কার্টুনাস্ত্র
অয়ন রাহা বিডি.টুনসম্যাগ.কম লুইস রেমেকার্সের কার্টুন সন্ধান চাই!! সন্ধান চাই!! জীবিত অথবা মৃত!! পুরষ্কার কড়কড়ে বারো হাজার ‘গিল্ডার’...
![](https://img2.blogblog.com/img/icon18_edit_allbkg.gif)
https://bd.toonsmag.com/2014/12/5.html
অয়ন রাহা
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
![]() |
লুইস রেমেকার্সের কার্টুন |
সন্ধান চাই!! সন্ধান চাই!! জীবিত অথবা মৃত!! পুরষ্কার কড়কড়ে বারো হাজার ‘গিল্ডার’। হুলিয়া বেরোলো লুইস রেমেকার্সের নামে। ইউরোপের আকাশে তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধুসর মেঘ।
ভাবছেন, কে এই রেমেকার্স? ওনার অপরাধটাই বা কি? না, উনি কিন্তু চুরি, ডাকাতি, খুন, জালিয়াতি কিচ্ছুটি করেননি। করেছেন আরও মস্ত এক ‘অপরাধ’। কি না, এঁকেছেন ‘কার্টুন’। আর ওনার ব্যঙ্গচিত্রের শরে বিদ্ধ মহাপ্রতাপশালী জার্মান সরকার। ব্যাস, পড়লেন রাজরোষের কবলে। চলল নিরন্তর হুমকি, ভীতি প্রর্দশন। শেষে পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের আশঙ্কায় বাধ্য হলেন নিজের জন্মস্থান ছেড়ে লন্ডনের পথে পাড়ী জমাতে।
জন্ম ১৮৬৯ সালে, নেদারল্যান্ডসের রোয়েরমন্ডে। রেমেকার্সের কেরিয়ারের শুরুটা ছিল ভারী শান্ত নিস্তরঙ্গ। ছবি এঁকে, আর শিক্ষকতা করে দিব্যি কেটে যাচ্ছিল সময়। এরপর ১৯১৪, বাজল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা। জার্মানরা আক্রমণ করল বেলজিয়াম। দলে দলে আসা বেলজিয়ান রিফিউজিদের ভীড় আছড়ে পড়ল নেদারল্যান্ডস সীমান্তে। আর সেই সব মানুষগুলি সাথে করে নিয়ে এল জার্মান বাহিনীর চরম নৃশংসতার কাহিনী। আর পাঁচজন সংবেদনশীল মানুষদের মতো রেমেকার্সকেও বিচলিত করতে লাগল এই ঘটনাক্রম। তিনি এই সব কাহিনীর সত্যতা যাচাই করতে গোপনে প্রবেশ করলেন বেলজিয়াম। নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করলেন নানা অমানবিক ঘটনা, চরম সন্ত্রাসের সাক্ষী হয়ে ফিরে এলেন একরাশ বেদনা নিয়ে।
সীমান্তে পড়ে পড়ে মার খাওয়া মানুষগুলিকে নিয়ে কোনরকম উচ্চবাচ্য ছিলনা নেদারল্যান্ডস সরকারের। রাজনীতির জটিল আবর্তে যুদ্ধে তাদের ঘোষিত অবস্থান- ‘নিরপেক্ষ’। কিন্তু রেমেকার্স পারলেন কই চুপ থাকতে। বিদ্রোহ করল তার কার্টুনিস্ট সত্ত্বা। প্রতিবাদের পথ হিসাবে বেছে নিলেন তার তুলি-কলমকে, আঁকতে লাগলেন একের পর এক জ্বালাময়ী ব্যঙ্গচিত্র। যাবতীয় ক্ষোভ হতাশা প্রতিবাদ উগরে দিলেন সৃষ্ট কার্টুনগুলিতে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নাম ছড়িয়ে পড়ল রেমেকার্সের, এমনকি তা অতিক্রম করল দেশের সীমানাও। তত্কালীন ব্রিটিশ সরকার তার কার্টুনগুলিকে জার্মান বিরোধী প্রচার অভিযানে হাতিয়ার করল। জনমানসে বিপুল সাড়া ফেলল রেমেকার্সের ‘কার্টুন’। ক্রমে ক্রমে সেই অভিঘাত এতটাই সুদুরপ্রসারী হল যে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হল জার্মান সরকার। ফলস্বরূপ জারি সেই হুলিয়া, আর রেমেকার্সের দেশত্যাগ।
![]() |
লুইস রেমেকার্সের ব্যঙ্গচিত্র |
ব্রিটেনে পালিয়ে আসার পর তার ‘পলিটিকাল কার্টুন’ গুলি একত্রিত করে প্রকাশিত হল নানা বই। শহরে শহরে হতে লাগল প্রদর্শনী। রেমেকার্সের ‘কার্টুন’ তখন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মূর্ত প্রতিবাদ। অতি অল্পসময়ের মধ্যেই সমগ্র ইউরোপ, এমনকি আমেরিকা আর কানাডাতেও ছড়িয়ে পড়ল রেমেকার্সের খ্যাতি। আমেরিকার বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ছাপা শুরু হল রেমেকার্সের ‘কার্টুন’। হিসাব বলছে প্রায় তিনশ মিলিয়ন লোকের কাছে পৌঁছে যায় ওনার সৃষ্ট ব্যঙ্গচিত্রগুলি। ক্ষুরধার বক্তব্য আর অনবদ্য অঙ্কনশৈলী, তাকে নিয়ে গেছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
![]() |
লুইস রেমেকার্সের আঁকা |
কার্টুনাস্ত্রে সজ্জিত রেমেকার্স নিজে একাই ছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আস্ত একটা ফ্রন্ট। জিনিয়াসরা বোধ হয় এমনই হন। সেই তিনি যুদ্ধশেষে, জীবনের শেষ পঁচিশটা বছর কাটিয়ে দেন ফ্রান্স আর ব্রাসেলসে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে বহুদূরে প্রায় লোকচক্ষুর অন্তরালে। তবে এই আড়াল নেহাতই বাহ্যিক, কারণ লুইস রেমেকার্স ততদিনে চিরকালের জন্য স্থান করে নিয়েছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কার্টুনিস্টদের অন্দরমহলে।
অয়ন রাহা
জিরো কমিকস এর প্রতিষ্ঠাতা
কলকাতা, ভারত