এমন ভয় কখনো পাইনি -চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন
বিডি.টুনসম্যাগ.কম ভয়ঙ্কর রাত কাটালাম। ভয়ঙ্কর। এখনও থেকে থেকে শিউরে উঠছি। আতঙ্ক কেমন একটা ঘোর লাগিয়ে দিয়েছে । শুক্রবার (১৩ নভেম্বর)...
https://bd.toonsmag.com/2015/11/15806.html
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
ভয়ঙ্কর রাত কাটালাম। ভয়ঙ্কর। এখনও থেকে থেকে শিউরে উঠছি। আতঙ্ক কেমন একটা ঘোর লাগিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) রাতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এমনই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন প্যারিস প্রবাসী বিখ্যাত বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। গতকাল (১৪ নভেম্বর) আনন্দবাজার পত্রিকা প্রকাশ করে তার এই প্রতিক্রিয়া।
শাহাবুদ্দিন বলেন, রাত তখন সাড়ে ৮টা। ডিনারের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। আমার মেয়ে চিত্র তখনও ফেরেনি। বাস্তিলের দিকে গিয়েছে। প্রত্যেক উইকএন্ডে সে বন্ধুদের সঙ্গে বাস্তিলের দিকে যায়। তরুণ প্রজন্মের ভিড়ভাট্টাই ওদিকে বেশি। উইকএন্ডে ভিড় আরও বেশি থাকে। আমিও সন্ধ্যাবেলা বাস্তিলের দিকে গিয়েছিলাম। তরুণ চিত্রীদের একটা প্রদর্শনী চলছে। সেটা দেখে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছি। চিত্রর ফিরতে রাত হবে। সে ডিনার করেই ফিরবে। তাই আমি আর আমার স্ত্রী ডিনারের জন্য তৈরি হচ্ছি। চিত্র ফোন করল। ত্রস্ত কণ্ঠস্বর। সে জানাল, খুব বিপদ। বাস্তিল এলাকার একটি ক্যাফের বেজমেন্টে সে লুকিয়ে রয়েছে আরও অনেকের সঙ্গে। সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিত্র বলছিল, খুব গোলাগুলি চলছে। মনে হচ্ছে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
আমার তো বিশ্বাস হচ্ছিল না। স্ত্রীকে বললাম টিভি চালাতে। নিউজ চ্যানেল দেখে আমরা হতবাক। একটু আগেই যেখান থেকে ঘুরে এলাম, সেখানে এ কী অবস্থা! রীতিমতো যুদ্ধ চলছে। সেনাবাহিনী ছোটাছুটি করছে। গোলাগুলি চলছে। জানতে পারলাম ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে প্যারিস। খুব টেনশন শুরু হয়ে গেল। শুধু ভাবছি মেয়েটাকে কখন দেখতে পাব। আদৌ দেখতে পাব তো? খুব অসহায় লাগছিল আমাদের। তবে চিত্র মাঝে মধ্যে সুযোগ মতো ফোন করে নিজের খবর দিচ্ছিল। ওরা ক্যাফেতে বেশিক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারেনি। আলো নিভিয়ে সবাই বেজমেন্টে চলে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু যুদ্ধ এমন ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছিল যে, ওরা ভয় পেয়ে যায়। যে রাস্তায় ওই ক্যাফেটা, সেই রাস্তাতেই বাতাক্লঁ কনসার্ট হল। ফলে বিস্ফোরণ, গোলাগুলি, আর্তনাদ, মৃত্যু সব চলছিল চিত্রদের ঘিরেই। ওদের মনে হচ্ছিল ক্যাফেটাতেও বোমা হামলা হতে পারে। তাই পিছনের দরজা দিয়ে লুকিয়ে বেরিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে কোনোক্রমে পিছন দিকের একটা গার্ডেনে পৌঁছায় চিত্ররা। তার পাশে সার সার বাড়ি। কিন্তু সব অন্ধকার। শুধু স্ট্রিট লাইটগুলো জ্বলছে। হামলার ভয়ে বাড়িঘর, দোকানপাট, ক্যাফে-রেস্তোরাঁয় সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। দরজা-জানালা সব বন্ধ। কারও বাড়ির ভেতরে লুকিয়ে যে প্রাণ বাঁচাবে, তারও উপায় নেই। কিছুক্ষণ পর চিত্রর ফোন পেলাম। ফোন ধরেছি। দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। চিত্র জানাল, এক মহিলা নিজের বাড়িতে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। সেখানেই তাদের লুকিয়ে থাকতে হবে আরও কিছুক্ষণ। হতে পারে অনেক ক্ষণ। পুলিশ কাউকে বাইরে বেরতে নিষেধ করেছে।
রাত ১২টা নাগাদ পুলিশ জানাল, সন্ত্রাসীরা শেষ। চিত্ররাও ততক্ষণে একত্র হতে পেরেছে। তবে প্যারিস পুরোপুরি সন্ত্রাসীমুক্ত কিনা, তা তখনও নিশ্চিত নয়। আতঙ্ক গিলে ফেলেছে গোটা শহরটাকে।
মেয়ে সুস্থ রয়েছে জানতে পেরেই আমার অন্য বন্ধু আর পরিচিতদের খোঁজ নিতে শুরু করি। বাস্তিল চত্বরে বিভিন্ন ক্যাফে, রেস্তোরাঁয় অনেক বাঙালি কাজ করেন। বেশিরভাগই বাংলাদেশের। ফোন করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। জানতে পারি তারাও অক্ষত রয়েছেন। বন্ধু-বান্ধবরা আমাদেরও বারবার ফোন করছিলেন। খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। প্রশাসন এবং রেডক্রসসহ নানা সংগঠন ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে। জখমদের উদ্ধারের সঙ্গে আটকে পড়া মানুষদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করছিল তারা। চিত্রকে অবশ্য আমার এক বন্ধু নিজের গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দিল। তখন ভোর চারটে। মেয়েকে গাড়ি থেকে অক্ষত নামতে দেখে বুক থেকে যেন পাথর নামল।
এত ভয় আগে কখনও পাইনি। এত অসহায় আগে কখনও মনে হয়নি নিজেকে। মুম্বাইয়ে যে রকম হামলা হয়েছিল, প্যারিসে হুবহু সে রকমই দেখলাম। মুম্বাইয়ের ঘটনা টিভিতে দেখেছিলাম। ভয়ঙ্কর! এ বার প্যারিসে নিজেই সেই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেলাম। এমন জঘন্য কাজ কারা ঘটাতে পারে! কোন ধরনের মানুষ তারা? অথবা আদৌ মানুষ কি? আমার সত্যিই আতঙ্কের ঘোর কাটছে না। গোটা রাত ঘুমুতে পারিনি। এখন কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ব, তেমন মানসিক স্থিতিতে পৌঁছতে পারছি না।
ভয়ঙ্কর রাত কাটালাম। ভয়ঙ্কর। এখনও থেকে থেকে শিউরে উঠছি। আতঙ্ক কেমন একটা ঘোর লাগিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) রাতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এমনই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন প্যারিস প্রবাসী বিখ্যাত বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। গতকাল (১৪ নভেম্বর) আনন্দবাজার পত্রিকা প্রকাশ করে তার এই প্রতিক্রিয়া।
শাহাবুদ্দিন বলেন, রাত তখন সাড়ে ৮টা। ডিনারের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। আমার মেয়ে চিত্র তখনও ফেরেনি। বাস্তিলের দিকে গিয়েছে। প্রত্যেক উইকএন্ডে সে বন্ধুদের সঙ্গে বাস্তিলের দিকে যায়। তরুণ প্রজন্মের ভিড়ভাট্টাই ওদিকে বেশি। উইকএন্ডে ভিড় আরও বেশি থাকে। আমিও সন্ধ্যাবেলা বাস্তিলের দিকে গিয়েছিলাম। তরুণ চিত্রীদের একটা প্রদর্শনী চলছে। সেটা দেখে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছি। চিত্রর ফিরতে রাত হবে। সে ডিনার করেই ফিরবে। তাই আমি আর আমার স্ত্রী ডিনারের জন্য তৈরি হচ্ছি। চিত্র ফোন করল। ত্রস্ত কণ্ঠস্বর। সে জানাল, খুব বিপদ। বাস্তিল এলাকার একটি ক্যাফের বেজমেন্টে সে লুকিয়ে রয়েছে আরও অনেকের সঙ্গে। সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিত্র বলছিল, খুব গোলাগুলি চলছে। মনে হচ্ছে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
আমার তো বিশ্বাস হচ্ছিল না। স্ত্রীকে বললাম টিভি চালাতে। নিউজ চ্যানেল দেখে আমরা হতবাক। একটু আগেই যেখান থেকে ঘুরে এলাম, সেখানে এ কী অবস্থা! রীতিমতো যুদ্ধ চলছে। সেনাবাহিনী ছোটাছুটি করছে। গোলাগুলি চলছে। জানতে পারলাম ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে প্যারিস। খুব টেনশন শুরু হয়ে গেল। শুধু ভাবছি মেয়েটাকে কখন দেখতে পাব। আদৌ দেখতে পাব তো? খুব অসহায় লাগছিল আমাদের। তবে চিত্র মাঝে মধ্যে সুযোগ মতো ফোন করে নিজের খবর দিচ্ছিল। ওরা ক্যাফেতে বেশিক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারেনি। আলো নিভিয়ে সবাই বেজমেন্টে চলে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু যুদ্ধ এমন ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছিল যে, ওরা ভয় পেয়ে যায়। যে রাস্তায় ওই ক্যাফেটা, সেই রাস্তাতেই বাতাক্লঁ কনসার্ট হল। ফলে বিস্ফোরণ, গোলাগুলি, আর্তনাদ, মৃত্যু সব চলছিল চিত্রদের ঘিরেই। ওদের মনে হচ্ছিল ক্যাফেটাতেও বোমা হামলা হতে পারে। তাই পিছনের দরজা দিয়ে লুকিয়ে বেরিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে কোনোক্রমে পিছন দিকের একটা গার্ডেনে পৌঁছায় চিত্ররা। তার পাশে সার সার বাড়ি। কিন্তু সব অন্ধকার। শুধু স্ট্রিট লাইটগুলো জ্বলছে। হামলার ভয়ে বাড়িঘর, দোকানপাট, ক্যাফে-রেস্তোরাঁয় সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। দরজা-জানালা সব বন্ধ। কারও বাড়ির ভেতরে লুকিয়ে যে প্রাণ বাঁচাবে, তারও উপায় নেই। কিছুক্ষণ পর চিত্রর ফোন পেলাম। ফোন ধরেছি। দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। চিত্র জানাল, এক মহিলা নিজের বাড়িতে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। সেখানেই তাদের লুকিয়ে থাকতে হবে আরও কিছুক্ষণ। হতে পারে অনেক ক্ষণ। পুলিশ কাউকে বাইরে বেরতে নিষেধ করেছে।
রাত ১২টা নাগাদ পুলিশ জানাল, সন্ত্রাসীরা শেষ। চিত্ররাও ততক্ষণে একত্র হতে পেরেছে। তবে প্যারিস পুরোপুরি সন্ত্রাসীমুক্ত কিনা, তা তখনও নিশ্চিত নয়। আতঙ্ক গিলে ফেলেছে গোটা শহরটাকে।
মেয়ে সুস্থ রয়েছে জানতে পেরেই আমার অন্য বন্ধু আর পরিচিতদের খোঁজ নিতে শুরু করি। বাস্তিল চত্বরে বিভিন্ন ক্যাফে, রেস্তোরাঁয় অনেক বাঙালি কাজ করেন। বেশিরভাগই বাংলাদেশের। ফোন করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। জানতে পারি তারাও অক্ষত রয়েছেন। বন্ধু-বান্ধবরা আমাদেরও বারবার ফোন করছিলেন। খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। প্রশাসন এবং রেডক্রসসহ নানা সংগঠন ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে। জখমদের উদ্ধারের সঙ্গে আটকে পড়া মানুষদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করছিল তারা। চিত্রকে অবশ্য আমার এক বন্ধু নিজের গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দিল। তখন ভোর চারটে। মেয়েকে গাড়ি থেকে অক্ষত নামতে দেখে বুক থেকে যেন পাথর নামল।
এত ভয় আগে কখনও পাইনি। এত অসহায় আগে কখনও মনে হয়নি নিজেকে। মুম্বাইয়ে যে রকম হামলা হয়েছিল, প্যারিসে হুবহু সে রকমই দেখলাম। মুম্বাইয়ের ঘটনা টিভিতে দেখেছিলাম। ভয়ঙ্কর! এ বার প্যারিসে নিজেই সেই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেলাম। এমন জঘন্য কাজ কারা ঘটাতে পারে! কোন ধরনের মানুষ তারা? অথবা আদৌ মানুষ কি? আমার সত্যিই আতঙ্কের ঘোর কাটছে না। গোটা রাত ঘুমুতে পারিনি। এখন কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ব, তেমন মানসিক স্থিতিতে পৌঁছতে পারছি না।