লস প্রজেক্ট

বিডি.টুনসম্যাগ.কম ছাদে উঠতেই দেখি বন্ধু কাউছার মেয়েদের মতো হাউমাউ করে কাঁদছে। কাউছার আমার মেস ফ্রেন্ড, মাথায় গোলমাল আছে কি না বেমালুম।...

বিডি.টুনসম্যাগ.কম

ছাদে উঠতেই দেখি বন্ধু কাউছার মেয়েদের মতো হাউমাউ করে কাঁদছে। কাউছার আমার মেস ফ্রেন্ড, মাথায় গোলমাল আছে কি না বেমালুম। তবে দশটা কথা বললে তার মধ্যে পাঁচটাই আন্দাগুন্দি বলে। নিজেকে সেইন্টারন্যাশনাল কবি বলে দাবী করেন। যদিও তার কবিতা মেক্সিমামই অন্যের কবিতা থেকে নকল। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, আরে কবি বন্ধু তুমি এমন মাইয়া মানুষের মতো কানতাছো কেন? 
কাউছাড় বলল, বনধুকি চাইলুম আর কি পেলুম, সাদিয়া আমার প্রেমে সাড়া দিতেই চাইছে না। কতো কবিতা লিখে ওকে শোনাতে চাই ও তাও শুনতে চায় না। আরে মামা এটা কোন সমস্যা হলো, এইটা তো আমার কাছে হাতের ময়লা। সাদিয়াকে তোমার প্রেমে আমি পরামু। তোমার কবিতা ও দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা শুনবো। তুমি মিয়া ইন্টারন্যাশনাল কবি তোমার আবার কিসের চিন্তা। তুমি মামা অহন হাজার তিনেক টাকা দাও একটু মাকের্টের দিকে যামু। বোঝই তোসামনে আসন্ন ঈদ। সত্যি বলছিস তুই, সাদিয়াকে পটাতে পারবি? মামু তুমি আমারে চিনো না, আমরা সিলেটি লোক মানে বৃটিশ কান্ট্রির লোক, আমরা পারিনি এমন কোন কাজ আছে। ঠিক আছে এই নে তোকে বিশ্বার করে দিলুম, যদি না পারিস তবে ডাবল দিবি। আরে মামু এইটা নিয়ে তোমার ভাবতে হইবো না, দেখবা সাদিয়া তোমার পেছনে ঘুর ঘুর করতাছে। ঠিক আছে চল্লুম। কাউছাড়া চলে গেলো, সকাল সকাল ভালই ধান্দা হলো।

মিতু স্টোরের সামনে সাদিয়ার সাথে দেখা। আরে সাদিয়া না, কেমন আছো সাদিয়া পাখি। সাদিয়া মাথা ঝাকিয়ে উত্তর দিলো, হু ভালো আপনি কেমন? আরে আমি তো অল টাইম ভাল থাকি, তোমার কথা ভাবি তো তাইভল থাকতে হয়। আপনার আবার আমার কথা ভাবার সময় আছে, আপনি তো মুন্নি, মুক্তা এদের নিয়েই বিজি। আরে কি যে বলো না ওরা তো বাচ্চা মাইয়া তোমার সাথে ওদের তুলনা করে লাভ আছে। তুমি তো পরি, পাখি। আপনি আমাকে পাখি বলেন কেন? আরে ঐ যে একটা গান আছে কাকের বাসের মতো দুটি চোখ তোমার। তোমার চোখ দুটি তো কাউয়ার বাসার মতো। আপনার ঐ পাগলা নকলবাজ বন্ধুটির খবর কি? কে কাউছার? হু। আরে দূর ওটা একটা ফালতু, বলে তুমি নাকি ওর পেছনে প্রেম করার জন্য ঘুরো। শুনে তো আমার জ্ঞান হারানোর অবস্থা বুঝলা। তুমি কি আর ও কি। বলেন কি ঐ পাগলারে পাইলে ঘুষি মেরে দাত ফেলে দেবো।সারাক্ষন আমার পেছণে ঘুর ঘুর করে আর আপনার কাছে বলে কি না আমি ওর পেছনে ঘুরি। দেখলেন তো আমার পুরো ইমেজটাই নষ্ট করে দিচ্ছে। ওর দাঁত আমি ভাঙ্গুম-ই। আরে কি বলো সাদিয়া পাখি, আমি থাকতে তুমি কষ্ট করবে কেন! ওরে আমি এমন মাইর দিমু যে তোমারে দেখলে কাল থেকে খালাম্মা কইবো। আফটার অল তোমার প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে না। সত্যি। হু। ওহ নো আপনি কত ভালো। তাই! আচ্ছা একটা কাজকরুন। তোমার জন্য আমি সব করতে প্রস্তুত। আসলে ভাইয়া আমি একটু মাকের্টে যাবো আমি চাচ্ছিলাম আপনি আমার সাথে একটু যান। মনে মনে বললাম সারছে কোন বিপদে যানি পড়ি। আরে এইটা কোন কথা হলো জানটুস তুমি মাকের্টে যাইবা আর আমি নিয়া যামু না এটা কিছু হইলো। চলো চলো বড় একটি শপিং-এ ঢুকে মাকের্টের পর্বটা শেষ করলো, ওর শপিং ব্যাগ টানতে টানতে আমার অবস্থ্যা কাহিল। অবশেষে এলো কসমিটিকের দোকানে। সেখানেই এসে বলল, ইয়ে ভাইয়া আপনার কাছে হাজার পাচেক টাকা হবে? আমি বাসায় গিয়ে দিয়ে দেবো। আরে বলো কি হবে তো আবার ফেরৎ দেওয়ার কথা বলো কেন আমি তো পর কেউ না। আমার টাকা তো তোমার টাকাই। কাউছার টাকা আর আমার কাছে কিছু টাকা দিয়ে সাদিয়ার হাতে তুলে দিলাম। হায়রে মেয়ে মানুষ কত ঘষা মাজা, ঢালাই করার জিনিস যে লাগে।

মনু মামার চায়ের দোকানে এসে বসলাম দূর টাকা গুলোনা দিলেই বোধহয় ভাল হতো। এমন সময় কাউছারের আগমন। আমার কামটা কতটুকু? আরে মামু, না বস চা খাও এই মামুরে চিনি ছাড়া দুধ ছাড়া লিগার ছাড়া একটা চা বানাইয়া দে। কাজের কথা বল। আসলে মামু বোঝই তো মেয়ে মানুষ, মাথায় প্রসেসিং একটু লুস তবে ব্যাপার না তোমার ব্যপারে আমি সব বুঝিয়ে বলছি, সব শুনার পর ওর ভাব দেখে মনে হলো বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো যে কোন মুহুর্তে তোমার গলার মধ্যে লাফ দিয়ে পরতে পারে। সত্যি! আরে বেটা আমি বৃটিশ কান্টির লোক মাই ফাদার ইজ ওটাকে কি বলে দূর ভুলেও তো গিয়েছি ও ফারমার। আমরা কি যেনো তেনো লোক নাকি? কাউছার খুশিতে টগবগ। বন্ধু শ পাচেক টাকা তো ছাড়তে হবে। কেন সকালে না টাকা নিলি? খেইপো না বনধু তোমার বাপের বাপ মানে দাদার কাজটা কিন্তু আমি কইরা দিছি। টাকা দাও মোবাইলে ভরমু বোঝনা এটার আপডেট জানতে হবে না ফোন করে। এইনে পাঁচশো আমি গেলুম। আরে বন্ধু কই যাও চায়ের বিলটা তো দাও আমার কাছে আবার ভাংতি নাই।

রাতে ফোন করতেই সাদিয়ার সাথে কথা জমিয়ে ফেললাম, কাউছারের প্রসঙ্গ উঠতেই বললাম ও তো একটা হাফ স্যাম্পল, ফালতু সারাক্ষনই তোমার নামে বদনাম বলে অন্যের কবিতা নকল করে ওর নামে চালায়া দেয়। সাদিয়া তো এই সব শুনে কাউছারের উপর চরম ক্ষেপেছে। মনে হচ্ছিলো হাতের কাছে কাউছারকে পেলে কাচাই খেয়ে ফেলবে। ভাইয়া একটা কথা বলি। কি? আমার মোবাইলে না পাচশো টাকা রিচার্জ করতে হবে, আমি যে দোকানটা থেকে রিচার্জ করতাম ওটা বন্ধ যদি আপনি একটু করে দিতেন। ব্যাপার না আমি থাকতে তোমার দোকান লাগবো কেন আমি নিজেই তো তোমার জন্য বড় একটা দোকান। কাউছারের পাঁচশো দিয়ে আপাতত প্রজেক্টটাকে সচল রাখলাম। কবিরের টেবিলের উপর একটা বেগ পড়ে থাকতে দেখলাম। কবির গেছে টয়লেটে, এই সুযোগে খুলে দেখলাম। ওহ কি সন্দুর থ্রি পিছ, নাম তো সানি লিওন লেখা। মে বি ওর প্রেমিকার জন্য কিনেছে। আমিও ভাবছি সাদিয়াকে কিছু একটা দেব, ওর এটাই মেরে দেই। এক জনের প্রেমিকার কাছে গেলেই হলো। চামে মেরে দিলাম। তারপর পাইপ বেয়ে সাদিয়ার জানালা দিয়ে সেটা দিয়ে আসলাম। বাসায় এসে শুনি ঘরে চোর পড়েছে। কবির কাদতে কাদতে বলছে প্রেমিকার জন্য কিনেছিলাম কিন্তু রিজেক্ট পড়ায় সেটা ফেরৎ দেওয়ার জন্য টেবিলের উপর রেখে আমি টয়লেটে যাই এসে দেখি নেই। খাইছে শেষ পর্যন্ত রিজেক্ট মাল চুরি করলাম। ঈদের দিন বিকেলে সাদিয়াকে নিয়ে ঘুরতে বেরুলাম। চাইনিজি গিয়ে জম্মেশ ভাবে খেলাম দু’জন। কাউছারের থেকে ঈদের আগের দিনই কয়েক হাজার টাকা নিয়েছিলাম সাদিয়ার কথা বলে সেটার সাথে নিজের কিছু মিক্স করতে হলো। প্রজেক্টের উপর ইনভেস্ট ভালই খাটাচ্ছি এখন বাগে আন্ত পারলেই হলো। দুই দিকে দুজন কে ম্যানেজ করতে হয় এদিকে সাদিয়াকে দিতে হয় এক বয়ান ওদিকে কাউছার কে দিতে হয় আরেক বয়ান এই হলো আপাতত অবস্থ্যা। ঘুম ভাঙতেই দেখি কাউছার ফ্যানের সাথে দড়ি লাগাচ্ছে। কিরে কবি সকাল সকাল কি জ্বেনে ধরলে নাকি? তুই শুনিস নি সাদিয়ার কথা। কি হয়েছে? সাদিয়া আজ সকালে ঘর থেকে পালিয়েছে। শুনে ধরাক করে লাফ দিয়ে উঠলাম। হালায় কি মাল টাল খাইছে নি, ঐ কবি মুখ সামলাইয়া কথা ক’। সত্যি। কই পালাইছে? অন্য একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। ও যে একটি ছেলেকে ভালবাসতো এটা তো ভাবতেই পারলুম না। কি কস মামু, চোখে তো সষ্যে ফুল দেখতাছি, আমার তো ইনভেস্ট-এর বারোটা বাজছে। হু এই কারণেই আমি সুইসাইড খাবো তুই একটা উপকার করবি। কি মামু? তোর ঘারের উপর আমায় তোল, গলায রশি লাগানোর সাথে সাথে তুই সড়ে যাবি আর আমি খাবো। বনধু মরার তো কথা আমার তুমি মরতাছো, যাক ব্যাপার না। বন্ধু একটা মাইয়া মানুষের জন্য তুমি মরবা, এটা কেমন হইলো। বেঁচে থেকে লাভ নেই তুই তাই কর। ওকে আমি কাউছারকে ঘাড়ে তুললাম। হালায় কি যে খায় কে যানে কাতলা মাছের মতো মোটা শরীলটা। কমপক্ষে ১০০ কেজি হইবো। কাউছার গলায় দড়ি লাগাতেই যেই না আমি সরতে যাবো অমনি কাউছাড় ফ্যান সহ ছিড়ে পড়লো আমার উপর। পরবি তো পর আমার ঘাড়ে। বাওরে আমি তো শেষ কাউছারের মতো একটা হাতি এসে আমার উপর পড়তেই মনে হলো আমি বোধ হয় সেখানেই শেষ। ঘাড়ের হাড্ডি বোধহয় সুইসাইড খাইছে। ধান্দাকরা শেষ, ধান্দা করে যে পাখির পেছনে এত প্রজেক্ট খাটালাম সে পাখি আরেক জনের সাথে উড়াল দিছে। ঈদে পুরাই লস প্রজেক্ট খাইলম আমি।

এই বিভাগে আরো আছে

গল্প 4595465127880080365

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সঙ্গে থাকুন

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক

বৈশিষ্ট্যযুক্ত

বিশ্বসেরা ১০ কার্টুনিস্ট

শিল্পী রফিকুননবী সাধারণ মানুষের কাছে যতটা না তার ফাইন আর্টসের জন্য পরিচিত, তার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় তার ‘টোকাই’ কার্টুন চরিত্রের জন্য। এ ...

-

  • ফেসবুকে অনুসরণ করুন

    আঁকা-আঁকি আহ্ববান

    আপনার আঁকা, মজার মজার লেখা, ছবি আঁকার কলা-কৌশল, শিল্পীর জীবনী, প্রবন্ধ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অথবা প্রদর্শনীর সংবাদ টুনস ম্যাগে ছাপাতে চাইলে পাঠিয়ে দিন। আমাদের ইমেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়।

    সহায়তা করুন

    item