অপারেশন ক্রাপ্রো-0001

মোঃ জাহিদুল ইসলাম বিডি.টুনসম্যাগ.কম সায়েন্স-ফিকশন চারপাশে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। অন্ধকার রাত। বর্তমানে পৃথিবী চালানোর কোন মানুষের প্রয়ো...

মোঃ জাহিদুল ইসলাম
বিডি.টুনসম্যাগ.কম

সায়েন্স-ফিকশন

চারপাশে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। অন্ধকার রাত। বর্তমানে পৃথিবী চালানোর কোন মানুষের প্রয়োজন হয়না। নির্দিষ্ট সময় পর পর মানুষকে পাঁচ মিনিট করে ঘরের বাইরে বের হওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হয়। দ্বাদশ মাত্রার অতিউন্নত রোবটদের কড়া পাহাড়ায় চলে মানুষের জীবন। এমনি ধরা-বাঁধা নিয়মে অতিষ্ট হয়ে রোবট শাসনের প্রতি বিদ্রোহ জানাতে বেনজামিন গ্যারে চিৎকার করতে করতে রাস্তায় নেমে পড়ে। কিছুক্ষণ পর পর শহরের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে রাখা উন্নতমানের ড্রোনগুলো আকশে উড়ে বেরাচ্ছে। ড্রোন নাম্বার সি-৮৮টি ট্রপোস্ফিয়ার মন্ডল থেকে বেনজামিনের সামনে নেমে আসে। বেনজামিন নিয়ম ভঙ্গের কারণে বেনজামিনকে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে। বেনজামিন ড্রোনের যান্ত্রিক কণ্ঠস্বরে কান না দিয়ে কাঠের লাঠি হাতে ড্রোনের দিকে উদ্ধত ভঙ্গিতে নিজের দাবীর কথা জানাতে থাকে।

"সিটিজেন, রিটার্ন টু ইউর হোম ইমিডিয়েটলি"
'নো, দেয়্যার ইজ নো হোম। '
"সিটিজেন,ইটজ ইউর ফাইনাল ওয়ার্নিং ;ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, ফাইভ "
বিকট শব্দ করে ড্রোনের ভেতর থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য বেরিয়ে আসে। বেনজামিনের দেহ মুহূর্তেই ধ্বংসাবশেষ ছাইয়ে পরিণত হয়। ড্রোন তার নির্দেশিত দায়িত্ব সমাপ্ত করে নিজ কর্মস্থানে ফিরে যায়। বাসার ভেতরে বেনজামিনের স্ত্রী, তার ছোট ছেলে জেফরনকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। রোবটদের কড়া নজরদারিতে এভাবেই চলছিলো মানবসভ্যতার জীবন-যাপন। সিনথেটিক খাদ্য-দ্রব্য খেয়েই বর্তমান রোবট সাম্রাজ্যভুক্ত মানুষের জীবন-যাপন কাটে। প্রতিদিনই নিয়ম ভঙ্গ করার কারণে হাজারো মানুষ ড্রোনের এই যান্ত্রিক হত্যার শিকার হয়। শহরের অনেকেই রোবটের হাতে মারা যাওয়ার চেয়ে আত্মহত্যার পথই বেছে নেয়। একমাত্র, হাতে গোঁণা কয়েকজন মানুষ ছাড়া একসময় মানুষ বিলুপ্তির পথে চলে যেতে থাকে। গত কয়েক শতাব্দী ধরে রোবটদের দাসত্ব শিকার করতে করতে মানুষের আচার-ব্যাবহারও রোবটদের মত হয়ে যায়। শহরে বন্যপ্রাণীদের আড্ডাখানা হয়ে উঠে। বন ছেড়ে বন্যপ্রাণীরা শহর-তল্লাটে চলে আসে। প্রাচীন দালান-কোঠা কিংবা অফিস পরিত্যক্ত হয়ে থাকতে থাকতে দেওয়ালের গায়ে শ্যাঁওলা আর মরিচায় ছেয়ে যায়। মহিলাদের গর্ভে বাচ্চা হওয়ার বদৌলতে বর্তমানে ক্লোনিং সিস্টেমে মানব শিশুর জন্ম দেয়া হয়। এমনই, প্রতিকূল এক আইনের মাঝে অনেকবছর পর প্রথম মায়ের গর্ভে জন্ম নেয় ল্যারিসন। আইন ভঙ্গের কারণে অবশ্য ল্যারিসনের বাবা-মা দু'জনকেই জীবন দিতে হয়েছিল।

ছোট্ট ল্যারিসন, সিনথেটিক বৃষ্টির কারণে অবশ্য সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিল। বৃষ্টির ঝমঝমানো শব্দের কারনে ড্রোনরা ল্যারিসনের কান্নার শব্দ শুনতে পায়না ;এজন্য, ল্যারিসনের খবর না নিয়েই তারা তাদের কর্মস্থানে ফিরে যায়। ছোট্ট ল্যারিসন ধীরে ধীরে বড় হয় আন্তঃগ্যালাক্টিক সন্ত্রাসীবাহিনীদের কাছে। সেদিন রাত্রে ল্যারিসনদের বাসার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলো ব্রুনাই সংঘটনের পরিচালক নেক্টাম। সন্ত্রাস হলেও নেক্টাম মানুষ ছিলো তাই ছোট ল্যারিসনকে ওভাবে বৃষ্টির মাঝে ফেলে যেতে পারেননি।

আন্তঃগ্যালাক্টিক প্রতিরক্ষা বাহিনীদের সফটওয়্যাক ক্র্যাক ও রোবটদের হাতিয়ার চুরি করার মত বেশ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি দিয়ে, ল্যারিসনের এলেবেলা কেটেছে। পৃথিবী সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র কোন আগ্রহ ছিলোনা। যে কোন প্রোগ্রামধারী রোবটদের মাঝে বাগ ফিক্স করে প্রোগ্রাম নষ্ট করে দেওয়ার মাষ্টার ছিলো ল্যারি ওরফে ল্যারিসন। প্রতিদিনের নিউজ বুলেটিনের শীর্ষে থাকা এ সন্ত্রাসীর নাম পৃথিবীর মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিলো। বিজ্ঞান একাডেমীতে কাজ করার জন্য ল্যারিকে একসময় প্রস্তাব দেয়া হয়। ল্যাবি প্রস্তাবের ফাঁদ বুঝতে পেরে বিজ্ঞান একাডেমীর ওয়েব পোর্টালের ফায়ারওয়াল ক্রাশ করে দেয়।
"নাহ আর ঠিক সহ্য করা যাচ্ছেনা, এমন প্রতিনিয়ত হতে থাকলে বিজ্ঞান একাডেমীর পরিচালকের চেয়ার টিকিয়ে রাখা কষ্ট্যকর হয়ে যাবে"- কথাগুলো মনে মনে বলতে বলতে মিউনিখে অসকর্পের হেড অফিসে নিজের ল্যাবোরেটরিতে টিটিনাকে শেষবারের মতো চোখ বুলিয়ে আশ্বস্ত হলেন ডঃ ব্রাড। বুক পকেটে কলমের মতো ছোট্ট একটি টিউব , আর হাতে ডকুমেন্ট ভর্তি ব্রিফকেস নিয়ে রওনা হলেন লিফটের দিকে । নিচে পার্কিং এ
অপেক্ষায় আছে ইরানের প্রেসিডেন্টের দূত, গন্তব্য ইরান তারপর আরব-আমিরাত। এদিকে ক্রাপ্রো-0001 এ নিজেদের লিভিং প্লেস থেকে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে জেফরন আর তার সঙ্গিনী এমিলিয়া। কারণ আজ মধ্যরাত থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ক্রাপ্রো-0001 অর্থাৎ পৃথিবীর সম্পূর্ণ নিরীক্ষণে রাখা মানবসভ্যতায় চলবে অ্যানুয়াল পিউরিফিকেশন ডে। নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত কন্টেইনার পূর্ণ করতে ব্যার্থ হওয়ায় তাদের দুইজনের নামের পাশে পয়েন্ট টেবিলে রেড মার্কিং করা, তাই পালানো ছাড়া অন্য কোন বিকল্প পথ নেই তাদের সামনে। পয়েন্ট তালিকায় মাইনাসে থাকা অধিবাসীদের খুঁজে হত্যা করতে আছে  সি-৮৮টি এর ড্রোনিং করা সাইবর্গ দল, সেই সাথে যদি কোন অধিবাসী টেবিলে রেড মার্কিং এ থাকা কাউকে জীবিত বা মৃত
উপস্থাপন করতে পারে তার জন্য বরাদ্দ এক
বছরের জন্য দশ হাজার ইউনিট। এ বছরের মৃত্যুদন্ড দেয়ার জন্য টার্গেট করা হয়েছে ২০৩ জনকে। কারণ একটাই ক্রাপ্রো-0001 সেক্টরে নিজেদের দায়িত্বরত কাজে এরা সবাই ব্যার্থ। প্রায় হাজার যুগ ধরে চলা আইন আজ আরও একবারের মতো শুরু
হতে বাকি মাত্র কয়েক ঘণ্টা। ল্যারি, ক্রাপ্রো-0001 এর বিজ্ঞান একাডেমীর ফায়ারওয়াল ক্রাশ করেছিলো কিন্তু একসেস করার চেষ্টা করেনি। শুধু বিজ্ঞান একাডেমির পরিচালককে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলো, ল্যারির সাথে দ্বন্দ্বে জড়ালে পরিণতি কি হতে পারে ?

হলোগ্রাফিক স্ক্রিণে হাজার যুগ পুরোনো "এভিচির-ওয়েক মি আপ", গানটা ছেড়ে দিয়ে বিজ্ঞান একাডেমীর ওয়েবসাইটে তাদের কাজ-কর্ম নিয়ে ল্যারি কিছুটা গবেষণার চেষ্টা করলো। বিভিন্ন কোড ভেঙে মিশনগুলো বুঝে নিলো। নিউজপোর্টালের একদম নিচের একটা নিউজ ল্যারিকে মুহুর্তেই পাগল করে তুললো,
"সাল 2945। মিঃ জনসন ও মিসেস মার্গারেট দীর্ঘ কয়েক যুগ পর আইন ভঙ্গ করে মানবসন্তান জন্ম দিয়েছেন কিন্তু তাদের সন্তান বর্তমানে নিখোঁজ। "
ল্যারির শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুঁটে উঠে। মুহুর্তেই পুরো ক্রাপ্রো-0001 এর নেটওয়ার্ক হ্যাক করে কাজ-কর্ম বন্ধ করে দেয়। জেফরন আর এমিলিয়া এ সুযোগে জেটচালিত জুতো পরে ক্রাপ্রো-0001 থেকে বেরিয়ে আসে।বাইরের পরিত্যক্ত পৃথিবীতে অভিযোজন করার চেষ্টা করে। কপালের উপর ছোট্ট ডিভাইসটা কপালের ভেতর থেকে টেনে বের করে ভেঙে ফেলে। তারা এখন মুক্ত তাদের ট্রাক করার আর কোন পন্থাই ক্রাপ্রো-0001 এর বিজ্ঞান সংস্থার কাছে নেই। ল্যারি মহাকাশ থেকে পুরো ব্যাপারটা স্বচক্ষে দেখলো। মহাকাশ থেকেই ক্রাপ্রো-0001 কে রোবট শাসন থেকে বাঁচানোর একটা মহাপরিকল্পনা আটঁলো।

ল্যারি তার পালিত বাবা নেক্টামের সাথে একটা ছোট-খাট ব্যাবসা করার প্রস্তাব দিলো। বিনিময়ে পৃথিবীর অর্থাৎ ক্রাপ্রো-0001 এর শাসনকর্তার আসন এবং দশ হাজার ইউনিট। প্রাইজমানির কথা শুনে নেক্টামের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। ল্যারির পরিকল্পনা শোনার পর নেক্টামের জ্বলজ্বল করা চোখ নিমিষেই শুকনো কিচমিচের মত হয়ে গেল। নেক্টাম ক্রাপ্রো-0001 এর সাথে বিদ্রোহে নারাজ। ব্রুনাই একটা ছিঁচকে চোরের দল, হঠাৎ করে এত বড় অপারেশনে গিয়ে নিজেদের পুরো অস্তিত্বই বিলীন করতে কে বা আগ্রহী হয় !
ল্যারি কোনকিছুই শুনতে চাইলোনা, নিজের পরিকল্পনায় নিজের উপস্থিতি অপরিবর্তনীয় রাখলো। ল্যারি কয়েকদিন ধরে "অপারেশন ক্রাপ্রো-0001" এর জন্য প্রস্তুত করছিলো। আয়রন থ্রাস্টারের তৈরী শক্তিশালী মহাকাশযান জনসন & মার্গারেট নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে পরীক্ষা করছিলো। সাধারণ মহাকাশযানের চেয়ে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন  করার চেষ্টা করছিলো। রোবটদেরকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ল্যারি নতুন এক মেশিন তৈরী করলো, যা মুহুর্তেই যে কোন প্রোগ্রাম করা রোবটের প্রোগ্রাম ক্র্যাকেবল করতে সক্ষম। এছাড়া, রোবটদের নিক্ষেপিত বিস্ফোরক থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে লেজার-রশ্মির সাহায্য নিলো।

৩০ শে আগষ্ট,৩০৪৯ সাল।
ডঃ ব্রাড পৃথিবীকে অমরত্ব প্রদান নিয়ে ক্রাপ্রো-0001 এ অধিবেশনের আয়োজন করেছেন। তিনি আজ মানুষের অমরত্বের সূত্র ব্যখ্যা করবেন। ক্রাপ্রো-0001 এ উন্নত সব প্রতিরক্ষাকারী রোবটে বিপ বিপ শব্দ করছে। ল্যারি তার অপারেশনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। হঠাৎ আকাশ কালো অন্ধকারচ্ছন্নে ছেয়ে এলো। ডঃ ব্রাড আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের রৌদ্রোজ্বল আকাশ ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিলেন। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানালেন,  প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাজ করা সম্ভব নয়। এটা প্রাকৃতিক মেঘ, সিনথেটিক মেঘ হলে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ছিলো। ডঃ ব্রাড রাগে গজগজ করতে করতে মঞ্চে উঠলেন।
ল্যারি তার জনসন & মার্গারেট নামের মহাকাশযান নিয়ে ট্রপোস্ফিয়ার অর্থাৎ মেঘের পুঞ্জিভূত অঞ্চল থেকে ক্রাপ্রো-0001 এর উপর গুলিবর্ষন শুরু করে। ডঃ ব্রাড ব্যাপারটা প্রচন্ড কঠোরহস্তে দমন করার সিদ্ধান্ত নেন। পনেরোটা রবোট একইসাথে আকাশের দিক করে ফায়ারিং করে এতে ল্যারির অনুন্নত রোবট মুহুর্তেই পরাজয় স্বীকার করে নেয়। ল্যারি নিজের যান নিয়ে যথেষ্ট দক্ষতার সাথে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়।
ক্রাপ্রো-0001 এ স্পেয়ার ড্রোনগুলো মুক্ত করে দেয়া হয়। ল্যারি অটোপাইলট অন করে, ওয়াইন্ডপ্রুফ স্যুট পরে যানের আশেপাশের ড্রোনগুলো নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাতে থাকে । ড্রোনগুলো ল্যারির আবিষ্কৃত যন্ত্রের কাছে আসতেই ল্যারির নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। অন্যদিকে, ডঃ ব্রাডের ডাকে আন্তঃগ্যালাক্টিক প্রতিরক্ষা দল চলে আসে। নেক্টাম সোলার নেটে ল্যারির আক্রমণ কৌশল দেখে, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিজেদের পুরো দল নিয়ে ল্যারির সাহায্যে এগিয়ে আসে। ল্যারি ক্রাপ্রো-0001 এর রোবটগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় কিন্তু, ক্রাপ্রো-0001 এর নেটওয়ার্কের আওতায় পুরো পৃথিবীকে শাসন করা টিটিনাকে এখনো ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি।

টিটিনাকে ধ্বংস করা সম্ভব না হলে, রোবটগুলো আগামী দেড়ঘন্টা পর আবার নিজ নিজ অনলাইনে চলে আসবে। ডঃ ব্রাডের হাত থেকে ক্রাপ্রো-0001 -কে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। ল্যারি তার নিয়ন্ত্রণে অধিন্যস্ত রোবটগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে জয়েন্ট তৈরি করতে থাকে। বিরাটকার রোবটগুলোকে একসাথে জয়েন্ট করার পর জায়েন্টটাকে দূর থেকে বৃহাদার প্লেটের মত লাগছিলো। ডঃ ব্রাড, টিটিনা রোবটটাকে অনলাইনে আনতে ক্রাপ্রো-0001-এর উত্তরদিকে সমুদ্রের উপর নির্মানকৃত ভি-সেক্টরের দিকে নিয়ে যায়।

টিটিনা। ক্রাপ্রো-0001 সহ পুরো পৃথিবীর রোবটদের সাথে নেটওয়ার্ক সংস্থাপনকারী রোবট। হাইড্রোজেন চুষে নেওয়া সমুদ্রের ভি- সেক্টরে পৌঁছুনের আগেই বৃহাদাকার জয়েন্ট প্লেট নিয়ে ল্যারি ভি-সেক্টরের দিকে এগিয়ে যায়। ভি-সেক্টরকে প্রটেক্ট করতে প্রচন্ড দূর-দূরান্ত থেকে অতিদ্রুত ড্রোনগুলো গুলিবর্ষণ করতে থাকে। ড্রোনগুলো অবশ্য বিপদসীমা অতিক্রম করলেই ল্যারি তাদেরকে নিজের আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়। টিটিনা নেটওয়ার্কধারী রোবট বলে এই ধ্বংসাত্নক বিস্ফোরণ চলাকালেও তার কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। জয়েন্ট প্লেটে অত্যাধিক মাত্রার গুলিবর্ষণের ফলে তার বেশ কিছু জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ডঃ ব্রাড ভি-সেক্টরে পৌঁছে গেছেন। ল্যারি যখন ড্রোনের হামলা প্রতিহত করতে ব্যাস্ত তখন ডঃ ব্রাড টিটিনাকে অনলাইনে নিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাইরের পৃথিবী অর্থাৎ ক্রাপ্রো-0001 এর বাইরে থেকে উঁচু পাহারে দাঁড়িয়ে জেফরন আর এমিলিয়া অবাক দৃষ্টিতে হাজার হাজার ড্রোন আর ল্যারির যুদ্ধ দেখতে থাকে। ল্যারি একসময় বিকট শব্দে জয়েন্ট প্লেটকে বিশাল চৌম্বক দন্ডে পরিণত করে। যেহেতু, জয়েন্ট প্লেট ক্রাপ্রো-0001 থেকে অনেক অনেক দূরে অতএব, মানবসভ্যতার কোনরূপ ক্ষতি হওয়ার  সম্ভাবনা নেই।

বিজ্ঞান একাডেমীর অনেকেই ডঃ ব্রাডের বিরাগভাজন ছিলেন। ব্রাডের উদ্ধ্যত আচরণ ক্রাপ্রো-0001-এর জনসাধারণসহ অনেক কালজয়ী বিজ্ঞানীকেই ব্যাথিত করে। ডঃ ব্রাড নিজেকে ঈশ্বর মানতে সকলকে বাধ্য করে। অতএব, আজ ডঃ ব্রাডের এ দুদর্শায় সকলে আনন্দিত হয়। এ আনন্দ উদযাপন করতে ক্রাপ্রো-0001 এর নিরাপদ বেষ্টনী মুক্ত করে দেয়া হয়। নিরাপদ বেষ্টনী মুক্ত করাটাই একসময় ক্রাপ্রো-0001 এর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। জয়েন্ট প্লেটের বিশাল আকর্ষণ শক্তির জন্য বৃহাদার নিরাপদ বেষ্টনী দ্রুতবেগে জয়েন্ট প্লেটের দিকে ছুঁটে আসে। জয়েন্ট প্লেট ছুটে আসার সময় ড্রোনের সাথে ঘর্ষণের ফলে ড্রোনের ভিতরে যান্ত্রিক গোলযোগ সৃষ্টি হয়। এর দরুণ, ড্রোনগুলো এবড়ো-থেবড়ো গুলিবর্ষণ করতে থাকে। ড্রোনের গুলিবর্ষণের ফলে দূরবর্তী ড্রোনেরও ক্ষতিসাধন হয়। একসময় ড্রোনের সাথে ড্রোনের সংঘর্ষের ফলে ক্রাপ্রো-0001 এর ভিতরে বিস্ফোরণের সৃষ্টি হয়।
"টিটিনা, টিটিনা-000 রিসিভ অনলাইন ইন থার্টি সেকেন্ডস, ওয়ান, টু, থ্রি...."
ল্যারি একবার বুকে সাহস নিয়ে পিছন মুড়ে তাঁকালো। পিছনে কিছু নেই। একদম ফাঁকা।  হঠাৎ পশ্চিম আকাশ থেকে ছোট্ট একটা যানের মত কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। টিটিনা-000 টেস্টিং চলছে। ভি সেক্টর এখন দ্বি-খন্ডিত জয়েন্ট অবস্থায় ডাটা প্রসেসিং করছে। টিটিনা একবার অনলাইনে চলে আসলে ডঃ ব্রাডকে ঠেকানো অসম্ভব। ভি সেক্টর এখন তিনভাগে ক্রমাগত বাগ হচ্ছে। ল্যারি ধীরে ধীরে তার শক্তি হারাচ্ছে। চৌম্বক তত্ত্বের কারণে জয়েন্ট প্লেটের কিছু অংশে মাটির আয়রণ উঠে এসেছে। তবুও, জয়েন্ট প্লেট ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় ভি সেক্টরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
"টিটিনা-000 ইজ অনলাইন, ডাটা প্রসেসিং কমপ্লিট, ব্রেইন ভেরিফিকেশন সাকসেসফুল"
ল্যারি তার বিশাল জয়েন্ট প্লেট নিয়ে পরক্ষণেই ভি সেক্টরে আঘাত হানলো। বিকট শব্দের সৃষ্টি। পাহাড়, পর্বত বারংবার কেঁপে উঠে, বারো মাত্রার ভূমিকম্পনের সৃষ্টি হল। ভি-সেক্টর ধীরে ধীরে সমুদ্র গহ্বরে হারিয়ে গেল। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে এলো। বজ্রপাতের সহিত বৃষ্টি হচ্ছে। সিনথেটিক বৃষ্টি নয় প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত। ল্যারি প্রাকৃতিক বৃষ্টির স্বাদ আস্বাদন করতে করতে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। বাদ রইলো ক্রাপ্রো-0001। বিশাল প্লাটিনাম বার আর পাথরের ব্যাগ লুট করছে নেক্টামদল। দীর্ঘ দুই শতক ধরে কেউ বজ্রপাতের স্বীকার হয়নি। আজ দুই শতক পর এই প্রথম নেক্টামদল বজ্রপাতের স্বীকার হয়। ক্রাপ্রো-0001 বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। টিটিনা আর ডঃ ব্রাডের কোন অস্তিত্বই নেই। পৃথিবীর শেষ মানবসভ্যতা বলতে টিকে আছে দুই নর-নারী। মাইকেল এন্ড্রোসিয়া দে জেফরন আর ভিক্টোরিয়া ক্যানোনিকাল এমিলিয়া।
অপারেশন ক্রাপ্রো-0001 সাকসেসফুল !

(সমাপ্ত)

এই বিভাগে আরো আছে

গল্প 9112788992834125396

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সঙ্গে থাকুন

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক

বৈশিষ্ট্যযুক্ত

বিশ্বসেরা ১০ কার্টুনিস্ট

শিল্পী রফিকুননবী সাধারণ মানুষের কাছে যতটা না তার ফাইন আর্টসের জন্য পরিচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় তার ‘টোকাই’ কার্টুন চরিত্রের জন্য। এ ...

-

  • ফেসবুকে অনুসরণ করুন

    আঁকা-আঁকি আহ্ববান

    আপনার আঁকা, মজার মজার লেখা, ছবি আঁকার কলা-কৌশল, শিল্পীর জীবনী, প্রবন্ধ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অথবা প্রদর্শনীর সংবাদ টুনস ম্যাগে ছাপাতে চাইলে পাঠিয়ে দিন। আমাদের ইমেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়।

    সহায়তা করুন

    item