কীভাবে আমি ব্যাংকিং শিখলাম
বিশ্বজিৎ দাস বিডি.টুনসম্যাগ.কম রম্য গল্প ইদানিং সব জায়গায় ব্যাংকিং শব্দটা শুনতে পাচ্ছি। বুঝতে পারছি হঠাৎ করেই সবাই ব্যাংক ...
https://bd.toonsmag.com/2016/06/3405.html
বিশ্বজিৎ দাস
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
রম্য গল্প
ইদানিং সব জায়গায় ব্যাংকিং শব্দটা শুনতে পাচ্ছি।
বুঝতে পারছি হঠাৎ করেই সবাই ব্যাংক আর ব্যাংকিং জিনিসটা নিয়ে উৎসাহী হয়ে উঠছে। অথচ আমি নিজেই ব্যাংকিং কী তা জানতাম না।
বুঝবো কীভাবে।
স্কুলে ছিলাম সায়েন্সের ছাত্র। স্বপ্ন দেখতাম বড় হলে ডাক্তার হব। ডাক্তার যদি নাও হই নিদেন পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার তো হবই। আর যদি তা নাও হই, বিসিএস দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হতে কেউ আমাকে বাধা দিতে পারবে না।
সত্যি বলতে আমার জীবনের লক্ষ্য সম্বন্ধে অনেকবার রচনা লিখলেও আসলে জীবনে শেষ পর্যন্ত কী হতে চাই- সে সম্বন্ধে কোন ধারনাই ছিল না আমার।
তাই এসএসসি’র রেজাল্টে যখন এ প্লাস পেলাম না, তখন জীবনের প্রথম ধাক্কাটা খেলাম।
ভর্তির ক্ষেত্রে পছন্দের কলেজের ধারের কাছেও যেতে পারলাম না। যে কলেজে ভর্তি হলাম সেই কলেজে ক্লাস করতে এতটুকুও ইচ্ছে করত না।
সবসময় মনে হত আমার সব বন্ধুরা ভাল কলেজে ক্লাস করছে।ভাল ভাল বান্ধবীর সঙ্গ পাচ্ছে। তবু মনে মনে ক্ষীণ আশা করতাম, এইচএসসি’র ফলাফলে ওদেরকে ছাড়িয়ে যাব। রেজাল্ট যা হল মনে হল চিকার গর্তে গিয়ে লুকাই।
বন্ধুরা সব ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চলে গেল। আর আমি ভর্তি হলাম ডিগ্রী পাস কোর্সে।
এই সময় আমি টাকা-পয়সার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে শুরু করলাম। বাড়ি থেকে হাত খরচ দেয়া বন্ধ হয়ে গেল। বাড়ির সবাই বলল, টিউশনি করে হাতখরচ চালিয়ে নে।
তখনই রেবা আমার জীবনে আসে। পাশের বাড়িতে থাকত। আমার জীবনের প্রথম ব্যাংক। মাঝে মাঝেই আমাকে বেড়াতে নিয়ে যেত। খরচ টরচ ওই দিত। মাঝে মাঝে হাতখরচও ধার দিত।
বুঝতে পারলাম, এ আমার জীবনে চরম সুযোগ। ঋণ নেব কিন্তু শোধ দিতে হবে না। এসময় আমি ঋণ প্রথা সম্পর্কে আরো একটু জ্ঞানী হয়ে উঠি। সিগারেটের দোকানে, হোটেলে বাকিতে জিনিস নিতে শুরু করি।
চান্নু ভাইয়ের সাথে আমার তখনই পরিচয় হয়।
ঠিকাদার। বেশ কিছুদিন উনার সাথে কাজ শেখার আশায় ঘুরঘুর করলাম।
একদিন তার সাথে ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংকটারই প্রেমে পড়ে গেলাম।
পরদিনই রেবাকে ভুজিয়ে ভাজিয়ে এক হাজার টাকা নিয়ে ঐ ব্যাংকে গিয়ে হাজির হলাম।
একাউন্ট খুলব।
ম্যানেজার আমার পূরণকৃত ফরম দেখে অবাক হলেন।
বললেন, ‘এটা কী লিখেছেন?’
ফরমে এক জায়গায় লেখা ছিল, কী কারণে একাউন্ট খুলতে চান?
আমি সত্যি কথা লিখেছিলাম, এই ব্যাংকের সুন্দরী ক্যাশিয়ারকে নিয়মিত দেখার জন্য।
আসলে ফ্যান্টাসির জগতে বাস করতাম তখন। ভাবতাম বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে দিন কাটাব।
উপরওয়ালা বোধহয় আমার মনে কথা জানতে পেরেছিলেন।
তাই হুট করেই আব্বাকে নিজের কাছে ডেকে নিলেন। ছোট দুই ভাইবোন আর মাকে নিয়ে বড় ছেলে হিসেবে আমি পড়লাম মহাবিপদে!
চাকরি পাওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা নেই সেকথা আগেই বুঝেছিলাম। ঠিকাদারি যে আমার মত উড়নচন্ডির কপালে জুটবে না সেও ততদিনে বুঝে নিয়েছি।
বাধ্য হয়ে আব্বার কাপড়ের দোকানে বসতে শুরু করলাম। এই দোকানে জীবনেও বসব না- এরকম প্রতিজ্ঞা একটা করেছিলাম আগে।
অবশ্য প্রতিজ্ঞা করাই হয় ভাঙার জন্য- ততদিনে তা বেশ বুঝতে পারছি।
রেবা তো আমাকে ছাড়া বাঁচবে না- বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল। এখন তো সে ঢাকার এক কোটিপতির স্ত্রী হয়ে ঠিকই বেঁচে আছে।
বাবার ব্যবসায় বসেই বুঝতে পারলাম, ইনভেস্ট দরকার। নইলে ব্যবসা টিকবে না।
কোথায় পাবো টাকা?
একজনের পরামর্শে গেলাম একটা ব্যাংকে। ম্যানেজার ভদ্রলোকের খুব সুনাম শুনেছি। দেখলাম আসলেই ভদ্রলোক বেশ আন্তরিক।
সব শুনে বললেন, ‘এখন তো ব্যাংকে লোন দওয়ার সুযোগ কম। যত কাগজপত্র চাইবে, দিতে পারবেন না।’
দমে গেলাম।
আমার চেহারা দেখে ম্যানেজার বললেন, ‘হতাশ হবেন না। আমি আপনাকে টাকা যোগাড় করে দেব। ইন্টারেস্ট বেশি লাগবে।
আমি উজ্জীবিত হলাম, ‘কত করে দিতে হবে?’
‘মাসে এক লাখে দুই হাজার করে।’
প্রস্তাবটা উল্টে পাল্টে দেখলাম। মন্দ লাগলো না।
সব ভেবে বললাম, ‘ঠিক আছে আমি দেব। কত দিতে পারবেন। আমার দশ লাখ দরকার।’
‘পাঁচ নেন। শুরু করেন আগে। পরে দশ লাখ নেবেন।’
‘ঠিক আছে।’
‘আপনার দোকানের দলিলটা আনবেন।’
‘কেন?’ চমকে গেলাম।
‘নিরাপত্তার জন্য। টাকা নিয়ে কোথাও যে ভেগে যাবেন না- তার কী নিশ্চয়তা। বোঝেনই তো ব্যাংকিংও একটা ব্যবসাই। হাসলেন ম্যানেজার।
বুঝলাম।
ম্যানেজারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ঠিক আগের দিনের কথা।
হঠাৎ দেখা হয়ে গেল বন্ধু কামালের সাথে।
চিন্তিত।
‘কী রে চিন্তিত কেন?’
‘আর বলিস না। কিছু টাকার খুব দরকার। পাচ্ছি না।
‘তোর আবার টাকার প্রবেলম? তোরা দুজনই চাকরি করিস।’
‘হাতিও পাঁকে পড়ে বন্ধু।’
‘তুই আবার কীসের পাঁকে পড়েছিস?’
‘একটা জমির বায়নামা করেছি। এ মাসেই রেজিস্ট্রি নিতে হবে। পাঁচ লাখ টাকা শর্ট পড়েছে।’
‘সরকারি চাকরিতে তো লোন নেয়া যায়। ওখান থেকে নে।’
‘সে তো দরখাস্ত করেছি দুজনে। অর্ডার হতে হতে সামনের মাস। আবার এজি অফিসে দুজনেরই লাখ দুয়েক টাকা পাওনা রয়েছে। সেটাও সামনের মাসেই পাবো। কিন্তু টাকার দরকার এ মাসেই। কেউ যদি কিছু বেশি টাকা সুদ নিয়েও ধার দিত তবে তাও নিয়ে নিতাম।’ বিমর্ষ মুখে বলল কামাল।
মগজে কোথায় যেন ঝিলিক মেরে গেল আমার।
‘ধার দেবার জন্য একজন আছে। সুদ বেশি নেবে। নিবি?’
‘কত নেবে?’
এক মুহূর্ত ভাবলাম।
‘লাখে পাঁচ হাজার মাসে মাসে। নিবি?’
কামাল একমুহূর্ত ভাবল। তৎক্ষণাৎ আমার হাত দুটো চেপে ধরল। ‘খুব উপকার হয় বন্ধু। প্লিজ যোগাড় করে দে।’
দুই হাজারের বিপরীতে পাঁচ হাজার! মন্দ কী? প্রথম মাসেই পনের হাজার টাকা বিনা পুঁজিতে আয় করা যাবে।
তৎক্ষণাৎ বন্ধুকে আগামীকাল আসতে বললাম।
এভাবেই আমি একদিনে ব্যাংকিং শিখে গেলাম।