জাতীয় প্রদর্শনীতে পারফরম্যান্স আর্ট
বিডি.টুনসম্যাগ.কম শিল্পী অসীম হালদার সাগরের পারফরম্যান্স আর্ট দীপ্তি দত্ত ২৬১ জন দৃশ্যশিল্পীর নির্বাচিত ২৭৩টি শিল্পকর্ম নিয়ে গত ২...
https://bd.toonsmag.com/2015/05/290952.html
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
দীপ্তি দত্ত
২৬১ জন দৃশ্যশিল্পীর নির্বাচিত ২৭৩টি শিল্পকর্ম নিয়ে গত ২৪ মে জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর ২১তম আসর শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পকলা চর্চার বিষয়ভিত্তিক মাধ্যমের শিল্পকর্মের বাইরে এই আসরে বেশ কয়েক বছর ধরেই নিয়মিতভাবে প্রদর্শিত হয়ে আসছে স্থাপনা ও ভিডিও শিল্প। এবারের জাতীয় প্রদর্শনীতেই প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে পারফরম্যান্স আর্ট।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় ১৯৭৫ সালে প্রথম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী শুরু হয়। তথাকথিত সচেতন শিল্পশৈলীর আঙ্গিকগত দিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার চেয়ে তখন এখানে আধুনিক শিল্পচর্চার পরিচয় তৈরিই ছিল শিল্প আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক শিল্পের রূপ তখন আধুনিকতা পেরিয়ে উত্তরাধুনিকতা বিস্তারে মনোযোগী। সেখানে ষাটের দশকে শুরু হওয়া নারীবাদী আন্দোলন, পরিবেশবাদী আন্দোলন, পুঁজিবাদ-বিরোধিতা শিল্পের আঙ্গিকে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। গ্যালারিতে পণ্যে রূপান্তরের মাধ্যমে যে শপিং মল ধারণা অনুপ্রবিষ্ট হয় শিল্পে, তার বিরোধিতায় যেমন ল্যান্ড আর্ট, পারফরম্যান্স আর্ট ধারণা বিকশিত হয়, তেমনি এতে যুক্ত হয় সমসাময়িক পরিবেশবাদী ও নারীবাদী ধারণাগুলোও। নারীরাও সচেতনভাবে এই নতুন শিল্পরীতিতেই নিজেদের শিল্পভাষার ইতিহাস নির্মাণ করতে পুনঃমনোযোগ দেন। কারণ এগুলো তখনও দৃশ্যশিল্পের প্রথাগত মাধ্যমের মতো পুরুষতন্ত্রের একমুখী ইতিহাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।
বাংলাদেশে তখন শিল্পকে নব্য নাগরিক জীবনে গ্রহণ করার আন্দোলন চলছে, যাকে সাংস্কৃতিক আন্দোলন বলে অভিহিত করা হয়। এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূত্রে মানুষের স্বাধীন সত্তার প্রকাশ ঘটাতে এ দেশেও তখন চলছে পারফরম্যান্স_ আমরণ অনশনে, পোস্টারে ও দেয়াল লিখনে, শহীদ মিনারের আলপনায়, কপালের লাল টিপে, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও পহেলা বৈশাখে। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পারফরম্যান্স আর্ট বলা যেতে পারে পহেলা বৈশাখকে, যা সমষ্টিগত তাড়না থেকে জাত অথচ ফরমায়েশি বা পণ্য নয়।
তারপরও চারুশিল্পের সীমিত গণ্ডিতে, সচেতন বোধের তাড়না ছেড়ে পশ্চিমে যখন পারফরম্যান্সও আবার শৈলীব্যাধিতে রূপ নিয়েছে, তার অনুকরণ সত্তাটিই বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের যাত্রা সূচক হিসেবে গৃহীত হয়ে থাকে।
তবে আশার কথা হলো, অনুকরণ সত্তা থেকেই বাংলাদেশের শিল্পসত্তা নিজস্ব বাস্তবতার মুখাপেক্ষী হতে আগ্রহী। আর এই আগ্রহের বাস্তব পদক্ষেপ হিসেবেই স্থান-কাল নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও মানবিক চেতনার ধারণানির্ভর দুটি পারফরম্যান্স জাতীয় প্রর্দশনীতে প্রথমবারের মতো শিল্পকর্মের তালিকাভুক্ত হলো।
নির্বাচিত দু'জন শিল্পী হলেন ঋতু সাত্তার ও অসীম হালদার সাগর। শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছয়-সাতজন শিল্পী থেকে উক্ত দু'জন শিল্পীর কাজ নির্বাচন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে শিল্পীদের অংশগ্রহণের সংখ্যাগত দিকটি যেমন আরও বড় পরিসরে ভাবা হবে, তেমনি বিচারক প্যানেলটিও পুনর্বিবেচনা করা হবে পারফরম্যান্স আর্টের কথা ভেবে। তবে এর মূল অনুপ্রেরণা তৈরির দায়িত্ব পালন করেছেন শিল্পী ঋতু সাত্তার। তিনি গত এশিয়ান দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপনে পারফরম্যান্স উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও একটি কাজের ধারণাপত্র জমা দেন। পরে এই কাজটিসহ অন্যান্য আগ্রহী পারফরম্যান্স শিল্পীর সমন্বয়ে একটি পারফরম্যান্স উৎসব করা হয়, এশিয়ান দ্বিবার্ষিক প্রদশর্নীর প্রাঙ্গণে। আর তার সূত্র ধরেই শিল্পকলা একাডেমি প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপনে পারফরম্যান্স আর্ট তালিকাভুক্ত করে।
কালো কাপড়ে মুড়ে থাকা আমি বা আমরা, বা তুমি বা তোমরা, বা সে বা তারা, বা সময়, তার ভেতরে যে কণ্ঠস্বর তাকে কথা বলার জন্য, চিৎকার করার জন্য, বেদনা প্রকাশের জন্য আহ্বান করছেন, জেগে উঠতে বলছেন ঋতু সাত্তার তার 'উত্থিত দিনের গল্প' শিরোনামের রেসিটাল বা আবৃত্তিধর্মী পারফরম্যান্সটিতে।
নির্বেদ, নিস্পৃহ ভোগবাদী মানুষকে রঙিন চশমা খুলে নিজেকে নিয়ে একটু ভাবতে বলছেন; নিজেকে সময় দিতে বলছেন, বা মৃত লেখকটির জন্য ভাবতে বলছেন শিল্পী ঋতু সাত্তার, চারকোনা কালো কাপড়ে মুড়ে দেওয়া প্রতীকী ঘরের আবডালে থেকে। কালো কাপড়ের এই অন্ধবিবর হতে পারে স্বয়ং আমি, যে সময়ের সংলাপ ও চিৎকারের যৌক্তিকতা এড়িয়ে শিল্পের জন্য শিল্পের সমালোচনায় আত্মসুখে মগ্ন, বা যে বা যারা রাত-দিন কালো কাপড়ে শরীর মুড়ে পৃথিবীর আলো-বাতাসে মানব অস্তিত্বের স্বকীয়তা অস্বীকার করে, ভেতরের স্বাধীনচেতা কণ্ঠের টুঁটি চেপে ধরে গড়িয়ে চলে বস্তার মতো, বা হতে পারে তারা, যারা পহেলা বৈশাখে গণঅরণ্যে মাড়িয়ে গেল নারীর গণশরীর, তাদের বশ্যতা মেনে বা সহযোগী হয়ে যারা বাস করছে খবরনির্ভর যৌন বিনোদন জীবন, তাদের জন্য আত্মদর্শনের ভাবনা উদ্দীপক একটি প্রতীকী কূপ।
এই কূপের ভেতরে একটি স্পট লাইটের নিচে আছে একটি মাইক্রোফোন। শিল্পী অন্তরালে থেকে ক্রমাগত উত্ত্যক্ত করতে চাইছেন সীমিত পরিসরের নির্দিষ্ট শ্রেণীর দর্শকদের। এমনকি তিনি বলে চলেছেন, এটি শিল্পকর্মও নয়। এটি প্রতিবাদের, বেদনা প্রকাশের, নিজের কথা, আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের জন্য নির্মিত একটি বাস্তব অবস্থার অবয়ব, যেখান থেকে নতুন সমাজ নির্মাণের তাড়না প্রকাশিত হতে পারে। অর্থাৎ তিনি এই অবয়বকে মানে নিজেদেরকেই ভেঙে দিতে চান, বাতিল করতে চান প্রতিবাদহীন এই সময়কে, ভেতরের কণ্ঠটিকে জাগিয়ে তুলে।
অন্যদিকে অসীম হালদার সাগর তার 'সেইসমিক এপিটাফ' পারফরম্যান্সে যন্ত্রণার শারীরিক অভিজ্ঞতাকেই সরাসরি নির্বাচিত করেছেন। নেপালের ভূমিকম্পে দশ হাজারের মতো মানুষের জীবন্ত সমাধিস্থ হওয়ার যন্ত্রণাকে নিজস্ব অভিজ্ঞতায় পুনঃভোগ করতে চেয়েছেন। পারফরম্যান্সটির ব্যাপ্তিকাল ছিল ২৫ মিনিটের মতো। পারফরম্যান্স চলাকালীন শিল্পীর পশ্চাৎপটে ছিল নেপালের ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপের নানা আলোকচিত্র। আলোকচিত্রের মাধ্যমে এই নির্দিষ্ট ঘটনা ও স্থান চিহ্নিতকরণ বৈশিষ্ট্যটি মুছে দিলে পারফরম্যান্সটি বাংলাদেশের নাগরিক মানুষের কাছে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বয়ানে পরিণত হবে। রানা প্লাজা থেকে শুরু করে গার্মেন্টস কর্মীদের আগুনে পুড়ে বা বিল্ডিং ধসে মৃত্যুর বিষয়টি যেমন এই কাজটি মনে করিয়ে দেয়, তেমনি ঢাকাবাসীর মনে ভূমিকম্পকেন্দ্রিক যে আতঙ্ক, তার কার্যকারণ ও পরিণতির অনিবার্যতাকে পুনর্বার সতর্ক করে দেয়। দৈনিক সমকালের সৌজন্যে
শিল্পী অসীম হালদার সাগরের পারফরম্যান্স আর্ট
|
দীপ্তি দত্ত
২৬১ জন দৃশ্যশিল্পীর নির্বাচিত ২৭৩টি শিল্পকর্ম নিয়ে গত ২৪ মে জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর ২১তম আসর শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পকলা চর্চার বিষয়ভিত্তিক মাধ্যমের শিল্পকর্মের বাইরে এই আসরে বেশ কয়েক বছর ধরেই নিয়মিতভাবে প্রদর্শিত হয়ে আসছে স্থাপনা ও ভিডিও শিল্প। এবারের জাতীয় প্রদর্শনীতেই প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে পারফরম্যান্স আর্ট।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় ১৯৭৫ সালে প্রথম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী শুরু হয়। তথাকথিত সচেতন শিল্পশৈলীর আঙ্গিকগত দিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার চেয়ে তখন এখানে আধুনিক শিল্পচর্চার পরিচয় তৈরিই ছিল শিল্প আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক শিল্পের রূপ তখন আধুনিকতা পেরিয়ে উত্তরাধুনিকতা বিস্তারে মনোযোগী। সেখানে ষাটের দশকে শুরু হওয়া নারীবাদী আন্দোলন, পরিবেশবাদী আন্দোলন, পুঁজিবাদ-বিরোধিতা শিল্পের আঙ্গিকে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। গ্যালারিতে পণ্যে রূপান্তরের মাধ্যমে যে শপিং মল ধারণা অনুপ্রবিষ্ট হয় শিল্পে, তার বিরোধিতায় যেমন ল্যান্ড আর্ট, পারফরম্যান্স আর্ট ধারণা বিকশিত হয়, তেমনি এতে যুক্ত হয় সমসাময়িক পরিবেশবাদী ও নারীবাদী ধারণাগুলোও। নারীরাও সচেতনভাবে এই নতুন শিল্পরীতিতেই নিজেদের শিল্পভাষার ইতিহাস নির্মাণ করতে পুনঃমনোযোগ দেন। কারণ এগুলো তখনও দৃশ্যশিল্পের প্রথাগত মাধ্যমের মতো পুরুষতন্ত্রের একমুখী ইতিহাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।
বাংলাদেশে তখন শিল্পকে নব্য নাগরিক জীবনে গ্রহণ করার আন্দোলন চলছে, যাকে সাংস্কৃতিক আন্দোলন বলে অভিহিত করা হয়। এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূত্রে মানুষের স্বাধীন সত্তার প্রকাশ ঘটাতে এ দেশেও তখন চলছে পারফরম্যান্স_ আমরণ অনশনে, পোস্টারে ও দেয়াল লিখনে, শহীদ মিনারের আলপনায়, কপালের লাল টিপে, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও পহেলা বৈশাখে। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পারফরম্যান্স আর্ট বলা যেতে পারে পহেলা বৈশাখকে, যা সমষ্টিগত তাড়না থেকে জাত অথচ ফরমায়েশি বা পণ্য নয়।
তারপরও চারুশিল্পের সীমিত গণ্ডিতে, সচেতন বোধের তাড়না ছেড়ে পশ্চিমে যখন পারফরম্যান্সও আবার শৈলীব্যাধিতে রূপ নিয়েছে, তার অনুকরণ সত্তাটিই বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের যাত্রা সূচক হিসেবে গৃহীত হয়ে থাকে।
তবে আশার কথা হলো, অনুকরণ সত্তা থেকেই বাংলাদেশের শিল্পসত্তা নিজস্ব বাস্তবতার মুখাপেক্ষী হতে আগ্রহী। আর এই আগ্রহের বাস্তব পদক্ষেপ হিসেবেই স্থান-কাল নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও মানবিক চেতনার ধারণানির্ভর দুটি পারফরম্যান্স জাতীয় প্রর্দশনীতে প্রথমবারের মতো শিল্পকর্মের তালিকাভুক্ত হলো।
নির্বাচিত দু'জন শিল্পী হলেন ঋতু সাত্তার ও অসীম হালদার সাগর। শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছয়-সাতজন শিল্পী থেকে উক্ত দু'জন শিল্পীর কাজ নির্বাচন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে শিল্পীদের অংশগ্রহণের সংখ্যাগত দিকটি যেমন আরও বড় পরিসরে ভাবা হবে, তেমনি বিচারক প্যানেলটিও পুনর্বিবেচনা করা হবে পারফরম্যান্স আর্টের কথা ভেবে। তবে এর মূল অনুপ্রেরণা তৈরির দায়িত্ব পালন করেছেন শিল্পী ঋতু সাত্তার। তিনি গত এশিয়ান দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপনে পারফরম্যান্স উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও একটি কাজের ধারণাপত্র জমা দেন। পরে এই কাজটিসহ অন্যান্য আগ্রহী পারফরম্যান্স শিল্পীর সমন্বয়ে একটি পারফরম্যান্স উৎসব করা হয়, এশিয়ান দ্বিবার্ষিক প্রদশর্নীর প্রাঙ্গণে। আর তার সূত্র ধরেই শিল্পকলা একাডেমি প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপনে পারফরম্যান্স আর্ট তালিকাভুক্ত করে।
কালো কাপড়ে মুড়ে থাকা আমি বা আমরা, বা তুমি বা তোমরা, বা সে বা তারা, বা সময়, তার ভেতরে যে কণ্ঠস্বর তাকে কথা বলার জন্য, চিৎকার করার জন্য, বেদনা প্রকাশের জন্য আহ্বান করছেন, জেগে উঠতে বলছেন ঋতু সাত্তার তার 'উত্থিত দিনের গল্প' শিরোনামের রেসিটাল বা আবৃত্তিধর্মী পারফরম্যান্সটিতে।
নির্বেদ, নিস্পৃহ ভোগবাদী মানুষকে রঙিন চশমা খুলে নিজেকে নিয়ে একটু ভাবতে বলছেন; নিজেকে সময় দিতে বলছেন, বা মৃত লেখকটির জন্য ভাবতে বলছেন শিল্পী ঋতু সাত্তার, চারকোনা কালো কাপড়ে মুড়ে দেওয়া প্রতীকী ঘরের আবডালে থেকে। কালো কাপড়ের এই অন্ধবিবর হতে পারে স্বয়ং আমি, যে সময়ের সংলাপ ও চিৎকারের যৌক্তিকতা এড়িয়ে শিল্পের জন্য শিল্পের সমালোচনায় আত্মসুখে মগ্ন, বা যে বা যারা রাত-দিন কালো কাপড়ে শরীর মুড়ে পৃথিবীর আলো-বাতাসে মানব অস্তিত্বের স্বকীয়তা অস্বীকার করে, ভেতরের স্বাধীনচেতা কণ্ঠের টুঁটি চেপে ধরে গড়িয়ে চলে বস্তার মতো, বা হতে পারে তারা, যারা পহেলা বৈশাখে গণঅরণ্যে মাড়িয়ে গেল নারীর গণশরীর, তাদের বশ্যতা মেনে বা সহযোগী হয়ে যারা বাস করছে খবরনির্ভর যৌন বিনোদন জীবন, তাদের জন্য আত্মদর্শনের ভাবনা উদ্দীপক একটি প্রতীকী কূপ।
এই কূপের ভেতরে একটি স্পট লাইটের নিচে আছে একটি মাইক্রোফোন। শিল্পী অন্তরালে থেকে ক্রমাগত উত্ত্যক্ত করতে চাইছেন সীমিত পরিসরের নির্দিষ্ট শ্রেণীর দর্শকদের। এমনকি তিনি বলে চলেছেন, এটি শিল্পকর্মও নয়। এটি প্রতিবাদের, বেদনা প্রকাশের, নিজের কথা, আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের জন্য নির্মিত একটি বাস্তব অবস্থার অবয়ব, যেখান থেকে নতুন সমাজ নির্মাণের তাড়না প্রকাশিত হতে পারে। অর্থাৎ তিনি এই অবয়বকে মানে নিজেদেরকেই ভেঙে দিতে চান, বাতিল করতে চান প্রতিবাদহীন এই সময়কে, ভেতরের কণ্ঠটিকে জাগিয়ে তুলে।
অন্যদিকে অসীম হালদার সাগর তার 'সেইসমিক এপিটাফ' পারফরম্যান্সে যন্ত্রণার শারীরিক অভিজ্ঞতাকেই সরাসরি নির্বাচিত করেছেন। নেপালের ভূমিকম্পে দশ হাজারের মতো মানুষের জীবন্ত সমাধিস্থ হওয়ার যন্ত্রণাকে নিজস্ব অভিজ্ঞতায় পুনঃভোগ করতে চেয়েছেন। পারফরম্যান্সটির ব্যাপ্তিকাল ছিল ২৫ মিনিটের মতো। পারফরম্যান্স চলাকালীন শিল্পীর পশ্চাৎপটে ছিল নেপালের ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপের নানা আলোকচিত্র। আলোকচিত্রের মাধ্যমে এই নির্দিষ্ট ঘটনা ও স্থান চিহ্নিতকরণ বৈশিষ্ট্যটি মুছে দিলে পারফরম্যান্সটি বাংলাদেশের নাগরিক মানুষের কাছে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বয়ানে পরিণত হবে। রানা প্লাজা থেকে শুরু করে গার্মেন্টস কর্মীদের আগুনে পুড়ে বা বিল্ডিং ধসে মৃত্যুর বিষয়টি যেমন এই কাজটি মনে করিয়ে দেয়, তেমনি ঢাকাবাসীর মনে ভূমিকম্পকেন্দ্রিক যে আতঙ্ক, তার কার্যকারণ ও পরিণতির অনিবার্যতাকে পুনর্বার সতর্ক করে দেয়। দৈনিক সমকালের সৌজন্যে