শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন
আনাস বিল্লাহ বিডি.টুনসম্যাগ.কম স্মরণ কথা বলে যাঁর ছবি তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকল...
![](https://img2.blogblog.com/img/icon18_edit_allbkg.gif)
https://bd.toonsmag.com/2015/12/29700.html
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiLGFJflD09foUdDsflTSJy5KXNgIVAa0iyITG4PRIACbKcbEx8DlZwfoVSYNEJ8e57k2W7ULCu0Hhgyaz1iRoqBjElvz4Ww0oGdmhwYx1U1oFdnNMaq6gM0PDgHPDkct3YQXjFW7mbdhu4/s320/zainul-page-grey.jpg)
আনাস বিল্লাহ
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
স্মরণ
কথা বলে যাঁর ছবি তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শিল্পকলায় অবদানের জন্য তাঁর জীবদ্দশায় তিনি পেয়েছেন শিল্পাচার্য খেতাব।
জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পুলিশের দারোগা। মা জয়নাবুন্নেছা গৃহিনী। নয় ভাইবোনের মধ্যে জয়নুল আবেদিন ছিলেন সবার বড়। পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারের কাছ থেকেই। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকা পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু- ছাগল, ফুল-ফলসহ আরও কত কি এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি বন্ধুদের সাথে কলকাতায় গিয়েছিলেন শুধু মাত্র কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। তিনি শিল্পাচার্য নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে- দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড় এবং আরো অনেক ছবি। ১৯৭০ সালে গ্রাম বাংলার উত্সব নিয়ে আঁকেন ৬৫ ফুট দীর্ঘ তাঁর বিখ্যাত নবান্ন। ১৯৪২-৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের করুণ ছবি এঁকে আমাদের অন্তর আত্নাকে নাড়া দিয়েছেন। যে ছবি গুলোর মাধ্যমে আজো আমরা সেই দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা ও বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করতে পারি। শুধু দুর্ভিক্ষের ছবি নয়, তার আঁকা প্রতিটি ছবিই একেকটি সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বাস্তব অবস্থাকে আমাদের চোখের সামন্যে তুলে ধরে। বাংলা ১৩৪৯ সালের দুর্ভিক্ষের সময় রাস্তায় পড়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষের ছবি ও স্কেচে জয়নুলের ক্যানভাস জীবন্ত হয়ে উঠে। এ ছবি একেঁই মানবতাবাদী এই শিল্পীর খ্যাতি ও সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। জয়নুল আবেদিন ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমীর সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি এখানে কাজ করেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর অন্যতম উপদেষ্টা মনোনীত হন। একই বছর জয়নুল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়।
২০০৯ সালে, বুধ গ্রহের একটি জ্বালামুখ চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন সম্মানে আবেদিন নামে নামকরণ করা হয়। তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য জাতীয় জাদুঘরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জয়নুল আবেদীন গ্যালারী। প্রায় ৭০০ ছবি এতে সংগ্রহশালায় রয়েছে। ধূমপানের প্রতি খুব বাজে আসক্তি ছিল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের। তিনি দিনে এত পরিমানে ধূমপান করতেন যে দিন শেষে সিগারেটের সব ছাই একত্র করে চমৎকার সব শিল্পকর্ম আঁকতেন আর বন্ধুদের সেসব দেখিয়ে মজা পেতেন। প্রথম প্রথম দুই একজন বন্ধু জয়নুলকে অতরিক্ত ধূমপানের ব্যাপারে সতর্ক করলেও বেশিরভাগ সময় তাঁর চিত্রকর্ম এতটাই সুন্দর হত যে বন্ধুরা বিস্মিত হয়ে পরতেন। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, এভাবে মাত্রাতিরিক্ত ধূমপানের ফলে জয়নুল আবেদিন আক্রান্ত হন ফুসফুসের ক্যান্সারে।৯ মে,১৯৭৬ ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে জয়নুল আবেদিন কে ভর্তি করা হয় ঢাকার পিজি হাসপাতালে। সেদিনেই বিছানায় শুয়ে তিনি আঁকেন তাঁর জীবনের শেষ ছবি 'দুই মুখ'। এর ১৯ দিন পর ২৮ মে, ১৯৭৬ মৃত্যু হয় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের।
উত্তরা,ঢাকা।