিছু হচ্ছে নাকি? যদিও ইন্টারনেটের বদৌলতে খবর পেয়ে গিয়েছিলাম বিদ্যুৎ না থাকার কারন। এটাও নিশ্চিত ছিলাম রাতের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তবু গিন্নীর কথাও তো ফেলে দেওয়ার মতো না, দেশে অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা তাই। 

হতেও তো পারে 'দেশে বড় কিছু হচ্ছে।' গিন্নীর কথা - দেখো বিদ্যুৎ আসার পর বড় ধরনের কোনো ব্রেকিং নিউজ শুনতে পারবা। আমিও ভাবনায় পড়ে গেলাম কি হতে পারে? অন্ধকারের মাঝে ক্ষমতাধর  কোনো ব্যক্তি গুম হলো নাতো? আটক হলো নাতো? দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেল নাতো? নাকি বিশেষ কেউ মারা গেল? যা আমরা বিদ্যুৎ আসার পর ব্রেকিং নিউজে আপডেট পাবো? গিন্নী আর আমার মনের সন্দেহ দূর করতে ফেসবুকে বেশ কয়েকবার ঢু মারলাম। কিন্তু এমন জটিল কিছু হওয়ার গন্ধ তো সেখানে পেলাম না। তবে ফেসবুকে ঢু মারতে গিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্কের ভেলকিবাজি দেখলাম। এই নেটওয়ার্ক থাকে এই থাকে না। আমার মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই নাকি দেশের সবার? নিশ্চিত হতে একে একে সবার মোবাইল চেক করলাম। সবারটার একই অবস্থা। নেটওয়ার্ক নেই। তাহলে সরকার কি নেট বন্ধ করে দিয়েছে? এমন চিন্তাও মাথায় এলো। কিছু হলেই সরকারকে দোষারোপ করা তো আমাদের অভ্যাস। আমিও সেই অভ্যাস প্রয়োগ করলাম। 

কোথায় আছে বিদ্যুৎ? কখন আসবে বিদ্যুৎ? আমাদের জানতেই হবে। জানতে হলে মোবাইলে নেটওয়ার্ক খুঁজতে হবে। এর আগে মোবাইলের নেটওয়ার্ক নিয়ে আক্ষেপ করে ফেসবুকে অনেকের স্ট্যাটাস নজরে পড়ে। এই ঘর ওই ঘর খুঁজে খুঁজেও নেটওয়ার্ক পেলাম না। এতক্ষণ জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস এলেও এখন নেটওয়ার্কের চিন্তায় গরম ধরে গেল। হটাৎ মোবাইলে নেটওয়ার্কের সিগন্যাল দেখতে পেয়ে শান্ত হলাম। সাথে সাথেই ফেসবুকে ঢুকলাম। খুন, গুম, আটকের কোনো খবর নেই! শাকিব খান, বুবলী ও রাত্রীর খবরেও গুরুত্ব নেই! সর্বত্র শুধু বিদ্যুৎ আর বিদ্যুৎ এর খবর। 
এক খবরে দেখাচ্ছে, ফিলিং স্টেশন গুলোতে গাড়ীর পাশাপাশি বড় বড় ড্রাম নিয়ে ডিজেল নিতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। একদিনেই সবার ভেতরে আতঙ্ক বিরাজ করছে বিদ্যুৎ কবে আসবে অনিশ্চিত। সেই আতঙ্ক থেকেই জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চালু রাখতে ড্রামে ড্রামে ডিজেল মজুদ করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এই খবর দেখে অনেকেই হয়তো ডিজেল কিনতে ছুটেছে। পরে যদি দেশে ডিজেল শেষ হয়ে যায়, অথবা দাম বেড়ে যায় এমন ভাবনা থেকে। এভাবেই দেশে যখন যে জিনিসের প্রয়োজন হয় তখন তার সঙ্কট সৃষ্টি হয়ে চড়া দাম হয়ে যায়। আমরাও নিরুপায় বাধ্য হয়ে কিনি। এবার আমি ভেবে বসলাম, তাহলে এই ভিড়ে মোবাইল অপারেটর গুলো কি ডিজেল কিনতে পারেনি? মনে হয় ডিজেল কিনতে না পারায় তারা জেনারেটরের মাধ্যমে টাওয়ার চালু রাখতে পারছে না। তাই মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা হচ্ছে। তাহলে এখানে সরকারের দোষ নেই! দোষ মোবাইল অপারেটরদের। মুহুর্তেই এমন মনে হলো। সহজভাবে এমন চিন্তা করলেও পারতাম, সবাই একসাথে মোবাইল ব্যবহার করায় নেটওয়ার্কে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে তা চিন্তা করিনি। মনে মনে বকা দিয়েছি, চাপ সৃষ্টি হবে কেন? টাকা দিয়ে নেট চালাই, মাগনা তো চালাই না। 

এদিকে খবরে এসেছে মোমবাতির জন্যেও নাকি হাহাকার। সব দোকানে মোমবাতি বিক্রি শেষ। থাকলেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এ ধাক্কায় কি তাহলে মোমবাতি বিক্রেতারা লাভবান হলো?
এরমধ্যে উপর তলার ভাড়াটিয়া আমার আম্মার সাথে গল্প করতে এসে বলছে, 'আপা কারেন্ট আজকে নাও আসতে পারে।' তার কথা শুনে চিন্তায় পড়তে হলো - তিনি এই খবর কোথায় পেলেন? আমি তো পেলাম না। সদ্যই তো ফেসবুকে খবর দেখলাম শিগগিরই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তাহলে উপর তলার ভাড়াটিয়া আন্টি এমন গোপন তথ্য কোথায় পেলেন? চিন্তার বিষয়। এবার গিন্নী আমাকে এসে বলল, তোমার মোবাইলে নেটওয়ার্ক আছে? তাকিয়ে দেখি নেই। গিন্নী সেই আগের চিন্তায় ফিরে এলো। 'দেশে কোনো ঘটনা ঘটছে।' জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় সে মানতে নারাজ।
গিন্নী জোরাজুরি করছে, 'ভাত খেয়ে নাও। চার্জ বাতির চার্জ শেষ হয়ে যাচ্ছে যেকোনো সময় নিবে যাবে। পরে ভাত খেতে পারবে না।' আমি সাফ জানিয়ে দিলাম বিদ্যুৎ না আসলে ভাত খাবো না। আমাকে আগে জানতে হবে where is বিদ্যুৎ? 

অনেকক্ষণ হলো মোবাইলে নেটওয়ার্ক একেবারে নেই! কারো নাম্বারে ফোনও যাচ্ছে না। ততক্ষণে ঘরের সবার খাওয়া শেষ। আমার খাবার টেবিলে ঢেকে রাখা।  গিন্নী উপদেশ দিল, 'মোবাইলের চার্জটা একেবারে শেষ করো না। কারেন্ট যদি না আসে।' আমি বললাম, আসবে। তবে মনে অশান্তি ধরে গেছে এই কারণে যে মোবাইল থাকলে কি হবে অনেকক্ষণ ধরে নেটওয়ার্ক তো নেই। দেশের এমন বিপর্যয়ের সময় আমার মোবাইলে নেট, ইন্টারনেট না থাকলে চলে? যত-ই হোক আমি হলাম দেশের অতি সচেতন নাগরিক। মোবাইলের চার্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাকে টিপতেই হবে। তবে মোবাইলের চার্জ শেষ না হলেও ঘরের চার্জ বাতির চার্জ শেষ হয়ে নিবে গেছে। সবগুলো ঘর অন্ধকার হয়ে গেল। ৬ তলার ভাড়াটিয়া মহিলা এসেছেন পানি নিতে। টাংকিতে পানি নেই। টাংকিতে যা পানি ছিল প্রতি ফ্ল্যাটের মানুষ যার যা আছে বালতি, মগ, বদনা, পাতিল সব কিছুতে পানি ভরে রেখেছে। আমরাও রেখেছি। ৬ তলার ভাড়াটিয়াদের কেউ সারাদিন বাসায় ছিলেন না তাই তারা পানি ভরে রাখতে পারেননি। 

মোবাইলের নেটওয়ার্ক খুঁজতে আমি বাড়ির বাইরে বের হতে যাবো এমন সময় গিন্নী বাঁধা দিয়ে বলে, বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। তার মনে হচ্ছে বাইরে গেলে কোনো বিপদ হতে পারে। অন্ধকারে রাস্তায় যেন গোপন কিছু ঘটছে। ওই যে ওর মাথায় এখনো চিন্তা - দেশে কিছু হচ্ছে! গিন্নীর সাথে সাথে আম্মাও সুর মিলান, থাক বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। তাদের বাঁধার মুখে আমার মনে হলো - বাইরে যেন যুদ্ধ লেগেছে। তাই গেলেই গুলি খেতে হবে। এমন অবস্থায় মোবাইল রিস্টার্ট দিলাম যদি নেটওয়ার্ক আসে। তাতেও কাজ হলো না। এবার বুঝলাম সমস্যা মোবাইলে না নেটওয়ার্কেই। এখন আর আমাকে কে আটকায় আমি বাইরে যাবোই। ঘরে বসে তো ফেসবুকে অনেক খবর নিলাম। এখন বাইরের খবর জানতে হবে। সবাই একসাথে একঘরে বসে ছিলাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে চলে আসব বলে গেঞ্জি গায়ে লুঙ্গি পড়ে মোবাইল হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলাম। কেউ এবার বাঁধা দিলো না। 

গলির রাস্তা থেকে বের হয়ে বড় সড়কে যেতেই মোবাইলে নেটওয়ার্ক পেল। খেয়াল করলাম বিদ্যুৎ না থাকায় পাড়ার দোকান গুলো আগে আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখতে পাই- মূল রাস্তার ওপারের এলাকায় বিদ্যুৎ আছে। বুঝতে বাকি রইল না এবার আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ আসাটা সময় সাপেক্ষ মাত্র। সাথে সাথে ঘরে ফিরে এসে সবাইকে খবর দিলাম, রাস্তায় মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া গেছে গিন্নীকে জানালাম। আর রাস্তার ওপারের এলাকায় বিদ্যুৎ আসছে এটাও জানালাম। তখন পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পেরেছিলাম অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ আসবে। ভাবতে ভাবতেই ঘরের বাতি জ্বলে উঠলো, ফ্যান ঘুরতে শুরু হলো। বিদ্যুৎ আসার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সবাই আগে যার যার মোবাইল চার্জে লাগিয়ে দিলাম। বলা তো যায় না বিদ্যুৎ যদি আবার চলে যায়! 

এই বিভাগে আরো আছে

রম্য গল্প 8399801829571429910

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সঙ্গে থাকুন

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক

বৈশিষ্ট্যযুক্ত

বিশ্বসেরা ১০ কার্টুনিস্ট

শিল্পী রফিকুননবী সাধারণ মানুষের কাছে যতটা না তার ফাইন আর্টসের জন্য পরিচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় তার ‘টোকাই’ কার্টুন চরিত্রের জন্য। এ ...

-

  • ফেসবুকে অনুসরণ করুন

    আঁকা-আঁকি আহ্ববান

    আপনার আঁকা, মজার মজার লেখা, ছবি আঁকার কলা-কৌশল, শিল্পীর জীবনী, প্রবন্ধ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অথবা প্রদর্শনীর সংবাদ টুনস ম্যাগে ছাপাতে চাইলে পাঠিয়ে দিন। আমাদের ইমেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়।

    সহায়তা করুন

    item