কলকাতায় ঠাকুর গড়ছেন চিত্রশিল্পীরা
বিডি.টুনসম্যাগ.কম উত্তর কলকাতায় পুজো মন্ডপ। ফটো-দেবাশীষ ভাদুরী অমিতাভ ভট্টশালী, কলকাতা : বহু যুগ ধরে হিন্দুদের পুজোর মূর্তি গড়ে...
https://bd.toonsmag.com/2014/10/blog-post_59.html
বিডি.টুনসম্যাগ.কম
অমিতাভ ভট্টশালী, কলকাতা : বহু যুগ ধরে হিন্দুদের পুজোর মূর্তি গড়ে এসেছেন কুমোররা – বংশ পরম্পরায় সেটাই তাঁদের পেশা। কিন্তু সম্প্রতি কলকাতার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পী বা ভাস্করাও দূর্গা প্রতিমা তৈরী করছেন।
শুধু প্রতিমা নয়, একটা বিষয় বা থীমের ওপর ভিত্তি করে মূর্তি, মন্ডপ, আলো বা আবহসঙ্গীত – গোটাটাই পরিকল্পনা করছেন ওই প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা।
পুজোর উদ্যোক্তারা যদিও বলছেন শিল্পীরা যেভাবে নতুন বিষয়ভাবনা নিয়ে আসতে পারেন, সাবেকি কুমোরদের পক্ষে সেটা সম্ভব না।
আবার বংশ পরম্পরায় মূর্তি তৈরী-ই যাঁদের কাজ, সেই কুমোরদের কথায়, আর্ট কলেজ থেকে পাশ করা শিল্পীরা যেসব মূর্তি গড়েন, সেগুলো দূর্গা প্রতিমা না – কার্টুন।
কোনও কোনও পুজো প্যান্ডেলে সন্ধে বেলায় ঢুকলেই আলো প্রক্ষেপন আর আবহ সঙ্গীত-ই বলে দেবে যে এটা একটা থীম পুজো – অর্থাৎ কোনও একটা বিষয়ভাবনাকে কেন্দ্র করে পুজোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্যান্ডেলেও সেই সাবেকি ধরণে কাপড়ের তৈরী নয়। অনেক সময়েই দূর্গাপ্রতিমার সঙ্গে চিরপরিচিত মহিষাসুরমর্দিনীরও মিল খুঁজে পাওয়া যাবে ন।
এরকমই একটা থীম-পুজোর পরিকল্পনা করেছেন নামজাদা চিত্রকর সনাতন দিন্দা। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম এতবড় একজন শিল্পী হয়ে তিনি পুজোর পরিকল্পনা করতে কেন শুরু করলেন।
তাঁর কথায়, “আমি পৃথিবীর সব জায়গায় প্রদর্শনী করি – অনেক মানুষ দেখেন। তাতে আমি হয়তো অর্থকরী দিক থেকে সমৃদ্ধ হই, কিন্তু আমার শহরের মানুষ তো আর আমার শিল্পকর্ম দেখতে পারেন না। কিন্তু শারদোৎসবে নিজের কাজ কলকাতার সাধারণ মানুষকে দেখানো একটা ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে।
আরেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ভবতোষ সুতার বেশ কয়েকবছর ধরে পুজোর পরিকল্পনা করেছেন, যেগুলো যথেষ্ট জনপ্রিয়।
উত্তর কলকাতায় তাঁর করা একটি পুজো প্যান্ডেলে দাঁড়িয়ে সরকারী আর্ট কলেজের কৃতি ছাত্র মি. সুতার বলছিলেন, “যখন প্রথম ঠাকুর গড়ার প্রস্তাব এসেছিল, তখন আমি বলেছিলাম আর্ট কলেজ থেকে পাশ করে, বিদেশী চিত্রশিল্পের ইতিহাস পড়েছি কি দূর্গাঠাকুর তৈরী করার জন্য? কিন্তু যখন কাজটা করলাম, আমার ভুল ভাঙলো। আমার মনে হয়েছিল এটা একটা নতুন প্ল্যাটফর্ম – সমসাময়িক শিল্প তুলে ধরার একটা নতুন ক্ষেত্র।
মি. সুতার বা মি. দিন্দার মতো বেশ কয়েকজন চিত্রকর, ভাস্করই সাম্প্রতিক কালে পুজোর পরিকল্পনা করতে শুরু করেছেন নিয়মিত। যদিও সত্তরের দশকে ভবানীপুর এলাকার একটি পুজোতে সেযুগের বিখ্যাত শিল্পীরা ঠাকুর গড়তেন – যারফলে ওই পুজোর নামই হয়ে গিয়েছিল আর্টের পুজো।
তারপরে আশির দশকেও কয়েকজন ভাস্কর প্রতিমা গড়তেন কিন্তু সম্প্রতি সেই সংখ্যাটা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। শুরু করেন। তবে সম্প্রতি অনেক শিল্পীই দুর্গাপুজোর কাজ করছেন।
একটি পুজোর উদ্যোক্তা ঋতুপর্ণা চ্যাটার্জী বলছিলেন এখন পুজোগুলোর মধ্যে এতটাই প্রতিযোগিতা – সকলেই নতুন কিছু করতে চান। সেই জন্যই সাবেকি কুমোরদের বদলে অনেক পুজোই শিল্পীদের দিয়ে ঠাকুর গড়াচ্ছেন।
আরেকটি পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা শ্যামা ভট্টাচার্য বলছিলেন কুমোরটুলিতে যাঁরা প্রতিমা গড়েন, তাঁরাও খুবই ভাল শিল্পী, কিন্তু তাঁদের প্রতিমায় বিষয়বৈচিত্র থাকে না।
কুমোরটুলিতে বংশপরম্পরায় যাঁরা প্রতিমা গড়েন – তাঁরা শিল্পী বা ভাস্করদের ঠাকুর গড়ায় এগিয়ে আসাকে কী চোখে দেখছেন?
প্রতিমা তৈরী করেই অনেক পুরস্কার পাওয়া শিল্পী অমিত পালের কথায়, “আর্ট কলেজের শিল্পীরা তো হাতে কলমে কিছু করেন না। সেই কাজটা আমাদেরই করতে হয়। ওঁরা শুধু ডিজাইনটা করেন হয়তো। আর ওঁরা যে প্রতিমা বানান, সেটা দেখে তো বোঝার উপায় থাকে না এটা দূর্গা। বলে দিতে হয়। ওঁদেরগুলো তো কার্টুন মনে হয়।“
অনেক নামকরা শিল্পী পুজোর কাজে এলেও এখনও সিংহভাগ প্রতিমা পাল পদবীধারী কুমোররাই তৈরী করে থাকেন। আর প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের কাজেও অনেক কুমোরই সাহায্য করে থাকেন। তাই চিত্রকর বা ভাস্করদের তৈরী ঠাকুর অনেক বেশী প্রচার পেলেও কুমোরদের অনেকেই মনে করেন তাঁদের পেটে টান পড়ার আশঙ্কা কম। লেখা/ছবি সূত্র : বিবিসি
উত্তর কলকাতায় পুজো মন্ডপ। ফটো-দেবাশীষ ভাদুরী |
অমিতাভ ভট্টশালী, কলকাতা : বহু যুগ ধরে হিন্দুদের পুজোর মূর্তি গড়ে এসেছেন কুমোররা – বংশ পরম্পরায় সেটাই তাঁদের পেশা। কিন্তু সম্প্রতি কলকাতার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পী বা ভাস্করাও দূর্গা প্রতিমা তৈরী করছেন।
শুধু প্রতিমা নয়, একটা বিষয় বা থীমের ওপর ভিত্তি করে মূর্তি, মন্ডপ, আলো বা আবহসঙ্গীত – গোটাটাই পরিকল্পনা করছেন ওই প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা।
পুজোর উদ্যোক্তারা যদিও বলছেন শিল্পীরা যেভাবে নতুন বিষয়ভাবনা নিয়ে আসতে পারেন, সাবেকি কুমোরদের পক্ষে সেটা সম্ভব না।
আবার বংশ পরম্পরায় মূর্তি তৈরী-ই যাঁদের কাজ, সেই কুমোরদের কথায়, আর্ট কলেজ থেকে পাশ করা শিল্পীরা যেসব মূর্তি গড়েন, সেগুলো দূর্গা প্রতিমা না – কার্টুন।
কোনও কোনও পুজো প্যান্ডেলে সন্ধে বেলায় ঢুকলেই আলো প্রক্ষেপন আর আবহ সঙ্গীত-ই বলে দেবে যে এটা একটা থীম পুজো – অর্থাৎ কোনও একটা বিষয়ভাবনাকে কেন্দ্র করে পুজোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্যান্ডেলেও সেই সাবেকি ধরণে কাপড়ের তৈরী নয়। অনেক সময়েই দূর্গাপ্রতিমার সঙ্গে চিরপরিচিত মহিষাসুরমর্দিনীরও মিল খুঁজে পাওয়া যাবে ন।
এরকমই একটা থীম-পুজোর পরিকল্পনা করেছেন নামজাদা চিত্রকর সনাতন দিন্দা। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম এতবড় একজন শিল্পী হয়ে তিনি পুজোর পরিকল্পনা করতে কেন শুরু করলেন।
তাঁর কথায়, “আমি পৃথিবীর সব জায়গায় প্রদর্শনী করি – অনেক মানুষ দেখেন। তাতে আমি হয়তো অর্থকরী দিক থেকে সমৃদ্ধ হই, কিন্তু আমার শহরের মানুষ তো আর আমার শিল্পকর্ম দেখতে পারেন না। কিন্তু শারদোৎসবে নিজের কাজ কলকাতার সাধারণ মানুষকে দেখানো একটা ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে।
আরেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ভবতোষ সুতার বেশ কয়েকবছর ধরে পুজোর পরিকল্পনা করেছেন, যেগুলো যথেষ্ট জনপ্রিয়।
উত্তর কলকাতায় তাঁর করা একটি পুজো প্যান্ডেলে দাঁড়িয়ে সরকারী আর্ট কলেজের কৃতি ছাত্র মি. সুতার বলছিলেন, “যখন প্রথম ঠাকুর গড়ার প্রস্তাব এসেছিল, তখন আমি বলেছিলাম আর্ট কলেজ থেকে পাশ করে, বিদেশী চিত্রশিল্পের ইতিহাস পড়েছি কি দূর্গাঠাকুর তৈরী করার জন্য? কিন্তু যখন কাজটা করলাম, আমার ভুল ভাঙলো। আমার মনে হয়েছিল এটা একটা নতুন প্ল্যাটফর্ম – সমসাময়িক শিল্প তুলে ধরার একটা নতুন ক্ষেত্র।
দক্ষিন কলকাতায় চিত্রশিল্পী সনাতন দিন্দার ডিজাইন করা পুজো মন্ডপ। ফটো-দেবাশীষ ভাদুরী |
মি. সুতার বা মি. দিন্দার মতো বেশ কয়েকজন চিত্রকর, ভাস্করই সাম্প্রতিক কালে পুজোর পরিকল্পনা করতে শুরু করেছেন নিয়মিত। যদিও সত্তরের দশকে ভবানীপুর এলাকার একটি পুজোতে সেযুগের বিখ্যাত শিল্পীরা ঠাকুর গড়তেন – যারফলে ওই পুজোর নামই হয়ে গিয়েছিল আর্টের পুজো।
তারপরে আশির দশকেও কয়েকজন ভাস্কর প্রতিমা গড়তেন কিন্তু সম্প্রতি সেই সংখ্যাটা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। শুরু করেন। তবে সম্প্রতি অনেক শিল্পীই দুর্গাপুজোর কাজ করছেন।
একটি পুজোর উদ্যোক্তা ঋতুপর্ণা চ্যাটার্জী বলছিলেন এখন পুজোগুলোর মধ্যে এতটাই প্রতিযোগিতা – সকলেই নতুন কিছু করতে চান। সেই জন্যই সাবেকি কুমোরদের বদলে অনেক পুজোই শিল্পীদের দিয়ে ঠাকুর গড়াচ্ছেন।
আরেকটি পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা শ্যামা ভট্টাচার্য বলছিলেন কুমোরটুলিতে যাঁরা প্রতিমা গড়েন, তাঁরাও খুবই ভাল শিল্পী, কিন্তু তাঁদের প্রতিমায় বিষয়বৈচিত্র থাকে না।
কুমোরটুলিতে বংশপরম্পরায় যাঁরা প্রতিমা গড়েন – তাঁরা শিল্পী বা ভাস্করদের ঠাকুর গড়ায় এগিয়ে আসাকে কী চোখে দেখছেন?
প্রতিমা তৈরী করেই অনেক পুরস্কার পাওয়া শিল্পী অমিত পালের কথায়, “আর্ট কলেজের শিল্পীরা তো হাতে কলমে কিছু করেন না। সেই কাজটা আমাদেরই করতে হয়। ওঁরা শুধু ডিজাইনটা করেন হয়তো। আর ওঁরা যে প্রতিমা বানান, সেটা দেখে তো বোঝার উপায় থাকে না এটা দূর্গা। বলে দিতে হয়। ওঁদেরগুলো তো কার্টুন মনে হয়।“
অনেক নামকরা শিল্পী পুজোর কাজে এলেও এখনও সিংহভাগ প্রতিমা পাল পদবীধারী কুমোররাই তৈরী করে থাকেন। আর প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের কাজেও অনেক কুমোরই সাহায্য করে থাকেন। তাই চিত্রকর বা ভাস্করদের তৈরী ঠাকুর অনেক বেশী প্রচার পেলেও কুমোরদের অনেকেই মনে করেন তাঁদের পেটে টান পড়ার আশঙ্কা কম। লেখা/ছবি সূত্র : বিবিসি