ঈদ বিড়ম্বনা

বিডি.টুনসম্যাগ.কম সমগ্র লিবিয়ায় তখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সিরতের পরিস্থিতি তো আরও ভয়ঙ্কর। একদিকে ন্যাটো যখন-তখন বোমা ফেলছে, আর...

বিডি.টুনসম্যাগ.কম

সমগ্র লিবিয়ায় তখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সিরতের পরিস্থিতি তো আরও ভয়ঙ্কর। একদিকে ন্যাটো যখন-তখন বোমা ফেলছে, আরেকদিকে বিদ্রোহী যোদ্ধারা সিরতের তিন দিক ঘেরাও করে ফেলেছে। যেকোন মুহূর্তে তারা সিরতে ঢুকে এক লঙ্কা-কান্ড বাধিয়ে দেবে এমন আশঙ্কায় সিরতবাসী আতঙ্কিত। এমন পরিস্থিতিতে ঈদ উদযাপন যেন এক অকল্পনীয় ব্যাপার!

কিন্তু যে ঈদ বছরে মাত্র একবার আসে, সে ঈদ উদযাপন না করে ছাড়তে নারাজ কিছু লিবিয়া-প্রবাসী বাংলাদেশী দুরন্ত কিশোর। তালহা, সবুজ, শাহনেওয়াজ এবং শামীম। চার বন্ধু তারা। সমবয়েসী না হলেও কাছাকাছি। সিরত বাংলাদেশী স্কুলের ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। এমন কোন ঘটনা নেই – যেটাতে বাধা কিংবা নিষেধ আছে, কিন্তু এরা অংশগ্রহণ করেনি।

তাই পরিস্থিতি খারাপ বলে ঈদের দিন ঘরে বসে থাকবে, এটা এক অসম্ভব ব্যাপার। ঈদের নামায শেষ করেই শামীম বলল – ‘জানিস, আমার আম্মা বলে দিয়েছে নামায শেষে যেন সোজা বাসায় চলে যাই’। একথা শুনে ক্ষেকিয়ে উঠল শাহনেওয়াজ – ‘ইশ, বললেই হল! আজকে কোন বাসায় যাওয়া-টাওয়া নাই। আজ সারাদিন বাইরে থাকব। গত ছয়মাস ধরে ঘরে বন্দী হয়ে আছি। আজকের দিনটায় অন্তত তোরা কেউ কোনো অজুহাত দিস না!’ তাকে সমর্থন জানিয়েই তালহা বলল – ‘অজুহাত! নো ওয়ে। চল, এবারের ঈদটা আমরা এমনভাবে উদযাপন করি যেন সারা জীবন মনে থাকে’। উদ্বিগ্ন মাখা কন্ঠে শামীম জানতে চাইল – ‘এমন ভাবে বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছিস তুই? কেমন ভাবে উদযাপন করবি’? উদাস স্বরে তালহা বলল – ‘আজ আমরা কোন বাধা, নিষেধ কিংবা নিয়ম-কানুন মানব না। যেখানে মন চায় সেখানে যাব, যা মনে চায় তাই করব’। সবুজ এতোক্ষণ চুপচাপ শুনছিল। এবারে হাতে কিল দিয়ে বলল – ‘ঝাক্কাস আইডিয়া! চল তা-ই হবে’।

অগত্যা শামীমের অনিচ্ছা সত্বেও তারা বের হল তাদের সেই ‘বিশেষ ঈদ-উদযাপন অভিযানে’। হাটতে হাটতে একটু সামনে গিয়ে তারা দেখতে পেল ঈদগাহের এক পাশে রাহাত আর আমির হামযা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। তাদের হাতে খাত্তা-লোওয়া(আতশবাজি), আর চোখে-মুখে ধূর্ত হাসির আভা। তালহা বলল – ‘দ্যাখ দ্যাখ, বদমাইশ দুইটা বোধহয় কারো গায়ে খাত্তা-লোওয়া ফোটানোর পায়তারা করছে। চল গিয়ে দুইটাকে দুই চড় মেরে খাত্তা-লোওয়া গুলো নিয়ে আসি’। শাহনেওয়াজ আরো দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বলল – ‘শিগগির চল। তাহলে আর আমাদের খাত্তা-লোওয়া কিনতে হবে না’। কথা শেষ না করেই শাহনেওয়াজ লম্বা লম্বা পা ফেলে রওয়ানা হয়ে গেল। রাহাতের হাত থেকে ছোঁ মেরে কেড়ে নিল একটি খাত্তা-লোওয়া। আর সাথে সাথেই টের পেল খাত্তা-লোওয়াটিতে আগুন ধরানো হয়ে গেছে। চিৎকার দিয়ে হাত থেকে ছেড়ে দিতে চাইল খাত্তা-লোওয়াটি, কিন্তু ততক্ষণে সেটি এক ভয়াবহ শব্দ করে হাতের মুঠোর মধ্যেই ফুটে গেছে। চোখে-মুখে যেন সর্ষেফুল দেখতে লাগলো শাহনেওয়াজ। হাতটা যেন তার একেবারেই ঝলসে গেছে। এমন মারাত্মক একটা মুহূর্তে শামীম চোখে টিপ দিয়ে বলল – ‘সারা জীবন মনে থাকবে’।

শামীমটা বরাবরই এরকম। তাই তার কথা কেউ তেমন একটা গ্রাহ্য করল না। একবার শুধু একটু খটমটিয়ে তাকিয়ে সামনের দিকে হাটতে শুরু করল তারা। হাটতে হাটতে তারা সুগুল-ক্ষুদ্রায়(সবজি বাজার) চলে এল। এখানে আসার উদ্দেশ্য হল – একটা ডিম নিয়ে ভেঙ্গে শাহনেওয়াজের হাতে লাগালে যন্ত্রণা কমার খানিকটা সম্ভাবনা রয়েছে। এ নিয়ে দোকানদারের সাথে আরেক প্রস্থ হয়ে গেল। দোকানদারও জন্মের ত্যাড়া। সে একটা ডিম তো দূরের কথা, হালি হিসেবে বেঁচতেও নারাজ। বেঁচলে পুরো ত্রিশটা, নইলে একটাও না। দোকানদারকে বিশ্রী ভাষায় গালি-গালাজ করে তারা পাশের দোকানে গেল। এই দোকানে একটা ডিম বিনামূল্যেই দিতে চাইল। কিন্তু তালহার এক কথা, সে ত্রিশটাই কিনবে। একটা শাহনেওয়াজের জন্যে, আর বাকি ঊনত্রিশটা ঐ ত্যাড়া দোকানদারের মাথায় মারার জন্য। ব্যাটার একটা শিক্ষা হওয়া দরকার। একথা শুনে তো শামীমের ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। অনেক কষ্টে বলল – ‘থাক না, ঈদের দিনে কী দরকার এসব ঝামেলা করার’! বিরক্ত হয়ে তালহা বলল – ‘চুপ! একদম চুপ! যা বলছি তাই করবি। প্রত্যেকে এখান থেকে ডিম নিয়ে গিয়ে দোকানদারের চারপাশে পাঁচ-ছয় হাত দূরত্ব রেখে দাঁড়াবি। তারপর সমানে ব্যাটার মাথায় ডিম ছুড়তে থাকবি। খুব দ্রুত। পুরো কাজটা দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে সেরে দৌড়ে এখান থেকে পালাবি। তারপর মেইন রোডে গিয়ে সবাই একত্রিত হব’।

নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তাদের কাজ শেষ হয়ে গেল। তবে মেইনরোডে গিয়ে একত্রিত হয়ে দেখা গেল একেকজন যেন ডিম দিয়ে গোসল করে এসেছে। ধরা গলায় শাহনেওয়াজ বলল – ‘আসলে হয়েছে কি, আমরা যখন ডিম মারছিলাম তখন ঐ হারামীর বাচ্চা দোকানদার মাথা নিচু করে ফেলেছিল, আর সব ডিম আড়াআড়ি ভাবে গিয়ে আমাদের গায়েই লেগেছে। তখন কিছুই বুঝতে পারিনি, এখন পারছি’। সবুজ তালহার দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল – ‘সব কিছু তোর কারণে; শুধু তোর কারণেই’। শামীম আবারও সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ছাড়ল না। চোখ ছোট ছোট করে বলল – ‘মনে না রেখে যাবে কোথায়! সারা জীবন মনে থাকবে’। এবারে তালহা কোমল স্বরে বলল – ‘আজকের দিনটা একটা কুফা। আসলে ভুলটা আমাদেরই। সারা জীবন মনে রাখার মতো ঈদ উদযাপন করার চেষ্টা না করে আমাদের উচিৎ ছিল সাধারণভাবে আনন্দ-উল্লাস করে উদযাপন করা। তোরা আমার উপর রাগ করিস না। আর আজকের এ ঘটনাগুলো মনে রাখিস না’। শামীম মিটমিট হেসে জিজ্ঞেস করল – ‘তাই’?!!

এই বিভাগে আরো আছে

গল্প 7799801911051491804

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সঙ্গে থাকুন

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক

বৈশিষ্ট্যযুক্ত

বিশ্বসেরা ১০ কার্টুনিস্ট

শিল্পী রফিকুননবী সাধারণ মানুষের কাছে যতটা না তার ফাইন আর্টসের জন্য পরিচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় তার ‘টোকাই’ কার্টুন চরিত্রের জন্য। এ ...

-

  • ফেসবুকে অনুসরণ করুন

    আঁকা-আঁকি আহ্ববান

    আপনার আঁকা, মজার মজার লেখা, ছবি আঁকার কলা-কৌশল, শিল্পীর জীবনী, প্রবন্ধ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অথবা প্রদর্শনীর সংবাদ টুনস ম্যাগে ছাপাতে চাইলে পাঠিয়ে দিন। আমাদের ইমেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়।

    সহায়তা করুন

    item