মানিকজোড়
অয়ন রাহা বিডি.টুনসম্যাগ.কম মিকি মাউসের প্রথম স্কেচ / ‘স্টিমবোট উইলি’র একটি দৃশ্যে ‘মিকি মাউস’ মাসটা ফেব্রুয়ারী, ১৯২৮ সনের কথা। মার্ক...
https://bd.toonsmag.com/2014/11/91.html
অয়ন রাহা
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
মাসটা ফেব্রুয়ারী, ১৯২৮ সনের কথা। মার্কিন দেশে শীত শেষ হয়ে বসন্ত আসব আসব করছে। বছর সাতাশের সৌম্যদর্শন এক ভদ্রলোক রওনা দিলেন কানসাস সিটি থেকে- গন্তব্য তার নিউইয়র্ক। মনটা বেশ খুশী খুশীই ছিল, কারন তার নিজের স্টুডিও ‘লাফ-ও-গ্রাম’-এ তৈরী অ্যানিমেশন সিরিজ ‘অসওয়াল্ড দ্য লাকি র্যাবিট’ বেশ সাফল্যের মুখ দেখেছে। উনি ভেবেছিলেন প্রযোজক চার্লস মিন্টজ –এর সঙ্গে কথা বলে পারিশ্রমিকের অঙ্কটা আর একটু বাড়িয়ে নেবেন।
কিন্তু নিউইয়র্কে পৌছে একেবারে যাকে বলে বিনামেঘে বজ্রপাত। প্রযোজক সাহেব টাকা তো বাড়ালেনইনা, উপরন্তু প্রস্তাব দিলেন বাজেটটা আগের থেকে অনেকটা কমিয়ে দেবার। স্বভাবতই এই অপমানজনক প্রস্তাবে রাজী হলেননা ভদ্রলোক। ফলস্বরূপ ওনার স্টুডিওর প্রায় সমস্ত অ্যানিমেটরকে গোপনে বেশী টাকার লোভ দেখিয়ে নিজের দলে টেনে নিলেন প্রযোজক মিন্টজ।
যেহেতু এই অ্যানিমেশন সিরিজটির ‘রাইটস’ ছিলনা তার নিজের কাছে, ছিল ডিস্ট্রিবিউটার ‘ইউনিভারসাল পিকচার্স’এর হাতে, তাই আইনতঃ কিছুই করতে পারলেননা ভদ্রলোক। ভগ্নমনোরথ হয়ে ফিরে এলেন নিজের পূর্বের অবস্থানে।
এই নিদারুন বিশ্বাসঘাতকতায় মনে প্রচন্ড আঘাত পেলেও সেদিন কিন্তু ভেঙ্গে পড়েননি উনি- ওয়াল্টার ডিজনী। আবিশ্ব যাকে একডাকে চেনে ওয়াল্ট ডিজনী নামে। তিনি আবার শুরু করলেন প্রথম থেকে। সঙ্গে অতি বিশ্বস্ত অ্যানিমেটর ইউ. বি. ইয়রক্স, একমাত্র যিনি থেকে গিয়েছিলেন ডিজনীর সাথে। দুজনে বসে স্থির করলেন আগের জনপ্রিয় অ্যানিমেশনের মুখ্য চরিত্র ‘খরগোশ অসওয়াল্ড’-এর জায়গায় নতুন এক কমিক চরিত্র সৃষ্টি করবেন।
ইউ. বি. বেশ কিছু প্রথমে আঁকলেন একটি কুকুর আর বেড়াল কমিক চরিত্র। কিন্তু মনঃপুত হল না ডিজনীর। তারপর এল একটি মহিলা গরু, পুরুষ ঘোড়া চরিত্র। এরপর একটি ব্যাঙ, আরও কত কি। কিন্তু ডিজনীর পছন্দ হলনা কোনওটাই। কাজ চলতে থাকলো।
বেশ কিছুদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর, অবশেষে জন্ম নিল নতুন এক চরিত্র। সে আসলে একটি ভারী মজার ইঁদুর, নাম দেওয়া হল ‘মর্টিমার’। ওয়াল্ট একসময় ইঁদুর পুষতেন, এই মর্টিমারের ‘আইডিয়া’-টা নাকি সেখান থেকেই আসা। ইঁদুরের মাথাটি একটি বড় বৃত্ত আর দুটি ছোট বৃত্তের সমন্বয়ে আঁকা। ইঁদুরটা সবারই বেশ পছন্দ হল, কিন্তু গোল বাধল অন্যত্র, ওয়াল্ট-গিন্নী লিলিয়ানের এই ‘মর্টিমার’ নামটা একেবারেই না-পছন্দ। তিনি এই ইঁদুরের একটি মিষ্টি নাম চান। অগত্যা, ‘মর্টিমার’-এর নাম বদলে হোল মিকি, ‘মিকি মাউস’।
‘প্লেন ক্রেজী’ মিকি মাউসের প্রথম কার্টুন। এরপর ১৮ই নভেম্বর, ১৯২৮ সনে নিউইয়র্কে প্রথম জনসমক্ষে মুক্তি পেল ‘স্টিমবোট উইলি’। এটা ছিল মিকির তৃতীয় অ্যানিমেশন। আবির্ভাবেই মারকাটারি সাফল্য, সবার মন জয় করে নিল মিকি তার বন্ধুরা। ব্যস, তারপর আর ঘুরে তাকাতে হয়নি মিকিকে, এবং ওয়াল্ট ডিজনীকেও। একের পর এক মাইলস্টোন তৈরি করেছে মিকি মাউস আর ডিজনী উঠেছেন খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখরে। সে সব গপ্পো না হয় অন্য একদিন হবে।
শেষপাতে কিছু মজার তথ্য। প্রথম দিকের অ্যানিমেশনগুলিতে মিকির বিখ্যাত ট্রেডমার্ক সাদা দস্তানা ছিল অনুপস্থিত এবং মিকি ছিল নির্বাক। পরের দিকে মিকি কথা বলতে শুরু করে। তার বলা প্রথম শব্দ-‘হটডগ’। আর মিকির সেই বিখ্যাত কণ্ঠস্বরের নেপথ্যে কিন্তু স্বয়ং ওয়াল্ট ডিজনী। সৃষ্টি আর স্রষ্টা কোথায় যেন তখন সমার্থক।
অয়ন রাহা
কমিকস লেখক, জিরো কমিকস-এর প্রতিষ্ঠাতা
কলকাতা, ভারত থেকে
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
মিকি মাউসের প্রথম স্কেচ / ‘স্টিমবোট উইলি’র একটি দৃশ্যে ‘মিকি মাউস’ |
মাসটা ফেব্রুয়ারী, ১৯২৮ সনের কথা। মার্কিন দেশে শীত শেষ হয়ে বসন্ত আসব আসব করছে। বছর সাতাশের সৌম্যদর্শন এক ভদ্রলোক রওনা দিলেন কানসাস সিটি থেকে- গন্তব্য তার নিউইয়র্ক। মনটা বেশ খুশী খুশীই ছিল, কারন তার নিজের স্টুডিও ‘লাফ-ও-গ্রাম’-এ তৈরী অ্যানিমেশন সিরিজ ‘অসওয়াল্ড দ্য লাকি র্যাবিট’ বেশ সাফল্যের মুখ দেখেছে। উনি ভেবেছিলেন প্রযোজক চার্লস মিন্টজ –এর সঙ্গে কথা বলে পারিশ্রমিকের অঙ্কটা আর একটু বাড়িয়ে নেবেন।
কিন্তু নিউইয়র্কে পৌছে একেবারে যাকে বলে বিনামেঘে বজ্রপাত। প্রযোজক সাহেব টাকা তো বাড়ালেনইনা, উপরন্তু প্রস্তাব দিলেন বাজেটটা আগের থেকে অনেকটা কমিয়ে দেবার। স্বভাবতই এই অপমানজনক প্রস্তাবে রাজী হলেননা ভদ্রলোক। ফলস্বরূপ ওনার স্টুডিওর প্রায় সমস্ত অ্যানিমেটরকে গোপনে বেশী টাকার লোভ দেখিয়ে নিজের দলে টেনে নিলেন প্রযোজক মিন্টজ।
যেহেতু এই অ্যানিমেশন সিরিজটির ‘রাইটস’ ছিলনা তার নিজের কাছে, ছিল ডিস্ট্রিবিউটার ‘ইউনিভারসাল পিকচার্স’এর হাতে, তাই আইনতঃ কিছুই করতে পারলেননা ভদ্রলোক। ভগ্নমনোরথ হয়ে ফিরে এলেন নিজের পূর্বের অবস্থানে।
এই নিদারুন বিশ্বাসঘাতকতায় মনে প্রচন্ড আঘাত পেলেও সেদিন কিন্তু ভেঙ্গে পড়েননি উনি- ওয়াল্টার ডিজনী। আবিশ্ব যাকে একডাকে চেনে ওয়াল্ট ডিজনী নামে। তিনি আবার শুরু করলেন প্রথম থেকে। সঙ্গে অতি বিশ্বস্ত অ্যানিমেটর ইউ. বি. ইয়রক্স, একমাত্র যিনি থেকে গিয়েছিলেন ডিজনীর সাথে। দুজনে বসে স্থির করলেন আগের জনপ্রিয় অ্যানিমেশনের মুখ্য চরিত্র ‘খরগোশ অসওয়াল্ড’-এর জায়গায় নতুন এক কমিক চরিত্র সৃষ্টি করবেন।
ইউ. বি. বেশ কিছু প্রথমে আঁকলেন একটি কুকুর আর বেড়াল কমিক চরিত্র। কিন্তু মনঃপুত হল না ডিজনীর। তারপর এল একটি মহিলা গরু, পুরুষ ঘোড়া চরিত্র। এরপর একটি ব্যাঙ, আরও কত কি। কিন্তু ডিজনীর পছন্দ হলনা কোনওটাই। কাজ চলতে থাকলো।
বেশ কিছুদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর, অবশেষে জন্ম নিল নতুন এক চরিত্র। সে আসলে একটি ভারী মজার ইঁদুর, নাম দেওয়া হল ‘মর্টিমার’। ওয়াল্ট একসময় ইঁদুর পুষতেন, এই মর্টিমারের ‘আইডিয়া’-টা নাকি সেখান থেকেই আসা। ইঁদুরের মাথাটি একটি বড় বৃত্ত আর দুটি ছোট বৃত্তের সমন্বয়ে আঁকা। ইঁদুরটা সবারই বেশ পছন্দ হল, কিন্তু গোল বাধল অন্যত্র, ওয়াল্ট-গিন্নী লিলিয়ানের এই ‘মর্টিমার’ নামটা একেবারেই না-পছন্দ। তিনি এই ইঁদুরের একটি মিষ্টি নাম চান। অগত্যা, ‘মর্টিমার’-এর নাম বদলে হোল মিকি, ‘মিকি মাউস’।
‘প্লেন ক্রেজী’ মিকি মাউসের প্রথম কার্টুন। এরপর ১৮ই নভেম্বর, ১৯২৮ সনে নিউইয়র্কে প্রথম জনসমক্ষে মুক্তি পেল ‘স্টিমবোট উইলি’। এটা ছিল মিকির তৃতীয় অ্যানিমেশন। আবির্ভাবেই মারকাটারি সাফল্য, সবার মন জয় করে নিল মিকি তার বন্ধুরা। ব্যস, তারপর আর ঘুরে তাকাতে হয়নি মিকিকে, এবং ওয়াল্ট ডিজনীকেও। একের পর এক মাইলস্টোন তৈরি করেছে মিকি মাউস আর ডিজনী উঠেছেন খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখরে। সে সব গপ্পো না হয় অন্য একদিন হবে।
শেষপাতে কিছু মজার তথ্য। প্রথম দিকের অ্যানিমেশনগুলিতে মিকির বিখ্যাত ট্রেডমার্ক সাদা দস্তানা ছিল অনুপস্থিত এবং মিকি ছিল নির্বাক। পরের দিকে মিকি কথা বলতে শুরু করে। তার বলা প্রথম শব্দ-‘হটডগ’। আর মিকির সেই বিখ্যাত কণ্ঠস্বরের নেপথ্যে কিন্তু স্বয়ং ওয়াল্ট ডিজনী। সৃষ্টি আর স্রষ্টা কোথায় যেন তখন সমার্থক।
অয়ন রাহা
কমিকস লেখক, জিরো কমিকস-এর প্রতিষ্ঠাতা
কলকাতা, ভারত থেকে